রোডম্যাপ অনুযায়ী কাজ হচ্ছে না, রাকসু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা
প্রকাশ | ২২ মে ২০২৫, ২০:০৯

গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ঘোষিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনের রোডম্যাপ অনুযায়ী আগামী জুন মাসে ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার কথা। এর মাঝে নির্বাচন কমিশন গঠন করলেও রোডম্যাপ অনুযায়ী কাজের কোনো অগ্রগতি মিলছে না।
ইতোমধ্যে সাধারণ শিক্ষার্থীরা এ নির্বাচন নিয়ে দফায় দফায় মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। এককথায় রাকসু নির্বাচন নিয়ে নীরব ভূমিকায় হাঁটছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
প্রণীত রোডম্যাপ অনুযায়ী, জুন মাসের তৃতীয় থেকে চতুর্থ সপ্তাহে নির্বাচনের ভোটগ্রহণ প্রস্তুতি নিয়ে ২৮ এপ্রিল খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ, ৩০ এপ্রিল ভোটার তালিকা সম্পর্কে আপত্তি গ্রহণ, এরপর ১৩ মে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ। ১৫ মে মনোনয়নপত্র বিতরণ এবং দাখিলের শেষ তারিখ ১৯ মে। এরপর ২০ মে মনোনয়নপত্র নিরীক্ষা ও বাছাই করা হবে এবং ২২ মে প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ হওয়ার কথা থাকলেও নির্বাচন নিয়ে অগ্রগতি নেই।
গত ১৬ এপ্রিল ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক মো. আমজাদ হোসেনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও ৬ জনকে নির্বাচন কমিশনার করে রাকসু ও সিনেট ছাত্রপ্রতিনিধি নির্বাচন ২০২৫-২৬-এর নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। তবে কমিশন গঠনের একমাস পার হলেও গঠনতন্ত্র তৈরি ছাড়া উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতির দেখা মেলেনি।
এ বিষয়ে স্টুডেন্ট রাইটস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মেহেদী সজীব বলেন, রাকসু আমাদের জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের ৯ দফার অন্যতম একটি দাবি। প্রথমদিকে রাকসু নির্বাচন নিয়ে প্রশাসনের যে পরিমাণ তৎপরতা লক্ষ করেছি, নির্বাচন কমিটি গঠন করার পর তৎপরতা ততটাই কম লক্ষ করছি।
গত মাসে রাকসু নির্বাচন কমিশন গঠন করার কথা থাকলেও তারা এখনও একটি ফর্মাল মিটিং করতে পারেনি। এর চেয়ে অথর্ব কমিটি আর কী হতে পারে? আমরা ধারাবাহিক আন্দোলনে ফিরে যাব যতদিন না পর্যন্ত রাকসু বাস্তবায়ন হচ্ছে।
এ বিষয়ে শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মুক্তবাকচর্চা ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিতের জন্য ছাত্র সংসদ নির্বাচন দরকার। রাকসু নির্বাচন নিয়ে আমরা শিক্ষার্থীদের মাঝে আগ্রহ ও আশাব্যঞ্জক আচরণ লক্ষ করছি। এছাড়া ছাত্র সংগঠনগুলোও নির্বাচনের জন্য সরব রয়েছে, আন্দোলনও করছে। কিন্তুু দুঃখজনকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্রদের এই ন্যায্য দাবিকে অবমূল্যায়ন করছে।
"জুলাই বিপ্লবের নয় দফার মধ্যে অন্যতম একটা দাবি ছিল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংসদগুলো চালু থাকবে। ছাত্র সংসদগুলো শিক্ষার্থীদের দাবি আদায়ের জন্য একটি ন্যায্য প্ল্যাটফরম। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবিগুলো তুলে ধরা হবে।"
এসময় তিনি আরো বলেন, রাকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করতে মৌলিক সংশোধনের যে কাজগুলো করা দরকার যার বৃহৎ অংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন করতে পারিনি। এ কাজগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যেই সমাধান করে এবং যথাসময়ে নির্বাচনের প্রত্যাশা করছি। এর যদি ব্যত্যয় ঘটে দীর্ঘসূত্রতা বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য নির্বাচনকে পিছিয়ে দেওয়া হয় তাহলে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে কঠোর আন্দোলন যেতে বাধ্য হব।"
শাখা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের আহ্বায়ক সুলতান আহমেদ রাহী বলেন, "আমরা চাই অনতিবিলম্বে রাকসু নির্বাচন বাস্তবায়ন হোক। তবে এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে নিশ্চিত করতে হবে তিনি কোনো গুপ্ত সংগঠনের ভিসি নন; বরং সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভিসি ও অভিভাবক এটা অর্জন করতে হবে। নির্বাচনের তফসিল যতদ্রুত সম্ভবত ঘোষণা করুক আমরা ছাত্রদল সে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মো. আমজাদ হোসেন বলেন, রোডম্যাপ অনুযায়ী নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব হচ্ছে না হওয়ার অনেকগুলো কারণ রয়েছে। তবে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্টদের নিয়ে বসব; সেখানে অন্যান্য স্টেক হোল্ডাররাও থাকবে। তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে নির্বাচনের আচরণবিধি ও নির্বাচনের নির্ধারিত তারিখ ঘোষণা করব।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, আমরা তাদের একটা রোডম্যাপ ধরিয়ে দিয়েছি। সেটাকে সামনে রেখেই তারা কাজ করবেন এবং নির্বাচনের তফসিলের দিকে যাবেন।
জুনে নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব হবে কি না এ বিষয়ে তিনি বলেন, এটা নির্বাচন কমিশন বলতে পারবে।