বিতর্ক কাটিয়ে আপন আলোয় ফেরার প্রত্যাশায় ছাত্রলীগ
আজ বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
প্রকাশ | ০৪ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:৪৩

৭৬ এ পদার্পন করল বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে অসামান্য ভূমিকা পালনকারী সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ দৃশ্যমান, লক্ষ্য এবার স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মান’এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করতে যাচ্ছে সংগঠনটি।
১৯৪৮ সালের এই দিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে আনুষ্ঠানিক ভাবে যাত্রা শুরু করে সংগঠনটি। প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে সংগঠনটির নাম ছিল ‘পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ’। পরবর্তীতে পাকিস্তান আমলে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দেওয়া হয়। স্বাধীনতার পর ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’ নামকরণ করা হয়।
এই ৭৫ বছরের ইতিহাস ফিরে তাকালে আওয়ামীলীগের ভ্রাতৃপ্রতিম এই সংগঠনটির রয়েছে অসংখ্য সোনালী অর্জন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬২ এর শিক্ষা আন্দোলন ,১৯৬৬ সালের ছয় দফা, ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধ আর নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রলীগ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।
এছাড়াও ১/১১’র সময় শেখ হাসিনাসহ ছাত্র-শিক্ষক সবার মুক্তির দাবিতে ছাত্রলীগ দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। যার ধারবাহিকতায় গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ২০০৮ সালে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক সরকারের অগ্রযাত্রা শুরু হয়। করোনাকালীন সময়েও ছাত্রলীগের বিভিন্ন কাজ প্রশংসা কুড়িয়েছিল।
তবে এতসব সোনালী অর্জন সত্ত্বেও সাম্প্রতিক সময়ে নানা বিতর্কে পড়েছে সংগঠনটি। বিশ্ববিদ্যালয়ে আধিপত্য বজায় রাখা,সিট বাণিজ্য, বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলোর উপর হামলা, অভ্যন্তরীণ কোন্দলে নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষসহ নানা নেতিবাচক কর্মকান্ডে গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে ছাত্রলীগ।
২০১০ সালে ঢাবিতে আবু বকর, ২০১২ সালে বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ড, ২০১৯ সালে বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদকে হত্যায় নাম উঠে এসেছিলো স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা এই সংগঠনের। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বিগত বছরে নিজেদের মধ্যে বেশ কয়েকবার সংঘর্ষে লিপ্ত হয় ছাত্রলীগ। ফলে কয়েকবারই চবিতে ক্লাস-পরীক্ষা ব্যহত হয়। ইডেন কলেজ ছাত্রলীগ নেত্রীদের বিরুদ্ধে উঠে সিট বাণিজ্যের অভিযোগ।
এছাড়াও বিগত জয়-লেখক কমিটিতে প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিভিন্ন ইউনিটের কমিটি গঠণ ও কেন্দ্রীয় কমিটিতে শেষ সময়ে গণহারে পদায়ন সহ নানান কর্মকান্ডে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে সংগঠনটি।
এসব কর্মকান্ডে খোদ আওয়ামীলীগের নেতাদের বিব্রত ও ক্ষুব্ধ হতে দেখা যায়। গত ২রা ডিসেম্বর ঢাকা মহানগরের সম্মেলনে বিশৃংখলাকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, এমন ছাত্রলীগ আমরা চাই না। নিজেদের সুশৃংখল করুন, সুসংগঠিত করুন। কথা শুনবে না, এমন ছাত্রলীগ আমাদের দরকার নেই। অপকর্ম করবে, এমন ছাত্রলীগ দরকার নেই। দুর্নামের ধারা থেকে ছাত্রলীগকে সুনামের ধারায় ফিরিয়ে আনতে হবে।
নতুন নেতৃত্বে ঘুরে দাঁড়ানোর্ প্রত্যয় ও জাতীয় নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা : গত ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ২৯ তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এর পর ২০ ডিসেম্বর নতুন নেতৃত্ব পায় ছাত্রলীগ। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের দায়িত্ব পান যথাক্রমে ডাকসুর সাবেক এজিএস সাদ্দাম হোসেন ও শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান। দায়িত্ব পাওয়ার ৫ দিন পর সাদ্দাম ইনান দশটি সাংগঠনিক নির্দেশনা দেন। যার মধ্যে সম্মেলন ব্যতীত কোনো কমিটি গঠণ নয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একাডেমিক পরিবেশ বজায় রেখে সাংগঠনিক কর্মসূচি পরিচালনা করা, জলবায়ু পরিবর্তন জনিত সংকট মোকাবিলায় ভূমিকা রাখা, শিক্ষার্থী ও তরুণ প্রজন্মকে তথ্য-প্রযুক্তিতে দক্ষ করতে নানামুখী উদ্দ্যোগ নেওয়া সহ চমকপ্রদ ও প্রশংসাযোগ্য নানান নির্দেশনা।
২০২৪ সালের শুরুতেই হবে দ্বাদশ নির্বাচন। নির্বাচনের একবছরের ও কম সময় রয়েছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ইতিমধ্যে নিজদের কর্মসূচি নিয়ে মাঠে রয়েছে। ফলে টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামীলীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগকেও তুলনামূলক কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। তবে নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে ছাত্রলীগ প্রস্তুত উল্লেখ করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান যায়যায়দিনকে বলেন, যেকোনো দল গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আন্দোলন সংগ্রাম করতেই পারে। তবে আন্দোলনের নামে মানুষের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি করলে ছাত্রলীগ জনগণকে সাথে নিয়ে প্রতিরোধ করতে প্রস্তুত রয়েছে।
ছাত্রলীগ শিক্ষার্থী ও দেশের কল্যাণে কাজ করে উল্লেখ করে সার্বিক বিষয়ে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ইনান যায়যায়দিনকে বলেন, আগামী দিনে দলের গঠণতন্ত্র মোতাবেক সকল কার্যক্রম পরিচালিত হবে। আমরা সারাদেশে সম্মেলন উৎসব করব, সম্মেলন ব্যতীত কোনো কমিটি গঠন না করতে তৃণমূল পর্যায়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে যত কর্মসূচি : এদিকে গতকাল সকালে মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে ৭৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বছর ব্যাপী নানা কর্মসূচির কথা জানানো হয়।
যার মধ্যে ৪ জানুয়ারি সকাল ছয়টায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল সাড়ে আটটায় ধানমন্ডিস্থ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, সকাল নয়টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে কেক কেটে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন, বিকেল তিনটায় শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ কর্মসূচি রয়েছে। ৬ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী শোভাযাত্রা আয়োজন করবে ছাত্রলীগ। এছাড়াও ৫-৮ জানুয়ারি রক্তের গ্রুপ নির্ণয়, স্বেচ্ছায় রক্তদান ও সংগৃহীত রক্ত বিতরণ, শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ কর্মসূচি পালন করবে ছাত্রলীগ।
স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানে মতবিনিময়, ছাত্রলীগের পুনর্মিলনী আয়োজন, দলীয় কার্যালয়ে লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠা, নারী শিক্ষার্থীদের নিয়ে নারীর ক্ষমতায়ন ও শেখ হাসিনা’শীর্ষক বক্তব্য প্রতিযোগিতা আয়োজন, সজিব ওয়াজেদ জয় প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা আয়োজনসহ বছরব্যাপী আরো কিছু কর্মসূচি পালনের পরিকল্পনার কথাও জানানো হয়।
যাযাদি/সাইফুল