উপাচার্যের বাসভবনের ফটক ভাংচুর, তোপের মুখে পন্ড সিন্ডিকেট সভা
প্রকাশ | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৬:২৯

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. শূচিতা শরমিনের বিরুদ্ধে আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসন ও পাতানো সিন্ডিকেটের অভিযোগ এনে সিন্ডিকেট সভা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান ও পরবর্তীতে বাসভবনের গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন শিক্ষার্থীরা।
শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুর থেকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে প্রায় দুই ঘণ্টা অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীরা আওয়ামী ফ্যাসিস্ট বিরোধী স্লোগান দেন। পরে বিকাল ৩টা ১৫ মিনিটে তারা উপাচার্যের বাসভবনের গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন।
এসময় শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনে প্রবেশ করে সহকারী প্রক্টর মারুফা আক্তারের সাথে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন । মারুফা আক্তার জানান, সিন্ডিকেট সভা গোপনীয়ভাবে হয় এবং নতুন এজেন্ডা বা ফ্যাসিস্টদের দায়িত্ব দেওয়া হবে না। তিনি আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের প্রস্তাব দেন। তবে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, আগেও বহুবার আলোচনা হয়েছে কিন্তু তাদের ২২ দফা দাবির কোনো প্রতিফলন হয়নি।
তারা পাতানো সিন্ডিকেট ও আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসনের চেষ্টার বিরোধিতা করে এবং প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করেন। পরে উপাচার্যের সাথে কথা বলার সময়সীমা নির্ধারণ করে শিক্ষার্থীরা সাংবাদিক সম্মেলন করে দশ দফা দাবি জানান এবং আন্দোলন সাময়িক স্থগিত রাখেন। তবে ফ্যাসিস্ট ও তাদের দালালদের বিরুদ্ধে রবিবার থেকে কঠোর আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তারা।
এর আগে, সিন্ডিকেট সভাকে কেন্দ্র করে গত বৃহস্পতিবার বিকালে উপাচার্যের বিরুদ্ধে আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসনের অভিযোগ এনে শিক্ষার্থীরা তার বাসভবন ও কার্যালয়ে তালা দেন।
রসায়ন বিভাগের রফিকুল ইসলাম জানান, আমরা দেখতে পাচ্ছি নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের দোসররা ক্যাম্পাসে অবাধে বিচরণ করছে। যারা জুলাইয়ের অভ্যুথানে শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালিয়েছিলো তাদের যথাযথ বিচার নিশ্চিত করতে হবে। উপাচার্যের দায়িত্ব ছিলো ক্যাম্পাসকে ফ্যাসিস্টমুক্ত করা কিন্তু তিনি তা করেননি। এমনকি শিক্ষার্থীদের কোনো চাওয়াই পূরণ করতে পারেননি। বরং উপাচার্য আওয়ামী ফ্যাসিস্টেদের ও তার সহযোগী রেজিস্ট্রারকে বহাল রেখেছে।
বাংলা বিভাগের শহিদুল ইসলাম বলেন, পাতানো সিন্ডিকেট ও আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসন ঠেকাতে আমরা শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছি। আমাদের দশ দফা দাবি মেনে না নিলে ও সঠিক ব্যাখ্যা না দিলে আমরা এক দফা দাবিতে যেতে বাধ্য হবো। আগামি শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা থাকায় রোববার থেকে আমরা কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলবো।
আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে বিকালে আহ্বানকৃত সিন্ডিকেট সভাকে এক নম্বর এজেন্ডার জরুরি সিন্ডিকেট সভা হিসেবে রুপান্তর করা হয়। অনলাইনে সিন্ডিকেট সভার আহ্বান করলে স্বাভাবিক সুযোগ না থাকার কারণ দেখিয়ে উপ-উপাচার্য, ট্রেজারার ও এক সিন্ডিকেট সদস্য সভাটি প্রত্যাখান করেন।
এর আগে ভিসি বিরোধী আন্দোলনে উপাচার্যের বাসভবনে অবস্থান নেওয়ার সময় সিন্ডিকেট সভাতে যোগ দিতে আসেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম রব্বানী, ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মামুন অর রশিদ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র অধ্যাপক ড. মোঃ মুহসিন উদ্দীন।আন্দোলনে উদ্ভূত পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে সেখান থেকে স্থান ত্যাগ করে চলে যান তাঁরা।
এদিকে আন্দোলকারীদের শিবির আখ্যায়িত করায় সমন্বয়কের উপর হামলার ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী মো. ইমরান আল আমিন রসায়ন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। সে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন বলে জানা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ৪ নং গেইটে রাস্তার বিপরীত পাশে এ ঘটনা ঘটে।
ভিডিও ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে এ হামলায় অভিযুক্তদের প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করা গেছে। তারা হলেন- লোক প্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের (ভর্তি শিক্ষাবর্ষ) জাহিদুল ইসলাম ওরফে জাহিদ, কোস্টাল স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী রাকিবুল ইসলাম (রকি) ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সাখাওয়াত।
যাযাদি/ এমএস