শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

করোনার পর শিক্ষায় বন্যার থাবা

আমানুর রহমান
  ২৯ জুন ২০২২, ০০:০০
আপডেট  : ২৯ জুন ২০২২, ১০:৫১

করোনার ক্ষত যেতে-না যেতেই উজান থেকে ধেয়ে আসা পানিতে সৃষ্ট বন্যায় দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় নতুন আঘাত হিসেবে দেখা দিয়েছে। গত প্রায় দু'সপ্তাহ পুরো সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জেলা-উপজেলা এবং উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অনেক জেলা পানির নিচে। এসব জেলায় সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হয় পানির নিচে, না হয় আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেছে বন্যাকবলিত এলাকার অন্তত এক কোটি প্রাথমিক ও মাধমিক স্তরের শিক্ষার্থীর। এরই প্রেক্ষিতে গত ১৯ জুন থেকে শুরু হওয়া এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। আগামী ২২ আগস্ট এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরুর সময়সূচিও পিছিয়ে যাবে। বন্যাকবলিত এলাকার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলগুলোয় ষান্মাসিক পরীক্ষাও বাতিল হয়ে গেছে অঘোষিতভাবে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) গত সোমবার জানিয়েছে, বর্তমানে সিলেট ও সুনামগঞ্জসহ দেশের ১৮ জেলায় মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ের পৌনে ৬ লাখের বেশি শিক্ষার্থী বন্যাকবলিত। বন্যাকবলিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ১০০। মাউশি বলছে, বন্যার্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি সিলেটে। সেখানে দুই লাখ ৮ হাজার ১৯৩ দুর্ভোগে রয়েছে। সুনামগঞ্জে এক লাখ ৭৪ হাজার ২৬২ শিক্ষার্থী পানিবন্দি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই) এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) তথ্যমতে, অন্তত তিন হাজার স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় বন্যার পানি উঠেছে। আবার দ্বিতল-ত্রিতল ভবনবিশিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় স্থাপিত হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম এখন সম্পূর্ণ বন্ধ। গত প্রায় দু'সপ্তাহের চলমান বন্যার পানি খুবই ধীরে নামতে শুরু করেছে। পানি নেমে যাওয়ার পর ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করা হবে। এরপর শুরু হবে মেরামতের কাজ। ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আবার চালু করতে আরও এক থেকে দেড় মাসের বেশি সময় লাগতে পারে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের বাড়ি-ঘর আবাসস্থলের কোনোটি বন্যার পানিতে ভেসে গেছে, কারওটা ভেঙে পড়েছে। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠানে ফিরিয়ে এনে পাঠদানে মনোযোগী করাটা কতটুকু সম্ভব হবে, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। করোনার কারণে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ৫৭১ দিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। এ সময় লেখাপড়া হয়নি বললেই চলে। গত কয়েক মাস ধরে (২০২২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে) পুরোদমে চলছিল ক্লাস। গত প্রায় ১৩ থেকে ১৫ দিন দেশের ১৮টি জেলা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। বন্ধ হয়ে গেছে শিক্ষা কার্যক্রম। আসন্ন ঈদুল আজহা, গ্রীষ্মকালীন ছুটি এবং আষাঢ়ি পূর্ণিমাসহ নানা কারণে আগামী ১৬ থেকে ১৮ জুলাইয়ের আগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। ফলে বন্যাকবলিত এলাকার শিক্ষার্থীদের পাঠদান-পাঠগ্রহণ ব্যাহত হচ্ছে এবং হবে। তাদের ষান্মাসিক মূল্যায়ন আর হচ্ছে না। অপরদিকে চলতি বছরের এসএসসি এবং এইচএসসি সমমানের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা কবে হবে তা নিয়েও অনিশ্চয়তা কাটেনি। ধারণা করা হচ্ছে, জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে এসএসসি পরীক্ষা এবং সেপ্টেম্বরের শেষে বা অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া হতে পারে। শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, করোনার সময় শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখতে অনলাইন ক্লাস চালু রাখা, বিশেষ উদ্যোগে টেলিভিশনে শিক্ষাক্রম প্রদর্শন, প্রাথমিকের জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় বেতারের মাধ্যমে ক্লাস সম্প্রচারের মতো নানা উদ্যোগ নেওয়া গেলেও, বন্যার মধ্যে সে ধরনের কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যাচ্ছে না। ফলে বন্যাকবলিত শিক্ষার্থীরা সব ধরনের শিক্ষা কার্যক্রমের বাইরে রয়েছে। এ অবস্থায় বন্যাকবলিত ও বন্যামুক্ত এলাকার শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক ধরনের শিক্ষা বৈষম্যেরও সৃষ্টি হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব আবু বকর ছিদ্দীক মঙ্গলবার দুপুরে যাযায়দিনকে বলেন, চলমান বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ও আক্রান্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একটি পরিসংখ্যান সোমবার হাতে পেয়েছি। দ্রম্নতই পরিকল্পনা করে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান মেরামত এবং শিক্ষা কার্যক্রম চালু করাই এখন আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায়গুলোয় সার্বক্ষণিক মনিটরিং ও যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। শিক্ষার্থীদের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে। এসএসসি এবং এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার নতুন সময়সূচি সম্পর্কে জানতে চাইলে আন্তঃবোর্ডের সমন্বয়ক ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার মঙ্গলবার বিকালে যাযায়দিনকে বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে রুটিন প্রকাশ করা হবে। কবে নাগাদ বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, তা স্পষ্ট নয়। পরিস্থিতি বিবেচনা করে রুটিন প্রকাশ করা হবে। আর এসএসসি শেষ হলে অন্তত একমাস ব্যবধানে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নেওয়া হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে