৪ বছর পর কমিটি পাচ্ছে বেরোবি ছাত্রদল, নেতৃত্বে আসছেন নিয়মিত ছাত্ররা
প্রকাশ | ১৭ মে ২০২৫, ১৬:৫১

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) দীর্ঘ নয় বছর পর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি হতে যাচ্ছে, এতে প্রাণ চাঞ্চল্যতা ফিরেছে নেতা কর্মীদের মাঝে।
কমিটি ঘোষণার খবরে সাধারণ শিক্ষার্থীরাও ছাত্রদলে যোগ দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতা কর্মীদের সাথে যোগাযোগ করছেন বলে একাধিক নেতা এ প্রতিবেদককে জানায়। এরই মধ্যে বেশিরভাগ বিভাগ থেকে ছাত্রদলের যোগ দিতে ইচ্ছুক নেতা কর্মীদের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
গত ১১ ই মে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি এম এম মুসা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সালেহ মো. আদনান ও তাইজুল ইসলামকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা করে নতুন কমিটি গঠনের লক্ষ্যে দায়িত্ব প্রদান করা হয়।
দায়িত্ব পেয়েই তিন সদস্য বিশিষ্ট এই কমিটি ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকটি বিভাগের সাধারণ শিক্ষার্থী, বর্তমান নেতৃবৃন্দ ও পদ প্রত্যাশী শিক্ষার্থীদের সাথে দফায় দফায় মিটিং করেন। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের বর্তমান নেতৃত্ব আশা করছেন দ্রুতই তারা নিয়মিত শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিবেন।
বর্তমান কমিটির প্রায় সব সদস্যের ছাত্রত্ব না থাকায় অনেকেই ক্যাম্পাস ছেড়ে দেওয়ায় সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। শিক্ষার্থীরা মনে করেন নিয়মিত ছাত্রদের হাতে নেতৃত্ব আসলে সাংগঠনিক কার্যক্রম আরো জোরদার হবে।
এছাড়াও গুঞ্জন রয়েছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরেই এ বিশ্ববিদ্যালয় এবং রংপুরে সফর করবেন। সেই লক্ষ্যে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।
কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে শিক্ষার্থীদের সভার একাধিক সূত্রে জানা যায়, নতুন কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে আসতে পারেন লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী জহির রায়হান,রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. ইয়ামিন, মার্কেটিং বিভাগের সজিব গাজী এবং মুরসালিন মুন্না,মাইদুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন।
তবে দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, ক্যাম্পাসে যাদের সমর্থন বেশি থাকবে, নিয়মিত শিক্ষার্থী এবং নির্যাতিত শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকেই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব দেওয়া হবে।
জানা যায়, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য একাধিক নেতা দৌড়ঝাঁপ করছেন। এর মধ্যে জনপ্রিয়তা ও সাধারণ ছাত্রদের জন্য কাজ করে আলোচিত হয়েছেন লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী জহির রায়হান ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মো. ইয়ামিন।
ছাত্রদল নেতা জহির রায়হান পথচারী ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মাঝে টানা তিন দিন ইফতার বিতরণ করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে আলোচনায় আসেন। তার ইফতার বিতরণ কর্মসূচির সংবাদ কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের ভেরিফাইড ফেইসবুক পেইজেও শেয়ার করতে দেখা যায়। এছাড়া, এ নেতা ছাত্রলীগের হাতে বিভিন্ন সময় নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলেও জানা যায়। কোটা বিরোধী আন্দোলনেও সক্রিয় ভূমিকা রাখেন জহির।ছাত্রদলের রাজনীতিতে যুক্ত থাকায় জহিরকে আবাসিক হলে উঠতেও বাধা দেয় ছাত্রলীগ।
অন্যদিকে, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ইয়ামিন সহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী ২০২৩ সালে ইফতার কর্মসূচি পালনের সময় ছাত্রলীগের হাতে মারধরের শিকার হন। ছাত্রদলের সাথে সংশ্লিষ্টতার কারণে হল থেকেও বিতাড়িত হন ইয়ামিন। এছাড়া কোটা বিরোধী আন্দোলনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন ইয়ামিন।
কোটা আন্দোলনের সময় গ্রেপ্তার ও পুলিশি হয়রানির শিকার হন ছাত্রদল নেতা সজিব গাজী। সেই সময় মামলার আসামীও হন তিনি। পরবর্তীতে জামিন পান। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির পূর্বে তিনি নিজ এলাকায় ছাত্র রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন।
এ বিষয়ে সজিব গাজী জানান, আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি হই তখন থেকে ছাত্রদল আহ্বায়ক আল আমিন ভাইয়ের সাথে নিয়মিত প্রোগ্রাম করি। সেই সময় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের নানান হুমকি ধামকি খেয়েছি। ফেইসবুকে লেখার কারণে আমাকে মারারও হুমকি দেয় ছাত্রলীগ, এরপর কোটা আন্দোলনসহ কেন্দ্রীয় অনেক আন্দোলনে সক্রিয় ছিলাম।
কোটা আন্দোলনের পর থেকে ক্যাম্পাসে সক্রিয় হতে দেখা যায় ছাত্রদল নেতা রাকিব, সিয়ামসহ অনেককে। এরাও গুরুত্বপূর্ণ পদে আসতে পারেন বলে জানা যায়।
যোগাযোগ করা হলে ছাত্রদল নেতা জহির রায়হান বলেন, আমি স্কুল জীবন থেকে ছাত্রদলের রাজনীতি করে আসছি। আমি স্কুলে পড়াকালীন সময়ে রংপুর মহানগরের রাজনীতি করেছি। এরপর কলেজে এসেছে কারমাইকেলে রাজনীতি করেছি। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে এখানেও রাজনীতিতে যুক্ত হই। এই রাজনীতি করতে গিয়ে পুলিশের বিভিন্ন হয়রানির শিকার হয়েছি। অনেক সময় গেছে বাড়িতে থাকতে পারিনি। আমার বিশ্বাস কেন্দ্রীয় ছাত্রদল ত্যাগীদের মূল্যায়ন করবে।
যোগাযোগ করা হলে ছাত্রদল নেতা মাইদুল ইসলাম বলেন, আমার প্রত্যাশা থাকবে ত্যাগীদের যাতে মূল্যায়ন করা হয়। নতুন কমিটির সদস্যরা যাতে ছাত্রলীগের মত না হয়। রাজনীতিতে যাতে পরিবর্তন আসে।
আরেক ছাত্রদল নেতা মুরসালিন মুন্না বলেন, আমি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে মাস্টার্স করতে পারিনি। জুলাই অভ্যুত্থানের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ও সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২তম ব্যাচের সাথে আমি রেগুলার মাস্টার্সে ভর্তি হওয়ায় সুযোগ পাই। আমিও চাই ত্যাগীদের যাতে মূল্যায়ন করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড.ফেরদৌস রহমান বলেন, তাদের তো আগে ক্যাম্পাসের স্টোক হোল্ডারদের সাথে বসতে হবে। ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি বুঝতে হবে। আমাদের সাথে বসলে আমরা ক্যাম্পাসের পরিবেশ তুলে ধরবো। সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত ভঙ্গ হবে এমন কাজ না করার আহ্বান জানাবো তাদের।
এ ব্যাপারে কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত ছাত্রদল যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম খান বলেন, নতুন কমিটির যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া চলছে। খুব দ্রুত কমিটি প্রকাশ করা হবে। কমিটিতে অবশ্যই নিয়মিত শিক্ষার্থীরা স্থান পাবে।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ১৩ অক্টোবর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। গণিত বিভাগের ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষের সাইফুল ইসলাম লিমনকে সভাপতি ও ইংরেজি বিভাগের ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের ইমরান খান শ্রাবণকে সাধারণ সম্পাদক করে দুই বছরের জন্য ১২ সদস্যের ওই কমিটির অনুমোদন দিয়েছিল কেন্দ্র। এরপর ২০২১ সালে দীর্ঘ পাঁচ বছর পর বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ১১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। সেই কমিটিতে ইংরেজি বিভাগের ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের সাবেক শিক্ষার্থী আল ইসলামকে আহ্বায়ক ও রসায়ন বিভাগের একই শিক্ষাবর্ষের রাশেদ মন্ডলকে সদস্য সচিব করা হয়েছিল।