​ সানজিদার স্বপ্নপূরণের সারথি মানবিক জেলা প্রশাসক অতুল সরকার

প্রকাশ | ০৯ মে ২০২১, ২১:২৮

ফরিদপুর প্রতিনিধি

সানজিদা আক্তার দিনা। ফরিদপুর শহরের ঝিলটুলীর এককোণে ক্ষুদ্র একখণ্ড পৈতৃক নিবাসে বসবাস। পরিবারে অসুস্থ মা আর বাবা রয়েতৃণ। দুই বোনের মধ্যে সে ছোট। বড় বোনের বিয়ে হয়েছে কয়েক বছর আগে। পিতা গিয়াসউদ্দিন কর্মহীন গত ৯ মাস। এছাড়া পিতার বয়সও হয়েছে।

 

কর্মহীন পিতার পরিবারে অন্য কোনো উপার্জনক্ষম ব্যক্তি না থাকায় আত্মীয়স্বজনের সহায়তা আর এরওর কাছ থেকে চেয়েচিন্তে কোনো রকমে সংসার চলছিল। এরই মাঝে বহুকষ্টে সানজিদা আক্তার তার পড়ালেখা টিকিয়ে রেখেছিল। অসুস্থ মায়ের সেবা করতে করতে তার মনে একসময় একটা স্বপ্ন জাগে বড় হয়ে ডাক্তার হবে। পরিবারের অর্থনৈতিক দুরবস্থার কথা চিন্তা করে, মনের ভেতরেই সে স্বপ্ন রেখে দেয় সানজিদা।

 

ছাত্রী হিসেবে সানজিদা আক্তার খুব মেধাবী। ফরিদপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৮ সালে এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এরপর ২০২০ সালে সরকারি সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। পাস করার পরেই পড়েন আরও বিড়ম্বনায়। সংসারই যেখানে চলছে না, সেখানে তার পড়ালেখা দুঃসাধ্য। এরই মাঝে আবার ভালো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে বা প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা চরম অসম্ভব কল্পনামাত্র।

 

তবুও থেমে থাকেননি সানজিদা। ভালো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার জন্য বাড়িতে বসেই প্রস্তুতি নিতে থাকেন। বহুকষ্টে কিছু অর্থ সংস্থান করে মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষা দেন। মনের সুপ্ত স্বপ্ন আর অর্থনৈতিক টানাপোড়েন, এরই মাঝে অসম্ভব সম্ভাবনার স্বপ্ন বাস্তব হিসেবে দেখা দেয় মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে। সানজিদা মেডিকেলে চান্স পান ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজে। কিন্তু বিধি বাম, ভর্তি এবং বইপুস্তক কেনার মতো টাকা তার পরিবারের দেওয়ার উপায় নাই।

 

কারো কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে ভর্তি হবেন, এটাও সম্ভব নয়, কেননা সাহায্যের জন্য একই ব্যক্তিদের কাছে কতবার যাওয়া যায়?

 

চরম দুশ্চিন্তায় সময় যাচ্ছিল সানজিদার পরিবারের। এরই মাঝে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করতে বলেন এক পরিচিত ব্যক্তি। তার কথামতো রোববার অসুস্থ বাবাকে নিয়ে জেলা প্রশাসকের বাংলোতে আসেন সানজিদা। ভর্তি ও বই কেনার জন্য আবেদন করেন।

 

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার তার কথা শুনে তাৎক্ষণিক ভর্তি, বই কেনা ও প্রাথমিক খরচের জন্য নগদ অর্থ সহায়তা করেন। একইসঙ্গে তার ভবিষ্যতে নিজ পায়ে দাঁড়াতে সর্বাত্মক সহায়তার আশ্বাস দেন।

 

জেলা প্রশাসকের তাৎক্ষণিক এই সেবায় আবেগাপ্লুত সানজিদার বাবা গিয়াসউদ্দিন বলেন, কোনো উপায় ছিল না। ভর্তির সময়ও খুব নেই। এই উপকার পেয়ে আমার মেয়ের জীবনটাই পাল্টে যাবে। ওর স্বপ্নপূরণে ডিসি স্যার অতুল সরকার যে সহযোগিতা করলেন, তার ঋণ কোনো দিন শোধ হওয়ার নয়। ভবিষ্যতে ডাক্তার হয়ে আমার মেয়েও প্রকৃত মেধাবীদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসবে বলে তিনি প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

 

সানজিদা বলেন, আমার স্বপ্নপূরণে সারথি হয়েছে ফরিদপুর জেলা প্রশাসন। অতুল স্যার (জেলা প্রশাসক) যেভাবে আমাকে দ্রুততার সঙ্গে  সহায়তা করলেন আমি কোনোদিন কল্পনাও করিনি কেউ এভাবে সাহায্য করবে।

 

তিনি আরও বলেন, আমি ভর্তি হওয়ার চিন্তায় দুদিন অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। আজ থেকে আমার চিন্তা দূর হলো। আমি চেষ্টা করব ডাক্তার হয়ে নিজেকে পরিপূর্ণভাবে মানুষের সেবায় নিয়োজিত করতে। আর আমার পথ প্রদর্শক হয়ে থাকবেন আজকের ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার স্যার।

 

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, অর্থের অভাবে একটি মেধাবী শিক্ষার্থীর পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যাবে এটা কখনো কাম্য নয়। সানজিদার ভর্তির জন্য আপাতত যে পরিমাণ অর্থের দরকার ছিল, তার বাবার হাতে তা তুলে দিয়েছি। প্রয়োজনে আরও সহায়তা দেওয়া হবে।

 

তিনি আরও বলেন, কোনো মেধাবী মুখ যেনও ঝরে পড়তে না পারে তার জন্য সব সময় প্রস্তুত রয়েছি। শিক্ষা প্রসারসহ যেকোনো মানবিক সহায়তা প্রদানে ফরিদপুর জেলা প্রশাসন প্রস্তুত আছে এবং আগামীতেও থাকবে।

 

জেলা প্রশাসক বলেন, ‘সুশাসনে গড়ি, সোনার বাংলা’ এই স্লোগান সামনে রেখেই আমরা কাজ করছি। চেষ্টা করছি অসহায় মানুষের কথা শুনে তাদের সেবা দিতে। এজন্য সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।

 

জানা যায়, ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক হিসেবে অতুল সরকার যোগদানের পর থেকেই সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতে নিয়েছেন নানা উদ্যোগ। এরই অংশ হিসেবে জেলা প্রশাসক শুরু করেছেন প্রকাশ্যে গণশুনানি। নিজের অফিস কক্ষের বাইরে খোলা জায়গায় গণশুনানিতে সাধারণ মানুষের সমস্যার কথা শুনে সমাধানের পথ বাতলে দিয়ে সাধারণ মানুষের আপনজনে পরিণত হয়েছেন তিনি। আর এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগে সমস্যার সমাধান মিলছে  জেলার হাজারো মানুষের।

 

এছাড়া তার অফিসে গ্রামের একজন সাধারণ কৃষক, একজন মুটে-মজুর গেলেও তার সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলে তিনি সর্বমহলে প্রশংসা কুড়িয়েছেন। ফরিদপুরে যোগদানের পর থেকে একের পর এক ব্যতিক্রমী চিন্তা চেতনায় আকৃষ্ট করে অকল্পনীয় ও অভাবনীয় নজির স্থাপন করেছেন এই জেলা প্রশাসক।

 

বর্তমানে পবিত্র রমজান মাস চলছে। পুরো রমজান মাসে দরিদ্র অসহায়দের কথা চিন্তা করে প্রতিদিনই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইফতার সামগ্রী বিতরণের আয়োজন করেছেন তিনি। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে প্রতিদিন বিকালে ইফতার সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। যা চলমান রয়েছে।

 

 

এভাবেই প্রতিনিয়ত জনসেবায় মগ্ন থেকে আস্থা ও ভরসার প্রতীক হয়ে উঠেছেন অতুল সরকার। ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা অর্জন করে জেলা প্রশাসক অতুল সরকার হয়ে উঠছেন মানবিক জেলা প্রশাসক। সততা ও নিষ্ঠাবান প্রশাসক হিসেবে মানুষের ভালোবাসার জায়গায় স্থান করে নিয়েছেন তিনি।

 

যাযাদি/এস