৩৫ বছরে পদার্পণ শাবির, বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে শিক্ষকদের ভাবনা-প্রত্যাশা

প্রকাশ | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:২৬

মাহাবুবুর রহমান, শাবি
ছবিতে বা থেকে ড. ইকবাল, ড. আশরাফ, ড.খায়রুল, রাজিক মিয়া

৩৪ পেরিয়ে ৩৫ বসন্তে পদার্পণ করেছে দেশের প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবি)। অনেক প্রথমের প্রথম শাবি আজ দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে বহিবির্শ্বে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় সুনাম অর্জন করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে শিক্ষকদের ভাবনা-প্রত্যাশা নিয়ে লিখেছেন যায়যায়দিনের শাবি প্রতিনিধি মাহাবুবুর রহমান। 

ইন্ডাস্ট্রিয়াল এন্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সিনিয়র অধ্যাপক ড. ইঞ্জিনিয়ার মোহম্মদ ইকবাল বলেন, ”প্রতিষ্ঠার কয়েক বছর পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে আমার পথচলা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝুলিতে যুক্ত হয়েছে নানা অর্জন ও ক্ষ্যাতি। এখানকার শিক্ষকেরা প্রায় সবাই বিশ্বের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে ফিরে এসেছে শাবির টানে। অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থী দেশে ও দেশের বাহিরে পুরষ্কৃত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়েছে অনন্য উচ্চতায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রতি আমার প্রত্যাশা অনেক বেশি। শিক্ষার্থীরা স্নাতক পর্যায়ে গবেষণামুখী হোক। প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকার জন্য নিজেকে স্কিলড করে গড়ে তুলতে হবে। এজন্য শিক্ষার্থীদের কমিউনিকেশন স্কিল, ভাষার দক্ষতা (ইংরেজি, চাইনিজ) ও কম্পিউটার ল্যাংগুয়েজ (পাইথন) শেখা জরুরি। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি প্রত্যাশা থাকবে আধুনিক গবেষণাগার স্থাপন করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের গবেষণায় আগ্রহী করে তুলবে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের র‌্যাংকিং উন্নয়নে আর্ন্তজাতিক শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।” 

গণিত বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মো আশরাফ উদ্দীন বলেন, ”শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আজ ৩৫ বছরে পদার্পণ করেছে। ব্যক্তিগতভাবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আমারও ত্রিশ বছরের কর্মজীবন পূর্ণ হতে যাচ্ছে। শূন্য থেকে শুরু করে শিক্ষকদের কঠোর পরিশ্রম আর শিক্ষার্থীদের ভালোবাসায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি দেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ হিসেবে ইতিমধ্যেই পরিচিতি পেয়েছে। এখান থেকে শিক্ষা সম্পন্ন করা গ্রাজুয়েটরা দেশ-বিদেশের নানান কর্মক্ষেত্রে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছেন। বিশ্বমানের এই বিশ্ববিদ্যালয়টিকে বর্তমান অবস্থায় উন্নীত করতে যাদের অবদান রয়েছে তাদের প্রতি আমার অফুরন্ত সম্মান ও শ্রদ্ধা। সামনের দিনগুলোতে অনাগত শিক্ষার্থীদের কাছে তাদের পড়াশুনার জন্য এটি হবে প্রথম পছন্দ সেই প্রত্যাশা রইল। আমাদের এই প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়টি শিক্ষা ও গবেষণা আর মেধাবীদের পদচারণায় ভরপুর থাকবে সেই কামনা করি।”

ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. খায়রুল ইসলাম বলেন, গবেষণা ও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতায় অগ্রণী এই প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। তবে গৌরবময় অতীতের পাশাপাশি সীমাবদ্ধতাও কম নয় পর্যাপ্ত গবেষণা অনুদানের অভাব রয়েছে, আবাসন সংকট কাটেনি, পরিবহন ব্যবস্থা অপ্রতুল, প্রশাসনিক স্বচ্ছতার ও জবাবদিহিতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। তবুও দক্ষ শিক্ষকমণ্ডলী, প্রতিভাবান শিক্ষার্থী এবং প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষার প্রসারে বিশ্ববিদ্যালয়টির সম্ভাবনা বিশাল। সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ানো গেলে শাবিপ্রবি আরও যুগোপযোগী শিক্ষা ও গবেষণার কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে। ৩৫ বছরের এই গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করছি। 

ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ রাজিক মিয়া বলেন, ”নতুন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার পরিবর্তে   বিদ্যমান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর  মান বৃদ্ধির প্রতি বেশি  গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। সার্টিফিকেটধারী গ্রাজুয়েট, কর্মচারী ও কর্মকর্তা তৈরী একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান লক্ষ্য হতে পারেনা। সমাজ, সংস্কৃতি, রাজনীতি,  অর্থনীতি, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি বিষয়ে উচ্চতর গবেষণা করা ও দিকনির্দেশনা দেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান উদ্দেশ্য। বিশ্ববিদ্যালয় কোনো রাজনৈতিক দলের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান  নয়। কোনো  রাজনৈতিক দলের অর্থায়নে বিশ্ববিদ্যালয়  পরিচালিত হয়না, সর্বস্তরের জনগণের অর্থে  বিশ্ববিদ্যালয়  চলে। অতএব ব্যক্তি ও দলের   রাজনৈতিক  এজেন্ডা বহন করা  বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক  সংস্কৃতি হতে পারে না। রাষ্ট্র, জনগণ ও বিশ্বমানবতার  পক্ষে  থাকাই  বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক নৈতিকতা। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ পদ্ধতি আরো স্বচ্ছ  হওয়া প্রয়োজন। সকল  বিশ্ববিদ্যালয়ে  শতভাগ  আবাসিক সুবিধা নিশ্চিত করা উচিত। আবাসিক বৈশিষ্ট্যের সাথে পড়ালেখার মান, জ্ঞান বিনিময়, সামাজিকীকরণ ও বিশ্ববিদ্যালয়সুলভ মেধা ও মানসিকতা  বিকাশের বিষয়গুলো জড়িত।”  

যাযাদি/ এসএম