ঢাকায় শেষ হলো বিতর্কের গ্র্যান্ড স্লাম ‘বিডিএফ ডায়ালজিক’

প্রকাশ | ২৪ মে ২০২৫, ১৯:২৯ | আপডেট: ২৪ মে ২০২৫, ১৯:৫৪

যাযাদি ডেস্ক
ছবি: যায়যায়দিন

বাংলাদেশ ডিবেট ফেডারেশন (বিডিএফ) আজ শনিবার (২৪ মে) ঢাকায় এক বর্ণিল পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিডিএফ ডায়ালজিক ২০২৫ – স্কুল-কলেজ অধ্যায়-এর সফল সমাপ্তি ঘোষণা করেছে। দুই দিনব্যাপী এই যাত্রায় দেশের ৪০টি স্কুল ও কলেজের শ্রেষ্ঠ তরুণ বিতার্কিকরা যুক্তি, সংলাপ এবং বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার এক অনন্য উৎসবে অংশগ্রহণ করেন।

ঢাকায় অনুষ্ঠিত সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিডিএফ-এর সভাপতি প্লাবন গঙ্গোপাধ্যায়, স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. মনিরুজ্জামান, এবং বিডিএফ-এর সাধারণ সম্পাদক জিহাদ আল মেহেদী। অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের সংবর্ধনা প্রদান, এবং যৌক্তিক প্রতিক্রিয়া ও তরুণদের নেতৃত্বে যুক্তিনির্ভর সংলাপকে আরও বিস্তৃত করার প্রতিশ্রুতির মধ্য দিয়ে এই আয়োজন শেষ হয়।

এ বছরের প্রতিযোগিতায় একাধিক ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন শিরোপা প্রদান করা হয়েছে। ওপেন ক্যাটাগরিতে, ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ চ্যাম্পিয়ন এবং আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ রানার্সআপ হয় — তাদের দলগত সমন্বয় এবং গভীর বিশ্লেষণী চিন্তা প্রতিপক্ষ ও বিচারকদের মুগ্ধ করে। অপরদিকে, স্কুল ক্যাটাগরিতে, ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ চ্যাম্পিয়ন এবং মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ রানার্সআপ হয়ে আবারও প্রমাণ করেছে যে তারা ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব গঠনে বিতর্ককে শক্তি হিসেবে গ্রহণ করেছে।

বিতর্কের বিকেন্দ্রীকরণ এবং নতুন কণ্ঠস্বরকে এগিয়ে নিতে বিডিএফ-এর অন্তর্ভুক্তিমূলক লক্ষ্যের বাস্তবায়নে এবছরের ডায়ালজিকে নবিশ ক্যাটাগরিতে বিশেষ আয়োজন করা হয়। নবিশ ক্যাটাগরিটি নতুন ও উদীয়মান দলগুলোকে জাতীয় পর্যায়ে মেধা প্রদর্শনের সুযোগ করে দেওয়ার লক্ষ্যে চালু করা হয় — যেখানে ফরিদপুর জিলা স্কুল চ্যাম্পিয়ন হয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। ফাইনালে তারা রাজউক উত্তরা মডেল কলেজকে পরাজিত করে এই গৌরব অর্জন করে। এই ক্যাটাগরিতে টুর্নামেন্টের শ্রেষ্ঠবক্তা হন সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজের মুশফিকুর রহমান সিফাত।

অনুষ্ঠানে প্লাবন গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “ডায়ালজিক কেবল একটি প্রতিযোগিতা নয়, এটি একটি আন্দোলন। এটি এমন এক ভবিষ্যৎ নির্মাণের পথ যেখানে তরুণরা কঠিন প্রশ্ন এড়িয়ে যায় না, বরং সম্মান, সাহস ও চিন্তার মাধ্যমে উত্তর দেয় এবং নাগরিক দায়িত্ববোধকে নতুনভাবে আবিষ্কার করে। আমাদের লক্ষ্য শুধু দক্ষ বিতার্কিক তৈরি করা নয়, বরং ভালো মানুষ ও সচেতন নাগরিক গড়ে তোলা — এমন মানুষ, যারা কঠিন প্রশ্ন করতে ভয় পায় না, নৈতিকতা ও যুক্তি দিয়ে নিজের অবস্থান তুলে ধরতে জানে, এবং ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে মন দিয়ে শুনতে পারে। ডায়ালজিকের মঞ্চে আমরা এমন এক প্রজন্ম গড়ে তুলতে চাই, যারা জটিলতার মুখোমুখি হয়ে পালিয়ে যায় না — বরং তা মোকাবিলা করে সাহস, যুক্তি ও নৈতিক বোধ নিয়ে”

প্রফেসর ড. মনিরুজ্জামান বলেন, “পুরো অনুষ্ঠান জুড়ে তরুণদের মধ্যে যে বৌদ্ধিক শৃঙ্খলা দেখা গেছে তা অনন্য। আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই ধরনের সহশিক্ষা কার্যক্রমে আরও বিনিয়োগ করতে হবে যাতে তরুণদের মধ্যে সমালোচনামূলক চিন্তা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ গড়ে ওঠে।”

জিহাদ আল মেহেদী বলেন, “তরুণদের নেতৃত্বে পরিচালিত উদ্যোগ হিসেবে ডায়ালজিক প্রমাণ করছে যে বিতর্ক কেবল প্রতিযোগিতা নয়, এটি একটি নাগরিক আন্দোলন। এই আয়োজনের প্রতিটি অংশ — সংগঠক থেকে বিচারক পর্যন্ত — নতুন প্রজন্মের চিন্তাশীল নাগরিক গঠনে অবদান রাখছে।”

এই বছরের ডায়ালজিক-এর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল তথ্যভিত্তিক গণতন্ত্র, শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার, অন্তর্ভুক্তি, নীতিগত অন্তর্দৃষ্টি এবং পরিবেশ সচেতনতা নিয়ে শিক্ষার্থীদের যুক্তিভিত্তিক বিশ্লেষণ। এই আয়োজনে ছিল দি আর্থ-এর কৌশলগত অংশীদারত্ব এবং ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেটিক্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইআইডি)-এর নীতিগত সহযোগিতা।

বাস্তবতাপ্রসূত নীতি ও তরুণদের নাগরিক সম্পৃক্ততা নিয়ে কাজ করা আইআইডি’র সহায়তায় শিক্ষার্থীরা নীতিনির্ধারণী চ্যালেঞ্জ ও সেগুলোর উন্নয়ন নিয়ে প্রতিযোগিতামূলক ও সামাজিকভাবে অর্থবহ বিতর্কে অংশ নেয়। অন্যদিকে, দি আর্থ—জলবায়ু ন্যায়বিচার ও টেকসই উন্নয়নে অগ্রণী একটি যুব নেতৃত্বাধীন সংগঠন যারা এই আয়োজনে পরিবেশগত জরুরি বিষয়াবলীর সাথে শিক্ষার্থীদের সংযুক্ত করেছে।

ডায়ালজিক আয়োজনে সম্পৃক্ততা সম্পর্কে এক্সপ্রেস ইভেন্টস-এর নির্বাহী পরিচালক উৎপল কর্মকার বলেন, “তরুণদের এই মঞ্চ দেওয়া হলে তারা শুধু কথা বলে না — তারা নেতৃত্ব দেয়। এ ধরনের প্ল্যাটফর্মে সহযোগিতা করতে পেরে আমরা গর্বিত।”

বিডিএফ ডায়ালজিক ২০২৫ আবারও প্রমাণ করেছে, বিতর্ক কেবল প্রতিযোগিতা নয় — এটি ব্যক্তিত্বের বিকাশ, নাগরিক সম্পৃক্ততা এবং জাতীয় অগ্রগতির অনুঘটক। দেশের ৬০টির বেশি আগ্রহী দলের মধ্য থেকে ৪০টি’র অংশগ্রহণ এবং অর্থবহ বিতর্ক নতুন এক দৃষ্টিভঙ্গির জন্ম দিয়েছে। এই অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে এক নতুন গতি নিয়ে, যা বিডিএফ-এর দেশব্যাপী অর্থবহ সংলাপকে ছড়িয়ে দেওয়ার মিশনকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে।