সমালোচনার ঝড়

পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের ‘সুচিত্রা সেন’ ছাত্রীনিবাসের নাম পরিবর্তন

প্রকাশ | ২২ মে ২০২৫, ১৪:১০

পাবনা প্রতিনিধি
ছাত্রীহলের নাম পরিবর্তন। ছবি: যায়যায়দিন

পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের তিনটি আবাসিক হলের নাম পরিবর্তন করা নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর চলছে সমালোচনার ঝড়।

বিশেষ করে সুচিত্রা সেনের নাম বাদ দিয়ে নতুন করে ‌‌'জুলাই ৩৬ ছাত্রীনিবাস' নামকরণ করা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেতিবাচক মন্তব্য করছেন অনেকেই।

পাবনার সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোও এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ পাবনার সাধারণ সম্পাদক ড. নরেশ মধু বলেন, ‌'এটি কোনো রাজনৈতিক ইস্যু নয়। সুচিত্রা সেন এই উপমহাদেশের একজন প্রখ্যাত অভিনেত্রী এবং পাবনাবাসীর গর্ব। তিনি যেহেতু সকল ধরণের রাজনীতির উর্ধ্বে, সেহেতু তার নামে করা হলের নাম পরিবর্তন করার কোনো প্রয়োজন নেই। এটি পাবনাবাসীর জন্য লজ্জাজনক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বিরুপ প্রভাব পড়বে। আমরা চাই ওই ছাত্রীনিবাসের নাম সুচিত্রা সেনের নামে পুনরায় বহাল করা হোক।'

জেলার অন্যতম সাংস্কৃতিক সংগঠন পাবনা ড্রামা সার্কেলের সাবেক সভাপতি ও আমেরিকা প্রবাসী সাংস্কৃতিক সংগঠক গোপাল সান্যাল তাঁর ফেসবুক পেজে প্রতিক্রিয়ায় লিখেছেন, ‘পাবনা এডওয়ার্ড কলেজের সুচিত্রা সেন ছাত্রীনিবাস–এর নাম পাল্টে দেওয়ার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। পাবনার সংস্কৃতিপ্রেমী জনতা এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করবে বলে আমার বিশ্বাস।’

পাবনার একুশে বইমেলা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ও সুচিত্রা সেন চলচ্চিত্র সংসদ পাবনার সভাপতি জাকির হোসেন বলেন, 'শিল্প-সংস্কৃতি ও ইতিহাসকে ভিত্তি করেই এই ছাত্রীনিবাসের নাম রাখা হয়। সাংস্কৃতিক অঙ্গনের নাম বাদ দিয়ে সেখানে অন্য একজনের নামে নামকরণ করা এটা খুবই গর্হিত কাজ। এটা শিল্প সংস্কৃতিকে অপমান করা হয় বলে মনে করি।'
 
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ আব্দুল আউয়াল মিয়া'র।

তিনি নমাকরণের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেন, 'প্রথমে যখন নামকরণ করা হয়, তখন একাডেমিক কাউন্সিলের অধিকাংশ সদস্য এই নামকরণের (সুচিত্রা সেন ছাত্রীনিবাস) পক্ষে ছিলেন না। তখনকার অধ্যক্ষ মহোদয় বলেছিলেন যে, এটা পার্শ্ববর্তী একটি দেশের কূটনীতির চাপে করতে হচ্ছে। এইটা তৎকালীন একটা পলিটিক্যাল গ্রুপ তারা তখনকার প্রেসার গ্রুপ ছিল, তারা তাদের পলিটিক্যাল টার্গেটে এই নামটা ঢুকিয়েছিল এডওয়ার্ড কলেজের মধ্যে।'

অধ্যক্ষ আরো বলেন, 'বাংলাদেশের কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আজ পর্যন্ত ছাত্রাবাস, ছাত্রীবাস, হল, কোনো নায়িকার নামে নাই। সুচিত্রা সেন আমাদের দেশের নাগরিকও নয়। কেন এডওয়ার্ড কলেজের ছাত্রীদের হল এ তার নাম আসতে হলো-এই নিয়ে তখনকার কলেজের একাডেমিক কাউন্সিলে তীব্র প্রতিবাদ করা হয়েছিল। কিন্তু তাদের সেই প্রতিবাদ সেদিন টেকে নাই। অধ্যক্ষ মহোদয় তখন চাপে পড়ে এই নামকরণ (সুচিত্রা সেন ছাত্রী নিবাস) প্রস্তাব করেছিলেন বলে তিনি তখন জানিয়েছিলেন।'

অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ আব্দুল আউয়াল মিয়া বলেন, 'এবার যখন সুযোগ পেয়েছে একাডেমিক কাউন্সিল, তখন তখন তারা প্রস্তাব করে বলেছে ওই সময় আমাদের চাহিদাটা পূরণ করতে পারিনি। এখন নতুন প্রশাসনের কাছে, নতুন বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে আমরা এ দাবি করছি যে এই নামটা আমরা পরিবর্তন চাই। তখন সকল শিক্ষকের, একাডেমিক কাউন্সিলের সকল সদস্যের ঐক্যমতের ভিত্তিতে এই নামটা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ নিয়ে পরবর্তী সভায় এই নতুন নামটা (জুলাই ৩৬ ছাত্রীনিবাস) প্রস্তাব হয় এবং সবাই একমত হয়।'

তিনি বলেন, 'এখানে যারা স্টেকহোল্ডার তাদের সম্মতি নিয়ে, ছাত্র সংগঠনের সম্মতি নিয়ে, ছাত্রদের দাবির প্রেক্ষিতে এবং হল এর আবাসিক ছাত্রীদের সাথে কথা বলে তাদের সম্মতির ভিত্তিতে এই নতুন নামকরণ করা হয়েছে। এখন যারা সাংস্কৃতিক সংগঠনের নামে ভিন্ন কথা বলছেন, তাদের একটি নির্দিষ্ট বলয়ের চিন্তাভাবনারই প্রতিফলন আমরা দেখতে পাচ্ছি।'

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের তিনটি আবাসিক হল এর নাম পরিবর্তন করা হয়। কলেজের শেখ রাসেল ছাত্রাবাসের পরিবর্তিত নাম 'বিজয় ২৪ হল', বেগম ফজিলাতুন্নেছা ছাত্রীনিবাস এর পরিবর্তিত নাম 'আয়েশা সিদ্দিকা (রা:) ছাত্রীনিবাস' এবং সুচিত্রা সেন ছাত্রীনিবাস এর পরিবর্তিত নাম 'জুলাই ৩৬ ছাত্রীনিবাস' নামকরণ করা হয়।

মঙ্গলবার (২০ মে) দুপুরে পরিবর্তিত নতুন নামফলক উন্মোচন করেন কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ আব্দুল আউয়াল মিয়া। এ সময় কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর মোহা. আব্দুল খালেক, শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক প্রফেসর লুৎফর রহমান, যুগ্ম সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, বিভিন্ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, হল সুপার, সহকারী সুপার এবং ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

নামফলক উন্মোচন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংশ্লিষ্ট হলসমূহের হল সুপারগণ। সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন নামফলক তৈরি ও উদ্বোধন কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর মোঃ আবদুল্লাহ আল মামুন।