মধ্যরাতে রাবি ক্যাম্পাসে বহিরাগত শিক্ষার্থীর রহস্যজনক মৃত্যু

প্রকাশ | ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১৫:২৬

রাবি প্রতিনিধি
ফাইল ছবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) শিমুল নামে এক বহিরাগত শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ১০টার দিকে জগদীশ চন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনের পাশে এ ঘটনা ঘটে। তৎক্ষণাৎ তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত শিমুল নগরের মতিহার থানাধীন মধ্য মেহেরচন্ডী বুধপাড়া এলাকার জামাল হোসেনের ছেলে। তিনি রাজশাহী কলেজের স্নাতক প্রথম বর্ষের ছাত্র।

শিমুলের মৃত্যু নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ধোঁয়াশা। একাধিক সূত্রে এখন পর্যন্ত তিন ধরনের তথ্য পাওয়া গেছে। ডাক্তার বলছেন মাথায় রক্তক্ষরণের ফলে তিনি মারা গেছেন। তার শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন বা রক্তের দাগ পাওয়া যায়নি। তবে তার পরিবারের দাবি তাকে মারধার করে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এদিকে প্রক্টর বলছেন বাইক নিয়ে পালানোর সময় দুর্ঘটনা ঘটেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ভেতরে বান্ধবীকে নিয়ে বেড়াতে যান শিমুল। পরে ক্যাম্পাসের ভেতরে কয়েকজন ছেলে তাদের ধাওয়া করে। এতে শিমুল মোটরসাইকেলে নিয়ে দ্রুত গতিতে পালিয়ে আসার চেষ্টা করেন। এ সময় ব্যাডমিন্টন খেলছিলেন এমন কয়েকজন তার পথরোধ করে এলোপাথাড়ি মারধর করে গুরুতর আহত করে। পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত শিক্ষার্থীর বাবা জামাল মিয়া বলেন, আমার ছেলে তার বান্ধবীকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরতে যায়। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির গাড়ি দেখে তারা সেখান থেকে দ্রুত মোটরসাইকেল যোগে চলে যায়। সামনে একদল শিক্ষার্থী তাদেরকে পথরোধ করে এবং আমার ছেলেকে সন্দেহজনক মনে করে ব্যাট দিয়ে আঘাত করে ফলে গুরুতর আহত হয় সে। পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করে। আমি মতিহার থানায় আসছি মামলা করার জন্য।

এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, তিনি রাস্তার পাশে ছিলেন, যেখানে অনেকে ব্যাডমিন্টন খেলছিল। হঠাৎ একটি বাইক রডের রাস্তায় দ্রুতগতিতে আসে, যা দেখে খেলা ছেড়ে অনেকে ধাওয়া করে। তিনি ভাবেন, এটি ছিনতাই হতে পারে। বাইকটি উল্টে যায়, সঙ্গে থাকা এক মেয়েও মাটিতে পড়ে। ছেলেটি বেশ আহত হয়ে অজ্ঞান হয়। লোকজন তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। তিনি নিশ্চিত নন আসল ঘটনা কী, তবে তখন কেউ তাকে মারেনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, রাত দশটার পর আমি ঘটনা জানতে পারি। আমাদের সহকারী প্রক্টর টহল দিচ্ছিল। তখন ছেলে-মেয়ে দুইজন তৃতীয় বিজ্ঞান ভবনের পিছনে ছিল। প্রক্টরের গাড়ি দেখে তারা বাইক নিয়ে পালাতে যায়। ওদিক দিয়ে রাস্তার কাজ চলছিল। সেখানেই দুর্ঘনাটি ঘটে। পরে আমাদের লোকজন তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেলে পাঠায়। সেখান থেকে তাকে রামেকে নেওয়া হয়। ছেলেটির বাইক প্রক্টর দপ্তরে আছে। কিছুক্ষণ আগে জানতে পারলাম ছেলেটি মারা গেছে।

রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালে জরুরি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত চিকিৎসক মাহমুদুল হাসান ফিরোজ বলেন, ‘যারা তাকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছিল প্রথমে তারা সড়ক দুর্ঘটনার কথা বলে। পরে তাদের কাছে বিস্তারিত জানতে চাওয়া হলে জেরার মুখে তারা পিটিয়ে মারার কথা স্বীকার করে। নিহতের লাশ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।’

মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল মালেক বলেন, হত্যার কারণ সম্পর্কে এখনো কিছু জানা যায়নি। মরদেহ উদ্ধার করে রামেক হাসপাতালে রাখা হয়েছে। ময়নাতদন্তের পর মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এ ছাড়া নিহতের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।


যাযাদি/ এসএম