পবিপ্রবিতে ইউনিভার্সিটি স্কয়ারে আবারও স্থাপিত হতে যাচ্ছে এফ-৬ যুদ্ধবিমান

প্রকাশ | ২২ মার্চ ২০২৫, ১১:১১

পবিপ্রবি প্রতিনিধি
ছবি: যায়যায়দিন

বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কের ‘ইউনিভার্সিটি’ চত্বরে ২০২১ সালে ভেঙে ফেলা এফ-৬ স্মারক যুদ্ধবিমানটি পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) দিকনির্দেশক হিসেবে পুনরায় স্থাপিত হতে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর বিমান বাহিনী সদর দপ্তর কর্তৃক প্রেরিত পত্রের বরাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. ইকতিয়ার উদ্দিন।

বরিশাল-কুয়াকাটা এবং বরিশাল-বাউফল সড়কের সংযোগস্থলে এফ-৬ মডেলের ‘যুদ্ধবিমান’ নির্দেশনা দেবে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে। এটি এখন বরিশাল-কুয়াকাটা সড়কের মূল আকর্ষণ হিসেবে বিবেচিত হবে।

পবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. কাজী রফিকুল ইসলাম গত বছরে উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই বিমানটি বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কের ‘ইউনিভার্সিটি’ চত্বরে পুনরায় স্থাপনের জন্য সাবেক বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী এবং বাংলাদেশ বিমান বাহিনী কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানান।

উপাচার্যের অনুরোধে এবং সাবেক বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরীর প্রচেষ্টায় গতকাল (২০ মার্চ) বিমান বাহিনী কর্তৃপক্ষ একটি পত্রের মাধ্যমে অকেজো (Phased Out) এফ-৬ বিমান (ক্রমিক নম্বর-৪১২৫) পুনরায় স্থাপনের সিদ্ধান্তের কথা জানান। এ খবর প্রকাশের পর শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে।

২০২১ সালের ৬ মার্চ (শনিবার) সন্ধ্যায় লেবুখালী নদীর ওপর পায়রা সেতুর অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণের সময় মাটি কাটার যন্ত্র (এক্সক্যাভেটর) দিয়ে পায়রা সেতু প্রকল্পের কর্মকর্তারা এফ-৬ স্মারক যুদ্ধবিমানটি ভেঙে ফেলেন। এ ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্থানীয়রা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।

তৎকালীন পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক মতিউল ইসলাম চৌধুরী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জানান, ক্ষতিগ্রস্ত মনুমেন্টটি মেরামত করে পুনরায় স্থাপনের বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তখন লেবুখালী সেতুর প্রকল্প পরিচালক আব্দুল হালিমও জানিয়েছিলেন, পায়রা সেতুর পটুয়াখালী প্রান্তে সড়কের অ্যাপ্রোচ নির্মাণকাজের সময় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া যুদ্ধবিমানটি পরে ঠিক করা হবে। তবে পরবর্তীতে কেউই তাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করেননি।

সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ অনুযায়ী, তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা এবং সেতু কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনার কারণেই যুদ্ধবিমানটি ভেঙে ফেলা হয়।

স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের আকাশসীমার সুরক্ষায় এফ-৬ মডেলের যুদ্ধবিমানগুলো কেনা হয়। অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি এই বিমানগুলোর ইঞ্জিন সাধারণত ভেতরে থাকে, তবে প্রদর্শিত বিমানটিতে ইঞ্জিন নেই। পরবর্তীতে এটি মডেল বিমান হিসেবে রূপান্তর করা হয়। সাবেক বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরীর উদ্যোগে ২০০৩ সালে বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কের ইউনিভার্সিটি স্কয়ারে এটি স্থাপন করা হয়।

যুদ্ধবিমান পুনঃস্থাপন সম্পর্কে পবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. কাজী রফিকুল ইসলাম বলেন, “এই যুদ্ধবিমানটি শুধু একটি স্মারক নয়, এটি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যের অংশ। এটি পুনরায় স্থাপিত হলে ক্যাম্পাসের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ স্থানীয়দের আবেগ ও গর্বের প্রতিফলন ঘটবে। আমরা কর্তৃপক্ষের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞ, যাদের প্রচেষ্টায় এটি আবারও আমাদের গৌরবময় ক্যাম্পাসের অংশ হতে যাচ্ছে।”

যাযাদি/ এসএম