গণতান্ত্রিক উন্নয়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মুক্তি নিশ্চিত হবে : উপাচার্য ড. মশিউর রহমান
প্রকাশ | ০৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৫:০৯
গণতান্ত্রিক উন্নয়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মুক্তি নিশ্চিত হবে বলে মনে করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান। তিনি বলেন, ‘দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি নিয়ে যারা ষড়যন্ত্র করছেন তাদের ৩০ লাখ শহিদের শক্তিমত্ত্বাকে বিবেচনায় রাখা উচিত। আমরা তাদের উত্তরসূরী যারা রক্ত দিয়ে দেশ রক্ষা শিখিয়ে দিয়ে গেছেন। আমরা সেই বাংলাদেশ হতে চাই যেই বাংলাদেশ আগামী দিনে মানবিকতায়, বিজ্ঞানে ও প্রযুক্তিতে বিশ্বে নেতৃত্ব দেবে।’
শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে এডুকেশন রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট ফোরাম (ইআরডিএফবি) আয়োজিত ‘উন্নয়ন ও নির্বাচন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন উপাচার্য।
দেশের প্রথিতযশা সমাজবিজ্ঞানী ড. মশিউর রহমান বলেন, ‘আমরা মাঝে মাঝে বৈরিতা দেখি। সেটি কখনো অভ্যন্তরীণ, আবার অভ্যন্তরীণ যোগসাজসে বাইরের অন্যরাষ্ট্রসমূহ যারা নিজেদের পরাশক্তি মনে করে সেই রাষ্ট্রের হাতছানি দেখি। এই হাতছানি কী আজকে নতুন? এই অঞ্চলের মানুষ মুক্তির পথে যখন হাঁটতে চেয়েছিলেন। আমরা বহুদিন শতাব্দী থেকে শতাব্দী ধরে শোষণের নিগঢ়ে ছিলাম। কৃষ্ণকায় শ্যামবর্ণের এই মানুষগুলো আত্মমর্যাদায় বলীয়ান হতে চেয়েছে। কখনোই অন্যের কাছে হাত পেতে আমরা স্বাবলম্বী হতে চাইনি। আমাদের সমাজ নির্মিত হয়েছে ঘামে-শ্রমে। এই অঞ্চলের মানুষের নির্ভরতা ছিল কৃষিতে। আমাদের শ্রমিক ভাইয়েরা কৃষিতে ভালো ভূমিকা রেখেছে।’
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য বলেন, ‘আমাদের উদ্বৃত্ত শ্রমিকদের শিল্প শ্রমিকে রূপান্তরিত করেছি। এটি কারো দয়ায় করা হয়নি, নিজেদের ঘামে-শ্রমে। এই পর্যন্ত আমাদের যতটুকু অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে তা কারো দয়ায় নয়। বরং যখনই মাথা তুলে দাঁড়াতে চেয়েছি তখনই আমাদের পথ চলায় বাধা দিয়েছে। কিন্তু আমরা বলে দিতে চাই, আমাদের পূর্বসূরীরা শিখিয়েছেন দেশ বাঁচাতে কীভাবে বন্দুকের সামনে বুক চিতিয়ে লড়তে হয়। গেরিলা যোদ্ধারা যুদ্ধ করে ৩০ লাখ মানুষের জীবনের বিনিময়ে এবং দুই লাখ মা-বোন নির্যাতন সয়ে যে মানচিত্র এনেছেন সেই মানচিত্রে আপনারা হাত দেবেন আর বাঙালি বসে থাকবে তা ভাবার কোনো কারণ নেই। এটি আফগানিস্তান, মিয়ানমার বা শ্রীলঙ্কা নয়। এটি বাংলাদেশ। আত্মশক্তিতে বলীয়ান এক ভিন্ন বাংলাদেশ।’
উপাচার্য ড. মশিউর রহমান বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু যখন পশ্চিমাদের বাজার অর্থনীতির বিপরীতে দাঁড়িয়ে সমাজতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক আদর্শের নতুন এক অর্থনৈতিক ধারা তৈরি করতে চেয়েছিলেন। যেই ধারাটি আজ বিশ্বে অনুকরণীয় মডেল হতো। কিন্তু পিতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে সেই আদর্শকে হত্যা করা হয়েছে। ধ্বংস করা হয়েছে দেশের অমিত সম্ভাবনার অর্থনীতিকে। এরপর বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে আমরা এগিয়েছি ঠিকই কিন্তু বুকে ব্যথা নিয়ে এগিয়েছি।’
এ দেশের সকল গণতান্ত্রিক উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি বঙ্গবন্ধু কন্যা নেতৃত্বে হয়েছে উল্লেখ করে ড. মশিউর রহমান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা যখন দেশে ফিরলেন তিনি বুঝলেন, বাংলার মুক্তির জন্য প্রয়োজন ভোট এবং ভাতের অধিকার ফিরিয়ে আনা। সেদিন তিনি ডিজিটাল এবং স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলেননি। তিনি দীর্ঘ পথ বেয়ে ভাত এবং ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করলেন। ৯০ এ স্বৈরাচার পতন ঘটালেন। সেটি ছিল টার্নিং পয়েন্ট। আমরা যখন দেশকে স্থিতিশীল এবং কনসেনসাসে নিয়ে যেতে চাই তখনই ষড়যন্ত্রকারীরা এক হয়ে অস্থিতিশীল এবং সাংঘর্ষিক সমাজ তৈরি করতে চায়। ঐক্যমত ভেঙে দিতে চায়। কিন্তু বাঙালি সেটি হতে দেবে না। মানুষ মুক্তি চায়। গণতন্ত্র চায়। ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে চায়।’
সকল ষড়যন্ত্র বিলীন হয়ে যাবে উল্লেখ করে উপাচার্য বলেন, আপনারা যারা ষড়যন্ত্র করবেন এটি ঐতিহাসিক সত্য ষড়যন্ত্রকারীরা ক্রমাগত বিলীন হতে থাকে। আর যারা দেশকে ভালোবাসে, আলিঙ্গন করে পতাকা, বুকে ধারণ করে জাতীয় সংগীত তারা সুউচ্চ মানবতা নিয়ে বেঁচে থাকে। আমরা চাই টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন। শান্তি চাই। আমরা আমাদের আদর্শের ভিত থেকে একচুলও নড়ব না। নিজ আদলে আমাদের সাহিত্য, সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও শিল্প গড়ে তুলব। বঙ্গবন্ধুর দর্শনের ধারাবাহিকতায় আমরা মুক্তির পথে অর্থনীতি এবং রাজনীতির পথ রচনা করছি। সংহতি, ঐক্য আর ভালোবাসায় দেশকে গড়ে তুলব।’
ইআরডিএফবির সভাপতি বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. মো. সাজ্জাদ হোসেনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহবুবা নাসরীন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবু ইউসুফ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল জব্বার খাঁন, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভুঁইয়া। আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সাহাদাত হোসেন সিদ্দিকী।
যাযাদি/ এসএম