ঢাবির সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে পুনরায় আসন বরাদ্দের চিন্তা
প্রকাশ | ১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১৩:৫০

২০২১ সালে বন্ধ হয়ে যাওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে শিক্ষার্থীদের আসন বরাদ্দের কথা ভাবছে হল প্রশাসন।
জানা যায়, ২০২১ সাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সিদ্ধান্তে সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে আবাসিক শিক্ষার্থীদের নতুন করে আসন বরাদ্দ দেওয়া বন্ধ থাকে। তবে নতুন শিক্ষার্থীদের আসন বরাদ্দ না দেয়া গেলেও হলটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনায় এমফিল ও পিএইচডি শিক্ষার্থীদের এখানে আবাসনের বিষয়ে আলোচনা হয়। নবীন শিক্ষার্থীদের আসন বরাদ্দ না দিয়ে কেন এমফিল ও পিএইচডি শিক্ষার্থীদের স্থান দেওয়া হবে, এটি নিয়েও তখন প্রশ্ন ওঠে। অনেকে বলছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন এই হলটিকে অবহেলায় রাখা হয়েছিল। এমন কি ছাত্রলীগ তাদের দলীয় প্রচারে হলের নামের ‘মুসলিম’ শব্দটি ব্যবহারও করতো না।
তবে জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পর পাল্টে গেছে দৃশ্যপট। সেপ্টেম্বরে সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে দায়িত্ব নেয় নতুন প্রশাসন। হলটিতে নতুন শিক্ষার্থীদের সিট বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে না জানতে পেরে হলের প্রভোস্ট বিশ্বিবদ্যালয় প্রশাসনের সহায়তায় বুয়েটের বিআরটিসিকে অনুরোধ করে প্রকৌশল জরিপ করার জন্য।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিষয়টি আমলে নিয়ে অর্থ বরাদ্দ দেয়। অক্টোবরেই হলের ঝুঁকিনিরুপনের জন্য বিআরটিসিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়৷ বুয়েট তখন পরীক্ষা নিরিক্ষা করে অনুমান ভিত্তিক যে ৩৬টি রুম বন্ধ করার কথা বলা হয়েছিলো, তার স্থলে ২১টি রুম থেকে অতিসত্বর শিক্ষার্থীদের সরাতে বলেন। সেই সাথে বুয়েট কর্তৃপক্ষ পূর্ণাঙ্গ প্রকৌশল পরীক্ষার প্রস্তাবনা দেয়। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ২০২৪ সালের ডিসেম্বরেই বুয়েটকে পূর্ণাঙ্গ প্রকৌশল পরীক্ষার জন্য প্রস্তাব দেয়। সেই অনুযায়ী বর্তমানে বুয়েটের অধীনে পরীক্ষা-নিরিক্ষার কাজ চলছে। এই পরীক্ষার মাধ্যমে বুয়েট একটি নকশা প্রনয়ণ করবে, যে নকশা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সংস্কার কাজ পরিচালনা করলে হলটিতে বর্তমানে যে অবস্থায় আছে, সে অবস্থায় এটিকে একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে সংরক্ষণ করা যাবে এবং শিক্ষার্থীরা এতে বসবাস করতে পারবে৷
ঐতিহাসিক সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের গুরুত্ব অনুধাবন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে কোষাধ্যক্ষের নেতৃত্বে কমিটি গঠন করে। কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন, সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে প্রাধ্যক্ষ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী, বুয়েটের একজন অধ্যাপক। কমিটি হলের রক্ষণাবেক্ষণ, মেরামত ও শিক্ষার্থীদের নিরাপদ বসবাসের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। কমিটির পক্ষ থেকে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে করা মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয় যে, হলের রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত সুচারুভাবে হচ্ছে কিনা তা এবং অতিরিক্ত ভবন নির্মাণেরনসম্ভাব্যতা নিরুপনের পর্যালোচনার জন্য ১২ জানুয়ারির সভা আহ্বান করা হয়।
এ ছাড়া হল প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষের সাথে হলে শিক্ষার্থীদের আবাসুন চালু নিয়ে সার্বক্ষণিক আলোচনা চালিয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় সলিমুল্লাহ হল রক্ষণাবেক্ষণের জন্য গঠিত কমিটি ডিসেম্বরের মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নেয় যে, হলে নতুন শিক্ষার্থী তোলা, অতিরিক্ত ভবন নির্মাণসহ অন্যান্য বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিনির্ধারণী সভা ১৪ জানুয়ারি আয়োজন করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়৷ সে অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের হল প্রশাসন, প্রকৌশল দপ্তর, পরিকল্পনা দপ্তর এবং রক্ষণাবেক্ষণে গঠিত কমিটিকে প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের প্রাধ্যক্ষ ড. আব্দুল্লাহ-আল মামুন জানান, সলিমুল্লাহ মুসলিম হলকে সক্রিয় রাখা, অতিরিক্ত ভবন নির্মাণ এবং হলে নতুন করে ছাত্রদের আবাসিকতা দেওয়ার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অত্যন্ত আন্তরিক। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যথাযথ অর্থ বরাদ্দ দেওয়ায় পাশাপাশি বিগত চারমাসে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। আমি প্রভোস্ট হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।
তিনি বলেন, আমি জানি আমার হলের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অনেকগুলো দাবি উপস্থাপন করেছেন। আমি মনে করি তাদের দাবিগুলো যৌক্তিক এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও সঠিকভাবে তাদের দাবিগুলো মূল্যায়ন করে চলছেন। আমরা আশা করছি অতিসত্বর হলের রক্ষণাবেক্ষণের কাজ শুরু হবে। সেই সাথে নতুন ভবন নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ আজ থেকে শুরু হয়েছে এবং আগামী ১৪ তারিখ যে সভা আছে সেখানে সার্বিক দিক বিবেচনা করে হয়তোবা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হলে নতুনকরে আবাসিক শিক্ষার্থী নেওয়ার বিষয়টি ইতিবাচক ভাবে ভাববেন বলে আমি আশা করি।
যাযাদি/ এসএম