মন্ত্রণালয়ে বৈঠক আজ

এক দশকেও চূড়ান্ত হয়নি 'শিক্ষা আইন'

প্রকাশ | ২২ জুন ২০২২, ০০:০০ | আপডেট: ২২ জুন ২০২২, ১০:০১

আমানুর রহমান

'শিক্ষা আইন' চূড়ান্তকরণের লক্ষ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উচ্চ পর্যায়ের সভাটি একদিন এগিয়ে আজ বুধবার অনুষ্ঠিত হবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ নানা পর্যবেক্ষণ দিয়ে দফায় দফায় এ আইনটিকে ফেরত পাঠিয়েছে। সর্বশেষ দফায় আইনটির যেসব পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে আজ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠক ডাকা হয়েছে। বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব আবু বকর ছিদ্দীক সভাপতিত্ব করবেন। ২য় দফায় করোনাক্রান্ত শিক্ষা মন্ত্রী ডা. দীপু মনি এ সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হতেও পারেন বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। গত ১২ জুন শিক্ষামন্ত্রী এসএসসি পরীক্ষা সংক্রান্ত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, আইনটি নিয়ে আরেক দফা বৈঠক হবে। এ বৈঠকের পর ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে আইনটি মন্ত্রিপরিষদে পাঠানো হবে। বৈঠকে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান (রুটিন দায়িত্ব), বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এবং দুই মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন বলে সভার নোটিশে বলা হয়েছে। বেলা ১১টায় মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হবে। 'শিক্ষা আইন'-এ কি আছে : এদিকে, এক দশকের বেশি সময় ধরে শিক্ষা আইনের খসড়া নিয়ে কেবলই আলোচনা-পর্যালোচনা চলছে। এক দফায় চূড়ান্ত হলো তো আরেক দফায় মন্ত্রিপরিষদের পর্যবেক্ষণে আবার পিছিয়ে যায়। কোনো গুরুত্বপূর্ণ আইন প্রণয়নে এত দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হবার নজির খুব একটা নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। জানা গেছে, প্রায় ৫ দফায় শিক্ষা আইনটি ফেরত পাঠিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। মূলত প্রাথমিক ও বিশেষ করে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের নোট-গাইড বা \হসহায়ক বই এবং কোচিং বাণিজ্য এবং স্কুল শিক্ষকদের প্রাইভেট কোচিংয়ের মতো কিছু বিষয় থাকা না থাকা নিয়েই আইনের খসড়াটি ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এদিকে ওদিকে ঘুরপাক খাচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের (নিরীক্ষা ও আইন) কর্মকর্তারা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে সর্বশেষ পর্যবেক্ষণ সম্পর্কে মুখ খুলতে রাজি নন। মঙ্গলবার তারা যায়যায়দিনকে বলেন, আগামীকালের বৈঠকেই আইনটি চূড়ান্ত করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানোর উপযোগী করে মতামত দেওয়া হবে। স্বাধীন হবার ৫০ বছরেও দেশে একটি পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা আইন নেই। গত ৫০ বছরে দেশে শিক্ষা ব্যবস্থা পরিচালিত হচ্ছে, অনেকটাই জোড়াতালি আর বিক্ষিপ্তভাবে কিছু আইন বা প্রজ্ঞাপন দিয়ে অনেকটা অ্যাডহক ভিত্তিতে। তাই কোনোক্রমেই দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা দেশের শিক্ষা কার্যক্রমে ও ব্যবস্থাপনায় কোনো ধরনের শৃঙ্খলা ফেরানো যাচ্ছে না। গত ৫০ বছরে দেশ শাসন করা প্রতিটি সরকারের একটি করে শিক্ষানীতি প্রণীত হয়েছে। বর্তমান সরকারও ক্ষমতা আসার দু'বছরের মাথায় 'জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ নামে' একটি কমিটি করে দেয়। কমিটি যে শিক্ষানীতির সুপারিশ করেছিল, তা ২০১৮ সালের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা ছিল। টানা তিন মেয়াদে এ সরকার ক্ষমতায় থাকার পরও কিন্তু অতীতের মতোই শিক্ষানীতি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন এখনও হয়নি। শিক্ষানীতিতে সরকারকে একটি সমন্বিত শিক্ষা আইনের সুপারিশ করা হয়েছিল। শিক্ষানীতিতে বলা হয়েছিল, শিক্ষাসংক্রান্ত বিদ্যমান সব আইন, বিধিবিধান, আদেশগুলো একত্রিত করে শিক্ষানীতির আলোকে এবং এর যথাযথ বাস্তবায়নের জন্য 'সমন্বিত শিক্ষা আইন' প্রণয়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। জাতীয় শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০১১ সালে দুই ডজন উপ-কমিটি গঠন করেছিল। তার অন্যতম ছিল, শিক্ষা আইনের খসড়া প্রণয়নের জন্য একটি উপ-কমিটি। এ উপ-কমিটি একাধিক খসড়া করে মন্ত্রণালয়ে জমা দিলেও সমন্বিত সে আইনের খসড়া ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত চূড়ান্ত করতে পারেনি মন্ত্রণালয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় আইনের খসড়া ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে প্রথমবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠায়। কিন্তু তাতে 'ছায়া শিক্ষার' নামে কোচিং ও প্রাইভেট টিউশনের বৈধতা দেওয়ার কথা বলা ছিল। আইনে সহায়ক বা অনুশীলন বই প্রকাশেরও সুযোগ রাখা হয়েছিল। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে তখন খসড়াটি 'আরও পর্যালোচনার' কথা বলে ফেরত আনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর প্রায় এক বছর পর ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে খসড়াটি আবারও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠায়। এরই মধ্যে সরকারের বর্তমান মেয়াদও প্রায় সাড়ে তিন বছর অতিবাহিত হয়ে গেছে। আগামী দেড় বছরের মধ্যে নতুন নির্বাচন দিতে হবে। তাতে বর্তমান সরকার আরও এক মেয়াদের জন্য ক্ষমতা না পেলে, শিক্ষা আইন ও শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন হুমকির মুখে পড়বে। সর্বশেষ জানা গেছে, আগামী বছর থেকে নতুন কারিকুলাম চালু হলে নোট-গাইড, কোচিং এবং শিক্ষকদের টিউশন নিয়ে এখন পর্যন্ত ধোঁয়াশা বিরাজ করছে। বলা হচ্ছে, সব স্তরেই পরীক্ষার বোঝা কমবে। শ্রেণি মূল্যায়ন এবং হাতে-কলমে শিক্ষাই প্রাধান্য পাবে। তাতে কি দাঁড়ায় এখন পর্যন্ত অনেকটাই অন্ধকারে কোচিংবাজ শিক্ষকরা এবং কোচিং বাণিজ্যের সাথে যুক্ত কোচিং সেন্টারগুলো। ফলে আইনে কি থাকল বা থাকল না তা নিয়ে পুরোটাই অন্ধকারে শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা।