২৭ বছর যাবৎ অকার্যকর শাবির কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ

কার্যক্রম না থাকলেও বন্ধ হয়নি ফি নেয়া, নেই স্থায়ী কোনো কক্ষ বা অফিস

প্রকাশ | ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:১৬

মাহাবুবুর রহমান, শাবি
ফাইল ছবি

দীর্ঘ ২৭ বছর যাবৎ অকার্যকর হয়ে রয়েছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (শাকসু)। ফলে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি আদায়ে নেই কোনো প্লাটফর্ম। এতে শিক্ষার্থীদের দাবি আদায়ে ভোগান্তির সম্মুখীন হতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

দীর্ঘ ১৫ বছরের আওয়ামী শাসনামলে ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে ক্ষমতাসীনদের মাঝে ছিল স্বদিচ্ছার অভাব। ২৪ এর ছাত্র-জনতার গনআন্দোলনের পর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের গুরুত্ব ফুটে ওঠেছে শিক্ষার্থীদের মাঝে। দলীয় গোড়ামী, লেজুড়বৃত্তি পরিহার করে সুস্থ ধারার গনতান্ত্রিক রাজনৈতিক চর্চা, সুদৃঢ়, যোগ্য ও মেধাবী নেতৃত্ব গড়ে তোলার জন্য ছাত্র সংসদ নির্বাচন জরুরি বলে অনেক শিক্ষার্থী-শিক্ষক মন্তব্য করেছেন। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের বিকল্প নেই বলে অনেক শিক্ষার্থীর অভিমত।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকার চর্চা ও যোগ্য নেতৃত্ব তৈরির উদ্দেশ্যে ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (শাকসু)। প্রতিষ্ঠার প্রথম তিন বছরে নিয়মিত নির্বাচন আয়োজন করলেও পরবর্তীতে তা স্থবির হয়ে পড়ে। সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ১৯৯৭ সালের ২৫ আগস্ট। এরপর সারা দেশের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শাবিতেও ছাত্র সংসদের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধের প্রথম কয়েক বছর বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন শাকসু নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার থাকলেও পরবর্তী সময়ে বিষয়টি থমকে যায়।

প্রতিষ্ঠার ৩১ বছরেও শাকসুর জন্য বরাদ্দ নেই কোনো কক্ষ বা অফিস। জানা গেছে, সাময়িকের জন্য অস্থায়ী একটি কক্ষ বরাদ্দ দেয়া হলেও বর্তমানে এই জায়গাটি ক্যান্টিন ও নিয়মিত আড্ডাখানা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

বর্তমানে শাকসুর কোনো কার্যক্রম না থাকলেও নেয়া হচ্ছে নিয়মিত ফি। যা ইউনিয়ন ফি নামে শিক্ষার্থীরা প্রতি সেমিস্টারে দিয়ে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। ২০০০ সালে এ ফি ছিল সাড়ে ৩৭ টাকা। ৮ দফায় বেড়ে তা এখন ১০০ টাকা। এ টাকা কোন খাতে ব্যয় করা হচ্ছে সে ব্যাপারে সদোত্তর নেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের।

ছাত্র সংসদ নির্বাচনের গুরুত্ব নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. ইফরাতুল হাসান রাহীম বলেন, শিক্ষার্থীদের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধি দের মাধ্যমেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায় সম্ভব। বহুদিন যাবত শাবিতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ থাকায় আমরা আমাদের অধিকারের কথা বলা থেকে বঞ্চিত হয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়ন, শিক্ষার্থীদের স্বার্থ রক্ষা এবং যোগ্য নেতৃত্ব সৃষ্টির পরিসর গঠনের লক্ষ্যে অবিলম্বে শাকসু নির্বাচন আয়োজন করা প্রয়োজন।

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সাজেদুল করিম যায়যায়দিনকে বলেন, ”বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ ব্যাপারে অবগত আছে। আমরা বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে দেখেছি। তবে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এরকম কোনো দাবি জানানো হয়নি। শিক্ষার্থীরা এ ব্যাপারে দাবি জানালে আমরা তাদের দাবির প্রেক্ষিতে নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের প্রতিটি যৌক্তিক দাবির প্রতি শ্রদ্ধাশীল।”

যাযাদি/ এসএম