শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ে দোলাচলে সরকার

লাইজুল ইসলাম
  ১৯ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০
আপডেট  : ১৯ জানুয়ারি ২০২২, ০৯:০৯

লেখাপড়ার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় খোলা রাখতে চাইলেও শিক্ষার্থীরা করোনার ভয়াল থাবার মুখে পড়ুক তা চাইছে না সরকার। তাই করোনা সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ চরম দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে আরও এক সপ্তাহ করোনার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা অব্যাহত থাকলে চলতি সপ্তাহেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এর আগে কত সংখ্যক শিক্ষার্থী করোনার টিকা নিয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যদি বেশির ভাগ শিক্ষার্থী ভ্যাকসিন নিয়ে থাকে তবে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় খোলা রাখা হতে পারে। তবে সংক্রমণের গতিবিধিও এ সঙ্গে বিবেচনায় রাখা হবে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই সময় স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়ার। আর যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়েও করোনা ছড়িয়ে পড়েছে তাই হোস্টেলগুলো বন্ধ করা অত্যন্ত জরুরি। করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে প্রায় দেড় বছর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার পর ২০২১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর থেকে স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়া হয়। দেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, মাদ্রাসা, কারিগরিসহ সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই সেদিন থেকে ক্লাস শুরু করে। তবে শুরুতেই সব শিক্ষার্থী স্কুলে আসেনি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তর, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর ও মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর কবে কোন শ্রেণির শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসবে এ বিষয়ে একটি গাইডলাইন চূড়ান্ত করে তা প্রকাশ করে। এছাড়া সংক্ষিপ্ত পরিসরে নভেম্বরে মাধ্যমিক (এসএসসি) এবং ডিসেম্বরের এইচএসসি (উচ্চ মাধ্যমিক) পরীক্ষা সশরীরে অনুষ্ঠিত হয়। করোনা সংক্রমণ বেড়ে গেলেও আপাতত মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক এবং উচ্চ শিক্ষা স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধের চিন্তা না করে চালু রাখার কথা ভাবছে সরকার। এজন্য টিকা কার্যক্রমে জোর দেওয়া হচ্ছে। ১২ বছরের বেশি বয়সি শিক্ষার্থীদের টিকা দিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় পাঠদান সচল রাখার কথাও ভাবা হচ্ছে। আর উচ্চ শিক্ষা স্তরে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের টিকা কার্যক্রম অনেকটা এগিয়ে নেওয়ায় সেগুলো এখনই বন্ধের চিন্তায় রাখা হয়নি বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র নিশ্চিত করেছে। সূত্র আরও নিশ্চিত করেছে, ১২ বছরের নিচের শিক্ষার্থীদের টিকার আওতায় আনা হয়নি। তবে সেসব স্কুলের শিক্ষকদের টিকার আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। করোনা সংক্রমণ বেড়ে গেলে যারা টিকা নেওয়ার পর্যায়ে পড়ে না সেই ১২ বছর বয়সিদের নিচে অর্থাৎ প্রাথমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে হয়তো শুরুতে বন্ধ করা হবে। তাই প্রাথমিক পর্যায়ের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত হতে পারে কয়েকদিনের মধ্যে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, সরকার টিকার ওপরই জোর দিচ্ছে। ১২ বছরের ঊর্ধ্বে মাধ্যমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো চালু রাখার চিন্তা চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ করলে হয়তো সেশনজট বেড়ে যাওয়ার শঙ্কায় শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করতে পারে। তাদের টিকা কার্যক্রমও চলছে। অন্যদিকে, প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা টিকা উপযোগী না হওয়ায় তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধের সিদ্ধান্ত আসতে পারে। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় খোলা বা বন্ধ থাকার বিষয়ে জাতীয় কারিগরি কমিটির সদস্য অধ্যপক ডা. নজরুল ইসলাম যায়যায়দিনকে বলেন, 'স্কুল বন্ধ হবে নাকি খোলা থাকবে এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে আমাদের একটা বৈঠক আছে। সেই বৈঠক শেষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে তার আগে দেখতে হবে কত পরিমাণ বাচ্চাদের টিকার আওতায় আনা গেছে।' তিনি আরও বলেন, 'এখন পর্যন্ত সংক্রমণ কত, তাদের বয়স কত, মৃতু্য কত ও তাদের বয়স কত এগুলো পর্যবেক্ষণ করতে হবে। তারপর একটি সমন্বিত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তবে যদি সংক্রমণ বৃদ্ধি পায় তাহলে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়াই হবে ভালো সিদ্ধান্ত।' স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজি আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম যায়াযায়দিনকে বলেন, 'স্কুল বন্ধের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এই সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে আমাদের আরও একটি সপ্তাহ লাগবে। আমরা এই সপ্তাহে পর্যবেক্ষণ করব। তার পর সিদ্ধান্ত নিব। তবে এখন পর্যন্ত কোনো বাচ্চা স্কুলে গিয়ে করোনা আক্রান্ত হয়েছে তা আমরা পাইনি।' তিনি বলেন, 'আমরা বিভিন্নভাবে তথ্য-প্রমাণ একত্রিত করছি। যদি কোনো স্কুলে বাচ্চাদের আক্রান্তের খবর পাওয়া যায় তাহলে আমরা একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারব। তাই গণমাধ্যমেরও আমরা সহযোগিতা নিচ্ছি। যদি পাওয়া যায় আমাদের জানালে খুবই ভালো হয়।' জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, 'স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় এখনই বন্ধ করা দরকার। তাহলে আক্রান্ত কম হবে। আর বেশি দেরি করলে অবস্থা খারাপ হতে পারে। তাই সবাইকে একত্রে নিয়ে এই সিদ্ধান্তে আসতে হবে। বাচ্চাদের নিয়ে কোনো ধরনের অবহেলা করা যাবে না। সংক্রমণ আরও বাড়লে পরে বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া মানে সবাইকে সংক্রমিত করে বন্ধ করা। আর এখন বন্ধ করা মানে অঙ্কুরেই বন্ধ করা।' তিনি আরও বলেন, বর্তমানে যে পরিমাণ সংক্রণ তা খুবই ভয়ংকর। তার ওপর ঢাকায় আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি। তাই এখনই স্কুল বন্ধে সবার অংশগ্রহণ দরকার। বাবা-মায়ের পাশাপাশি স্কুল ম্যানেজমেন্টসহ সবাইকে একত্রে এই বিষয়টি মেনে নিতে হবে। সবাই মানলে পরেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা সম্ভব।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে