শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে চুরি বেড়েছে

ইবি প্রতিনিধি
  ০২ মার্চ ২০২১, ১৮:০৫

একের পর এক চুরির ঘটনা ঘটছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) ক্যাম্পাসে। শেখ রাসেল হলের সাবমারসিবল পাম্প, জিয়া হলের চার কক্ষে চুরি, রবীন্দ্র-নজরুল কলা ভবনে দুই ভ্যান টাইলস্ চুরি, আট কার্টন ক্যাবল চুরিসহ সর্বশেষ সাদ্দাম হোসেন হলে একটি কক্ষের তাল ভেঙে জিনিসপত্র চুরি ও গোসলখানার শাওয়ারের রড চুরির ঘটনাসহ নির্মাণাধীন ভবনগুলোতে নিয়মিত চুরির ঘটনা ঘটেছে। ক্যাম্পাসে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্তাব্যক্তি ও কর্মকর্তাদের দায়িত্বে অবহেলায় এ ধরনের ঘটনা ঘটছে বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, সাদ্দাম হোসেন হলের ২১৭নং কক্ষে তালা ভেঙে চুরির ঘটনা ঘটেছে বলে জানায় আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের নাহিদ নুর নামের এক শিক্ষার্থী। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় হলে প্রবেশ করে তার কক্ষের তালা ভাঙা অবস্থায় দেখতে পায়। তার কক্ষ থেকে দুটি রাইস কুকার, কিছু বই ও জামাকাপড় চুরি হয়েছে বলে জানায় সে। এছাড়াও তার পাশের কক্ষে তালা ভাঙার চেষ্টা করা হয়েছে বলেও জানা যায়। এ বিষয়ে সাদ্দাম হল প্রভোস্ট, প্রক্টর, ছাত্র উপদেষ্টা ও বিভাগীয় সভাপতি বরাবর একটি লিখিত অভিযোগও দিয়েছে বলে জানিয়েছে সে। পরে হলে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উত্তর ব্লকের ২য়, ৩য় ও ৪র্থ তলার গোসলখানার শাওয়ারের রডসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও চুরি হয়েছে।

এর আগে গত ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে রবীন্দ্র-নজরুল কলা ভবনের নির্মাণ সামগ্রী চুরি করতে এসে হাতেনাতে ধরা পড়ে ১৫ বছর বয়সি কিশোর। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে সে তার গ্যাংদের তথ্য দেয়। এ সময় সে কাদের পরামর্শে এ চুরি করে এবং কীভাবে করে তার ভিডিও স্বীকারোক্তি দেয়। স্বীকারোক্তিতে সে শেখ রাসেল হলের দেড় লাখ টাকার সাবমরসিবল পাম্প চুরি, রবীন্দ্র-নজরুল একাডেমিক ভবন থেকে দুই ভ্যান টাইলস্ চুরি করে থানা গেট দিয়ে নেওয়া, আট কার্টন ক্যাবল চুরিসহ নির্মাণাধীন ভবনের ছোটখাটো লোহা ও অন্যান্য জিনিস চুরি করে বলে জানায়।

এ সময় সে তার সহযোগী গ্যাংদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের কর্মচারী তোজামের ভাগনে সাব্বির হোসেন, শৈলকুপার সাতগাছীর সাগর আলী, পদমদী গ্রামের জব্বার আলীর ছেলে তরিকুল এবং একই গ্রামের ক্যাম্পাসের ঝালমুড়ি বিক্রেতা জামালসহ রুঞ্জু মিয়া, আকাশ ও সুমনের নাম প্রকাশ করে। দিনের বেলায় ঘাস কাটা ও কাগজ কুড়ানোর নামে অনুসন্ধান করে রাতের বেলায় চুরির এ মালামাল বিশ^বিদ্যালয়ের থানা গেট, লালন শাহ ও বঙ্গবন্ধু হলের পকেট গেট দিয়ে বের করত বলে জানা যায়। কেননা বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের এই গুরুত্বপূর্ণ গেটগুলোতে কোনো নিরাপত্তা কর্মী নেই। শৈলকুপায় সাগরের ভাঙারির দোকানে এসব মালপত্র বিক্রি করে বলেও জানায় সে।

ওই কিশোরের ভিডিও স্বীকারোক্তির পরও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিয়েই ওই কিশোরকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এছাড়াও ওই গ্যাংদের কারও বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

শিক্ষার্থীদের দাবি প্রশাসনের অবহেলায় বিশ্ববিদ্যালয়ে একের পর এক চুরির ঘটনা ঘটছে। তারা আরও বলেন, আমরা ক্যাম্পাসে ও আবাসিক হলগুলোতে ঢুকতে স্টুডেন্ট আইডি কার্ডের ফটোকপি, মালামালের বিবরণের ফরম পূরণ করতে হয়। এছাড়াও সাদ্দাম হোসেন হলে ঢুকতে ভোটার আইডি কার্ডও দেখাতে হয়েছে বলে জানা গেছে।

শিক্ষার্থীদের দাবি আমরা হলে ঢুকতে হলে এতকিছু মেনটেন করতে হয় তাহলে চোর কীভাবে বারবার ক্যাম্পাসে চুরি করে। তাহলে ক্যাম্পাসে প্রক্টরিয়াল বডির লোকজন ও নিরাপত্তা কর্মীদের কাজ কি?

এ বিষয়ে সাদ্দাম হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. আতিকুর রহমান বলেন, ‘আমাকে বিষয়টা বেলা সাড়ে ১১টার সময় জানানো হয়েছে। নিরাপত্তার লোকজনের অবহেলা না কি অফিসের লোকজনের অবহেলা সেটা দেখব এবং হলের সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে বিষয়টি আরও ভালোভাবে খোঁজ নেব। এ বিষয়ে আমি প্রক্টরকে ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর ড. জাহাঙ্গির হোসেন বলেন, ‘সাদ্দাম হলের বিষয়ে আমার কাছে এখনো কেউ অভিযোগ করেনি। তবে আগের ঘটনাগুলোতে চোরেরা কেন ছাড় পেয়ে যাচ্ছে এবং কীভাবে তাদের ব্যবস্থা নেওয়া যায় সে বিষয়ে গতকালও আমি শৈলকুপা থানার ওসির সঙ্গে কথা বলেছি।’

বিষয়টি নিয়ে ভিসি প্রফেসর ড. শেখ আবদুস সালামকে কয়েকবার ফোন করা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে