পবিপ্রবির হলগুলোতে নিম্নমানের খাবারে চড়া মূল্য, ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা

প্রকাশ | ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৮:১৯

পবিপ্রবি প্রতিনিধি
ছবি: যায়যায়দিন

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) আবাসিক হলগুলোর ডাইনিংয়ে খাবারের মান ও দামের মধ্যে অসঙ্গতির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, নিম্নমানের খাবার, দামের তুলনায় অপ্রতুল মাছ-মাংস, একই ধরনের সবজি, ডাইনিং পরিচালনাকারীদের অধিক মুনাফার প্রবণতা এবং প্রশাসনের নিয়মিত তদারকির অভাবে দিন দিন হলের খাবারের প্রতি তাদের আগ্রহ কমে যাচ্ছে। প্রতিদিনের দুই বেলার খাবারের জন্য অতিরিক্ত টাকা গুনতে হচ্ছে, যা তাদের দৈনন্দিন জীবনকে আরও কঠিন করে তুলছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য ডাইনিংয়ের খাবার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও তারা বলছেন, খাবারের স্বাদ, মান, পুষ্টিমান ও পরিচ্ছন্নতা আশানুরূপ নয়। অনেকেই খাবারের দাম বেশি হওয়া সত্ত্বেও পর্যাপ্ত কিংবা মানসম্মত খাবার পাচ্ছেন না। ফলে শতকরা ৭০ ভাগ শিক্ষার্থী হলে খাওয়ার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে আশপাশের দোকান বা ব্যক্তিগত রান্নার উপর নির্ভর করছেন, যা ভোগান্তি ও স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াচ্ছে। শিক্ষার্থীরা জানান, হলের ডাইনিংগুলোতে নিম্নমানের চাল ব্যবহার করা হয়, প্রতিদিন একই ধরনের খাবার পরিবেশন করা হয় এবং দুপুর ও রাতের মেন্যু প্রায় একরকম। মাছ-মাংসের পরিমাণও তুলনামূলক কম, পাশাপাশি খাবারের দামও ধীরে ধীরে বাড়ানো হচ্ছে।

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (পবিপ্রবিসাস) বিভিন্ন হলে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানতে পারে যে, ডাইনিং পরিচালনায় একাধিক সমস্যা রয়েছে। বিজয়-২৪ (বঙ্গবন্ধু) হলে শিক্ষার্থীরা জানান, খাবারের মান আগের চেয়ে কিছুটা উন্নত হলেও এখনও অব্যবস্থাপনা ও মূল্যবৃদ্ধির সমস্যা রয়ে গেছে। একজন শিক্ষার্থী বলেন, "আগে মাছের পিস বড় হলেও এখন ছোট করে পরিবেশন করা হয়। ডিম-ভাতের দাম আগে ৩০ টাকা ছিল, এখন ৩৫ টাকা নেওয়া হচ্ছে। লটপটির দাম ৩০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪০ টাকা করা হয়েছে। সামান্য পরিমাণ গুঁড়ো মাছ ও আলুর তরকারি ৪০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে, যা আগে ছিল ৩০ টাকা।" শিক্ষার্থীদের দাবি, মাঝে মাঝে প্রভোস্ট তদারকির সময় খাবারের মান ভালো রাখা হয়, তবে তার পর ধীরে ধীরে মান কমিয়ে ফেলা হয়। একই ধরনের অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য হলগুলোতেও পাওয়া গেছে।

বিজয়-২৪ হলের ৮ম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী মীর মো. নূরুন্নবী বলেন, "উচ্চমূল্য দিয়েও আমরা মানসম্মত খাবার পাই না। অনেক সময় খাবারে দুর্গন্ধ থাকে, তরকারিতে পানির পরিমাণ বেশি থাকে, আর মাছ-মাংসের পরিমাণ অত্যন্ত কম। অথচ আমাদের যে মূল্য পরিশোধ করতে হয়, তা বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর জন্য বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছে। অন্য অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তুকি দেওয়া হয়, যাতে শিক্ষার্থীরা কম খরচে ভালো মানের খাবার পায়। কিন্তু এখানে সেই সুবিধা নেই। দিনে তিনবেলা খেতে প্রায় ১৫০ টাকা লাগে, যা সবার জন্য সম্ভব নয়। আমরা চাই, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো এখানেও স্বল্পমূল্যে মানসম্মত খাবারের ব্যবস্থা করুক।"

বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর হলের শিক্ষার্থী মেহেদী বলেন, "আমাদের হলে ডাইনিং পরিচালনার দায়িত্ব শিক্ষার্থীদেরই দেওয়া হয়। সাধারণত নির্দিষ্ট সময় পর পর নতুনদের দায়িত্ব দেওয়ার কথা থাকলেও প্রভোস্ট তা ঠিকমতো বাস্তবায়ন করেন না। ফলে একই ব্যক্তি মাসের পর মাস ডাইনিং পরিচালনা করে একে লাভজনক ব্যবসায় পরিণত করেছে। দুপুরের খাবার মোটামুটি ঠিক থাকলেও রাতের খাবার নিয়ে শিক্ষার্থীদের বেশি অভিযোগ রয়েছে। অনেক সময় দেখা যায়, ডিম ও সামান্য সবজি দিয়ে ৪৫ টাকা নেওয়া হচ্ছে, যেখানে অন্য হলগুলোতে একই খাবার ৩০-৩৫ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়।"

বিজয়-২৪ হলের ডাইনিংয়ের জুনিয়র সহকারী মনির বলেন, "আমরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো ভর্তুকি পাই না। ভর্তুকি পেলে খাবারের মান আরও উন্নত করা সম্ভব হতো।" খাবারের মূল্যবৃদ্ধি ও শিক্ষার্থীদের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি সন্তোষজনক কোনো উত্তর দিতে পারেননি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের হল প্রভোস্টদের কনভেনর অধ্যাপক ড. মাসুদুর রহমান বলেন, "আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রতিটি খাবারের মূল্য ৫ টাকা করে কমিয়েছি এবং মান বাড়ানোর চেষ্টা করেছি। নিয়মিত তদারকি করা হয়, তবে মাঝেমধ্যে কিছু অসঙ্গতি থাকতে পারে। শিক্ষার্থীদেরও উচিত ডাইনিং পরিচালনাকারীদের ওপর নজর রাখা।" ভর্তুকি বিষয়ে তিনি বলেন, "আমরা ডাইনিং পরিচালনার জন্য অতিরিক্ত কর্মচারীদের বেতন, ডাইনিং ভাড়া, পানি, বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদান করছি।"

শিক্ষার্থীরা বলছেন, কেবল আশ্বাস নয়, তারা বাস্তব পরিবর্তন দেখতে চান। তারা চান, খাবারের মান উন্নত হোক এবং দাম যেন যুক্তিসঙ্গত রাখা হয়। প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে তারা ডাইনিং সমস্যার সমাধান আশা করছেন, যাতে হলে থাকা ও খাওয়া নির্বিঘ্নে চালিয়ে যেতে পারেন।

যাযাদি/ এমএস