‘ফ্যাসিস্ট কেউ শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না’

প্রকাশ | ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭:৫০

ইবি প্রতিনিধি
ছবি : যায়যায়দিন

গণহত্যার বিচার সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত ফ্যাসিবাদের দোসর ও সহযোগীরা কেউ শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচনে অংশ না নেয়াসহ তিন দফা দাবিতে স্মারকলিপি দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) শাখা।

শনিবার (৭ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে ভিসির কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন তারা।

এসময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইবির সমন্বয়ক এস এম সুইট, সহ-সমন্বয়ক নাহিদ হাসান, ইয়াশিরুল কবির সৌরভ, তানভীর মন্ডল ও গোলাম রব্বানীসহ অন্য শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

তাদের অন্য দাবিগুলো হলো- দ্রুত সময়ে গণহত্যাকারী ফ্যাসিবাদ ও  সহযোগীদের যথাযথ বিচার নিশ্চিত করতে হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে ফ্যাসিবাদের দোসরদের জায়গা দেওয়া যাবে না।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দরা বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলন সংগ্রাম এবং ত্যাগ তিতিক্ষা ও রক্তের বিনিময়ে ১৬ বছরের স্বৈরাচারী ও ছাত্র-জনতার গণহত্যাকারী আওয়ামী সরকার বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত হতে বাধ্য হয়। ছাত্র-জনতার উপর আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকার যখন নির্বিচার গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছিল তখন দেশের বিভিন্ন পর্যায় থেকে তাদের নেতাকর্মী ও পেশাজীবী সংগঠনের সদস্যরা সহযোগিতা করে ও ছাত্র-জনতার বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়েও শিক্ষক-কর্মকর্তাদের একটি পক্ষ স্বৈরাচারের সহযোগী হিসেবে প্রকাশ্য কার্যক্রম পরিচালনা করে। আন্দোলন বন্ধ করার জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বনসহ ৪ আগস্ট ছাত্রদের বিরুদ্ধে মিছিল করেছে। সেখান থেকে তারা নিজেদেরকে 'পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার কর্মী' ঘোষণা দিয়ে আন্দোলন প্রতিরোধ ও আন্দোলনকারীদের উপর প্রতিশোধের ঘোষণা দেয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গণহত্যাকারী সরকারের বিচার শুরু করলে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বৈরাচারের দোসর ও সহযোগীদের তথ্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রেরিত হয়েছে। এই মামলা এখনো বিচারাধীন রয়েছে।

নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, আমরা লক্ষ্য করছি ফ্যাসিবাদী সরকারের পদলেহনকারী একটি গোষ্ঠী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারো মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। এজন্য তারা সংঘবদ্ধভাবে বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এসব কর্মকান্ড চলমান দেশবিরোধী চক্রান্তের অংশ কি না এ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ফ্যাসিবাদের দোসররা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে অংশ নিয়ে শিক্ষক প্রতিনিধি হওয়ার সুযোগ খুঁজছে৷ তাদেরকে শিক্ষক প্রতিনিধি হিসেবে ছাত্র-সমাজ কোনভাবেই মেনে নেবে না। এই নির্বাচনে তাদের অংশগ্রহণের সুযোগ ফ্যাসিবাদের পুনর্বাসনের নামান্তর। যা জুলাই বিপ্লবের স্পিরিটের সাথে সম্পূর্ণভাবে সাংঘর্ষিক এবং জুলাই বিপ্লবকে অবমাননার শামিল।

এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়া মোড় এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তারা। মিছিল শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে জড়ো হয় তারা।

এদিকে দেশের ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির (ইবিশিস) নির্বাচন সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান। এদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী শিক্ষক সংগঠন শাপলা ফোরাম ও জামায়াতপন্থী গ্রীন ফোরামের শিক্ষকদের সাথে পৃথকভাবে আলোচনা শেষে তিনি এসব কথা বলেন।

এদিকে বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন জিয়া পরিষদ নির্বাচন প্রসঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসতে রাজি নয়, পাশাপাশি  রিসেন্ট কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন না তারা। এদিন বেলা ১১ টায় থিওলজি এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদের সভাকক্ষে জিয়া পরিষদের এক জরুরি সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে তিনটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

সিদ্ধান্তগুলো হলো- গত ৫ই আগস্ট থেকে পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে ইবি শিক্ষক সমিতির সকল কার্যক্রম অবৈধ বলে গণ্য করা হলো এবং সংগত কারণে উক্ত তারিখ থেকে ইবি শিক্ষক সমিতির তহবিলের কোনো অর্থ ব্যয় করা যাবে না; করলে তা সংশ্লিষ্টদের ব্যক্তিগত দায় হিসেবে গণ্য হবে, রাষ্ট্র সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত ইবি শিক্ষক সমিতির ব্যানারে শিক্ষকদের সকল কার্যক্রম স্থগিত থাকবে এবং রাষ্ট্র সংস্কার সম্পন্ন হলে অনুকূল পরিবেশে শিক্ষক সমিতির নির্বাচন করার জন্য সকল মহলের মতৈক্যের ভিত্তিতে নির্বাচন আয়োজনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যাবে।

এ বিষয়ে ইবি শিক্ষক সমিতির প্রধান নির্বাচন কমিশনার ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, ‘জিয়া পরিষদ নির্বাচন বয়কট করেছেন। এছাড়াও অন্য সংগঠন তাদের মতামত জানিয়েছেন। কাউকে বাদ দিয়ে নির্বাচন করা যুক্তিসঙ্গত হবে না। তাই এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন করা সম্ভব নয় বলে আমি শিক্ষক সমিতিকে জানিয়েছি। পরিবর্তী সিদ্ধান্ত শিক্ষক সমিতি জানাবেন। কখন নির্বাচন হবে তা পরিস্থিতি ও সব পক্ষের মতামতের উপর নির্ভর করছে।’

যাযাদি/ এম