ববিতে আটমাসেও শেষ হয়নি অর্থবছরের ২০ শতাংশ কাজ
প্রকাশ | ২৪ মার্চ ২০২৫, ১৭:১৭

চলতি অর্থবছরের আটমাস পেরিয়ে গেলেও মোট বরাদ্দের ২০ শতাংশ কাজও শেষ করতে পারেনি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বাকি ৮০ শতাংশ কাজ এখনো শুরুই করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়। জানাগেছে অর্থবছরের বাকি তিনমাসেই তড়িঘড়ি করে শেষ করা হবে অবশিষ্ট কাজ কাজ।
জানা গেছে, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১৭টি কাজ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যার মধ্য হাতে গোনা কয়েকটি কাজ শেষ করা হয়েছে। আর বাকি সব কাজ জুন মাসের আগে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের মধ্যে তড়িঘড়ি করে শেষ করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থ ও হিসাব পরিচালক এবং ইঞ্জিনিয়ারিং দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দপ্তর দুটির কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, ইতিমধ্যে তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চের ২০ তারিখ পর্যন্ত এই দেড়মাসে টেন্ডার হয়েছে প্রায় ১০ টি। যার সব কাজ শুরু হবে ইদুল ফিতরের ছুটির মধ্যই। এরপরে ইদুল আজহার ছুটির মধ্যে বাকি কাজ করা হবে। যদিও বন্ধের মধ্যে কাজ করানো নিয়ে খোদ প্রকৌশল শাখার একাধিক কর্মকর্তার আপত্তি রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-প্রধান প্রকৌশলি মুরশিদ আবেদীন জানান, আপত্তি থাকলে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের মধ্যে কোন কাজ তারা করবেন না।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছরও কাজ এমন দেরিতে করায় আর্থিক বিষয় নিয়ে বড় ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হয়। বিশ্ববিদ্যালয় কাজ জুনের মধ্য শেষ করতে না পারলে টাকা ফিরে যাবে ইউজিসিতে। এজন্য টাকা আগেই উত্তোলন করে রাখা হয়। পরবর্তীতে কাজ শেষ হওয়ার পর ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলোকে টাকা বুঝিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু কাজ শেষ হওয়ার আগেই টাকা উত্তোলনের কোন নিয়ম নেই। প্রকৌশল দপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, আমাদের এবার কাজ শুরু করতে এতো দেরি হতো না। সবকিছু আগে থেকে প্রস্তুত করে রেখেছিলাম।
উপাচার্য আসার পর আমরা তাকে কাজের বিষয়ে বললে প্রথমে তিনি ই-টেন্ডার করার জন্য বলেন। কিন্তু ই-টেন্ডার করলে কাজ করতে দেরি হবে ও অহেতুক ভোগান্তি বাড়বে বলে উপাচার্য চাইলেও এর বিরোধীতা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-প্রধান প্রকৌশলী। পরবর্তীতে বিভিন্ন বাস্তবতায় ই-টেন্ডার থেকে পিছিয়ে আসেন উপাচার্য। এখন সেই পুরাতন আমলের ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে টেন্ডার করে কাজ করানো হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে ই-টেন্ডার পদ্ধতিতে পছন্দের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দিতে পারবেন না বলেই এর বিরোধীতা করেছে প্রকৌশল দপ্তর।
১৭ টি কাজের মধ্য রয়েছে, ৪টি হলের ওযুখানা ১২ লাখ টাকা, তাপশি রাবেয়া বসরি হলের ড্রেন মেরামত ২৫ লাখ, খেলার মাঠ সংস্কার ১৫ লাখ, আনসার সেড ৩৫ লাখ, বঙ্গবন্ধু ও শেরে বাংলা হলের মধ্যবর্তি স্থানে বালু ভরাট ৬ লাখ, ফ্লাগ স্টান্ড হতে মসজিদে যাওয়ার রাস্তা নির্মাণ ১০ লাখ, ৪ হলে পানির ট্যাংক বসানো ২৬ লাখ, গেস্ট হাউজের জন্য ৬টি গ্রিজার ক্রয় ৫০ হাজার, লাইব্রেরি বই ক্রয় বাবদ ৫০ লাখ, এছাড়াও বিভিন্ন বিভাগের জন্য বাজেট বরাদ্দ রয়েছে।
এই কাজগুলোর মধ্য মাত্র দুটি ছাত্রহলের ওযুখানার কাজ চলমান রয়েছে। বাকি কাজগুলো এখনো শুরু করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে কাজ চলমান রয়েছে মাঠ সংস্কারের ও আনসার সেড নির্মাণের। রাস্তা নির্মানের কাজ পেয়েছে আয়ান এন্টারপ্রাইজ এবং ছাত্রী হলের ড্রেন মেরামতের কাজ পেয়েছে আমেনা কনস্ট্রাকশন। জানা গেছে, প্রতিষ্ঠান দুটিই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-প্রধান প্রকৌশলী মুরশিদ আবেদীনের আস্থাভাজন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ কাজই এই দুটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানই পায়। অভিযোগ রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন লাইসেন্স ব্যবহার করে একই লোক কাজ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল্যায়ন কমিটি একই লোক কাজ পাচ্ছে বিষয়টি মানতে রাজি নন।
এর মধ্যে আমেনা কনস্ট্রাকশনের বিরুদ্ধে নি¤œমানের কাজ করার অভিযোগ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নান্বার গেটের রাস্তার কাজ করার সময় নি¤œমানের ইট ব্যবহারের অভিযোগ তুলেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে ইট পরিবর্তন করতে বাধ্য হন ঐ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
এতো অভিযোগ থাকার পরও শুধুমাত্র উপ-প্রধান প্রকৌশলী মুরশিদ আবেদীনের আস্থাভাজন হওয়ায় একই প্রতিষ্ঠন ঘুরে ফিরে কাজ পাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন কয়েকটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মালিক বলেন, আমরা কাজ করতে চাই ভালো করে কিন্তু আমাদেরকে কাজ দেওয়া হয় না। এখানে সবকিছু একহাতে নিয়ন্ত্রণ করেন মুরশিদ আবেদীন। উনার সাথে যার সম্পর্ক ভালো সে নিয়মিত কাজ পায়, কাজের মান ভালো হোক আর খারাপ হোক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-প্রধান প্রকৌশলী মুরশিদ আবেদীন বলেন, আমাদের বেশকিছু কাজ চলমান রয়েছে। কিছু কাজ সামনে শুরু হবে আশা করছি জুনের মধ্য সব কাজ আমরা শেষ করতে পারব। আট মাসেও কেন ২০ শতাংশ কাজ শেষ করতে পারেননি এমন প্রশ্নে বলেন, বিভিন্ন বাস্তবতায় এবার একটু পিছিয়ে গেছে। আন্দোলন হলো, তারপর উপাচার্য নতুন আসলেন, তাদের কাছে ফাইল প্রস্তুত করে দেওয়া আবার উনারা অনুমোদন দিলে তারপর কাজ শুরু করতে হয়েছে। এখন সব প্রসিডিওর শেষ, দ্রæতই কাজ শেষ করা হবে। কাজের নি¤œমানের বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ দপ্তরের উপ-পরিচালক সুব্রত কুমার বাহাদুর বলেন, আমাদের এখানে একটা সংস্কৃতি হয়ে গেছে কাজ দেরিতে করার। সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরকে বলেছি এজন্য জুনের মধ্যই কাজ শেষ করে বিল দেওয়ার জন্য। কাজ জুনের মধ্য শেষ না করলে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হয় টাকা ফেরত চলে যাওয়ার সম্ভাবনাও তৈরি হয় বলে জানান তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মো. মামুন অর রশিদ বলেন, উপাচার্য দপ্তরে ফাইল স্বাক্ষরে দীর্ঘসূত্রতা হওয়ায় এমনটা হয়েছে। আমি কাজ দ্রæত শেষ করার জন্য বলেছি যেন পরবর্তীতে কোন বাজেট পেতে আমাদের সমস্যা না হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিনের কাছে এবিষয়ে জানার জন্য একাধিকবার কল করলেও তিনি সাড়া দেননি। এবং উপাচার্যের অফিসে যোগাযোগ করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
যাযাদি/ এম