জাবিতে মুক্তিযোদ্ধা শিক্ষকের সুবিধা বাতিলের সিনেট কাল

প্রকাশ | ২৩ জুন ২০২২, ১৯:৪৭

জাবি প্রতিনিধি

 

 

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) মুক্তিযোদ্ধা এক শিক্ষকের চাকরির অবসরের বয়সসীমা এক বছর বৃদ্ধির সুবিধা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গত ১২ জুন অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গৃহীত সিদ্ধান্ত চূড়ান্তভাবে অনুমোদনের জন্য আগামীকাল শুক্রবার (২৪ জুন) বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের ৩৯ তম বার্ষিক সভায় প্রস্তাবটি উত্থাপিত হবে।

 

উত্থাপিত প্রস্তাব সিনেটে পাশ হলেই মুক্তিযোদ্ধা শিক্ষকদের বিশেষ সুবিধা বাতিল হবে। তবে উপাচার্য পদের সমীকরণ মেলাতেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিশেষ এই সুবিধা বাতিলের পায়তারা করছে বলে অভিযোগ করেছেন জাবির একমাত্র মুক্তিযোদ্ধা শিক্ষক অধ্যাপক . আমির হোসেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক।

 

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধারা এক বছর বেশি চাকরির সুবিধা পান। ঢাবি, জাবি, রাবি চবিতেও এই নিয়ম বলবৎ রয়েছে। সূত্র মতে, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় আইনে একজন অধ্যাপকের অবসরগ্রহণের বয়সসীমা ৬৫ বছর। তবে মুক্তিযোদ্ধার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত এক বছর তথা৬৬ বছর পর্যন্ত চাকরির সুযোগ রয়েছে। কিন্তু গত ১২ জুন অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায়সেশন বেনিফিটবাতিলের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের বিশেষ সুবিধার আইনটি বাতিল করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় জাবি প্রশাসন।

 

বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র বলছে, বর্তমান উপ-উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলম সাময়িকভাবে উপাচার্যের দায়িত্বে আছেন। আগামী ৩০ জুন তার পদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এর আগেই নতুন উপাচার্যের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।

 

তবে তিনি তার মেয়াদ বৃদ্ধির ব্যাপারে তৎপর। কিন্তু ক্ষেত্রে প্রধান বাঁধা অধ্যাপক আমির হোসেন। উপাচার্যের দৌড়ে এগিয়ে থাকা আমির হোসেন কোনভাবেই যেন উপাচার্য হতে না পারেন সেজন্যই ধরনের আয়োজন করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

 

এর আগে চলতি বছরের ২৮ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অধ্যাপক আমির হোসেনের চাকরির মেয়াদ এক বছর বর্ধিত করার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে তাকে অভিনন্দন জানানো হয়। কিন্তু মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের বিষয়কেশিক্ষক রাজনীতির মারপ্যাচবলে উল্লেখ করেন অধ্যাপক আমির হোসেন।

 

অধ্যাপক আমির হোসেন বলেন, সিন্ডিকেট সদস্যগণ কেন রাষ্ট্রীয় নীতি আইনকে অবজ্ঞা করে এমন হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা সকলের কাছেই স্পষ্ট। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এটি আমার জন্য বেদনাদায়ক অসম্মানজনক। এটি স্পষ্টভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধী।

 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সংস্থাপন মন্ত্রণালয়েরপাবলিক সার্ভিস রিটায়ারমেন্ট অ্যাক্ট-২০১০ মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তাদের অবসরের বয়সসীমা ৫৯ বছর থেকে এক বছর বৃদ্ধি করে ৬০ বছর করার কথা বলা হয়েছে। পরবর্তীতে ২০১২ সালেপাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক (অবসর)-২০১২নীতিমালায়সসেশন বেনিফিটবাতিলপূর্বক সকল অধ্যাপকের বয়স ৬৫ হলে অবসরে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে এতে মুক্তিযোদ্ধাদের বিশেষ সুবিধা বাতিলের বিষয়ে কোন উল্লেখ নেই। ফলে ঢাবি, জাবি চবি মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য এক বছর বাড়িয়ে ৬৬ বছর এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় দুই বছর বাড়িয়ে ৬৭ বছরে অবসর দেয়।

 

বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক . দিল আফরোজা বেগম বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে শুনেছি। এরকম

একটি জটিলতা জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেও হয়েছিল যা এখনও চলমান। সম্পর্কিত একটি চিঠি আমাদের দপ্তরে এসেছে, কিন্তু আমি এখনও দেখিনি। সেজন্য সুস্পষ্টভাবে কোন মন্তব্য করতে পারছি না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক রাশেদা আখতার বলেন, ‘দুই মাস আগে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল তাতে কিছুটা ভুল ছিল। তখন অনলাইনে মিটিং হওয়ায় আমরা অনেক বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে অবগত ছিলাম না। তবে সরকারিভাবে যেহেতু এই বিশেষ সুবিধার ব্যাপারে কিছু বলা নেই। তাই এটি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আর কোন বিশ^বিদ্যালয় কি করছে তা আমাদের দেখার বিষয় নয়।

 

বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলমকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি। এমনকি উপাচার্যের কার্যালয়ে দেখা করতে গেলে উপাচার্য মিটিংয়ে আছেন, এখন কোনভাবেই দেখা করা সম্ভব নয় বলে জানান উপাচার্যের সচিব মো. ছানোয়ার হোসেন।

 

 

 

যাযাদি/এসএস