সুমাইয়া সুমুর সুরের মূর্ছনায় মাতোয়ারা হাজারো সঙ্গীতপ্রেমী
প্রকাশ | ০৭ জুন ২০২৩, ১২:১১ | আপডেট: ০৭ জুন ২০২৩, ১২:৪২
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার সাথে পরিচয় অনেকের। শুধু তার সাথে নয়, তার সুরেলা কণ্ঠের গানের সাথেও পরিচয় ঘটে। ফেইসবুকে তাকে অনুসরণ করেন ৮৪ হাজার সঙ্গীতপ্রেমী, ইউটিউবেও প্রায় ৩৭ হাজার মানুষ তাকে অনুসরণ করে। কিন্তু এসব ছাড়িয়ে তার শ্রোতা লাখ লাখ। একটার পরে একটা ভিডিওর কমেন্ট সেকশনে শুধু তার গুণমুগ্ধ শ্রোতাদের প্রশংসাসূচক মন্তব্য ছাড়া চোখে পড়ে না কিছুই। বেশ কিছুক্ষণ খুঁজেও পাওয়া গেল না কোনো নেতিবাচক মন্তব্য।
বলছি সুমাইয়া ইসলাম মীমের কথা। দর্শক-শ্রোতারা অবশ্য তাকে ‘সুমাইয়া সুমু’ নামেই চেনে। সুমু জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
‘Sumaiya Sumu’ নামে ফেইসবুকে একটি পেইজ ও ইউটিউবে একটি চ্যানেল রয়েছে তার। সেখানে সে বিভিন্ন শিল্পীদের গাওয়া গান গেয়ে আপলোড করে। মুহূর্তেই সেসব গান ছড়িয়ে পড়ে নেট দুনিয়ায়। শত শত মানুষের ইতিবাচক মন্তব্যে ভরে যায় তার কমেন্ট সেকশন। এসব দেখে আনন্দের শেষ নেই সুমুর।
সুমুর ভাষ্য হলো, ‘ফেইসবুক বা ইউটিউবে আপলোড করা নিয়ে আমার অনেক ভয় ছিলো। মনে হতো- কেউ হয়তো শুনবেই না, গানগুলো হয়তো অবহেলায় পড়ে থাকবে। বান্ধবী আর জুনিয়রদের চাপাচাপিতে মনে হচ্ছিলো কিছু গান গেয়ে রাখা উচিৎ। কেউ শুনুক আর না শুনুক, স্মৃতি তো থেকে যাবে। নিজের জন্যে গাওয়া গানগুলো কীভাবে যেন অন্যরাও ভালোবাসতে শুরু করলো। আমি খুব অবাক হই এই ব্যাপারটায়। কত কত অপরিচিত মানুষজন আমার গান শোনে- কি সুন্দর সব কথা লিখে যায় আমার গানের নিচে। এইসব খুব সুন্দর প্রাপ্তি৷’
অধ্যাপক বাবা আর গৃহিণী মায়ের একমাত্র সন্তান সুমু। সে নাকি গানটা তার মায়ের গর্ভেই পেয়েছে। তার বাবা-মা মান্না দে, মেহেদি হাসান, লতা মঙ্গেশকরসহ আরো অনেক শিল্পীদের গান শুনতেন। এসব শুনতে শুনতেই বড় হয়েছে সে। তাই তার মতে, তার গান গাওয়ার ব্যাপারটা মায়ের পেট থেকেই শুরু হয়েছিল।
সুমুর সুরের মূর্ছনায় মন্ত্রমুগ্ধ লাখো মানুষ। এই সুর কীভাবে তার সঙ্গী হলো? জানতে চাই তার কাছে। সে বলে, ‘ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার আগে কখনো গান শেখা হয় নি। এমনি এমনি কিভাবে যেন গেয়ে ফেলতে পারতাম। যেকোন গান একবার শুনেই গাইতে পারি সেই ছোটবেলা থেকেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে মিউজিক নিয়ে পড়ার কারণ হচ্ছে আম্মু আব্বু। তাঁরা চাচ্ছিলেন আমি এখানেই মিউজিক নিয়ে পড়াশোনা করি।’
‘আমার ইচ্ছা না থাকলেও আম্মু আব্বু আমাকে বলেছিল একটা মাস ক্লাস করে কেমন লাগে দেখতে। বলেছে, ভালো না লাগলে চলে এসো।ব্যাস এক মাস যেতে না যেতেই প্রেমে পড়ে গেলাম মিউজিক ডিপার্টমেন্টের। সকাল সকাল প্র্যাক্টিক্যাল ক্লাস করার অনুভূতি যে কি সুন্দর। আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় কাটিয়েছি কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে।’, যোগ করে সুমু৷
ফেইসবুক-ইউটিউবে ভিডিও দেয়ার সময় সব কন্টেন্ট ক্রিয়েটররা যেটা মাথায় রাখেন, তা হলো- নেতিবাচক মন্তব্য সহ্য করার শক্তি থাকতে হবে। আপনিও কি তাই মাথায় রেখেছিলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে সুমুর বক্তব্য- ‘প্রথমে তো ভয়ে ছিলাম। কিন্তু আমি কখনো নেগেটিভ কোনো মন্তব্য দেখিনি আমাকে নিয়ে অথবা আমার গান নিয়ে। এই ব্যাপারটা অদ্ভুত রকমের শান্তি দেয় আমাকে।’
ফেইসবুক ঘুরে দেখা যায়, বাংলা ও হিন্দি ভাষায় অনেক গানই করেছেন সুমু। কিন্তু তার সবথেকে প্রিয় গান কোনগুলো। তিনি বলেন, ‘নজরুলের গান করতে সবথেকে বেশি ভালো লাগে। তাছাড়া সেমি ক্লাসিকের দিকে ঝোঁক বেশি। হিন্দি গান গাইতেও খুব স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি।ছোটোবেলায় শুনে শুনে বড় হয়েছি যে, তাই হিন্দি গানের প্রতি টান অনেক। বিভাগের বাইরে কোনো গুরু নেই আমার। যা শিখেছি বিভাগ থেকেই শিখেছি।’
তার গানের নিচে মন্তব্যগুলো পড়ে যা বোঝা যায়- সুমুর কাছে দর্শক-শ্রোতাদের প্রত্যাশা অনেক। সে কী চায়? সুমু বলে, ‘আমি চাই আমার কিছু মৌলিক গান হোক। আমি মরে গেলেও যেন আমার গানগুলো পৃথিবীতে থেকে যায়। প্রচুর টিভি শো করতে হবে অথবা প্রচুর স্টেজ শো করতে হবে- এমন কোনো ইচ্ছা আমার নেই। গান গেয়ে টাকা আয় করার কোনো ইচ্ছাও নাই।অনেক বড় শিল্পী হতে চাই না। কিছু সুন্দর গানের মালিক হতে চাই শুধু।’
সুমু বলতে থাকলো, ‘গানটা আমার রক্তে মিশে আছে। ভালোবেসে গান করি। চেষ্টা করবো আমার শ্রোতাদের কিছু সুন্দর গান উপহার দিয়ে যেতে। বিনিময়ে ভালোবাসা ছাড়া আর কিছু চাই না।’
সুমু বাংলাদেশ টেলিভিশনের একজন তালিকাভুক্ত শিল্পী। দুই বছর আগে নজরুল সংগীতে তালিকাভুক্ত হয় সে। নজরুলের গানের উপর অসম্ভবরকম দুর্বল সে। সুমুর ভাষায়, ‘খুব শান্তি পাই নজরুল সংগীত গেয়ে। তাঁর গানের কথা ও সুর অদ্ভুত। ভবিষ্যতে নজরুলের গান নিয়ে গবেষণা করার ইচ্ছা আছে। নজরুলের অপ্রচলিত গান, বিলুপ্তপ্রায় গানগুলোকে আমাদের প্রজন্মের কাছে নতুন করে তুলে ধরার একটা ইচ্ছা আছে। আস্তে-ধীরে ইচ্ছাগুলো সব পূরণ করে নেব, ইনশাল্লাহ।’
যাযাদি/ এস