সিকৃবির আবাসিক হলের নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত, শিক্ষার্থীদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া
প্রকাশ | ০২ জুন ২০২৫, ১৭:৩৯

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়টি আবাসিক হলের নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এরমধ্যে তিনটি আবাসিক হলের নতুন নাম ও বাকি তিনটি হলের প্রতিষ্ঠাকালীন নাম পুনর্বহাল রাখার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৮ তম সিন্ডিকেট সভায় সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে রোববার (১ জুন) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মোঃ আসাদ-উদ-দৌলা সাক্ষরিত এক আদেশে কার্যকর ব্যাবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দেয়া হয়। তবে হলের নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্তকে ঘিরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে শিক্ষার্থীদের মাঝে।
সিন্ডিকেট সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তের মধ্যে ভেটেরিনারি কলেজ সময়কার এম. সাইফুর রহমান হল, শহীদ জিয়া হল ও দুররে সামাদ রহমান হলের নাম পুনর্বহাল রাখার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যেগুলো বিগত সরকারের আমলে নাম পরিবর্তন করে যথাক্রমে শাহ এ এম এস কিবরিয়া হল, হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী হল ও সুহাসিনী দাস হল নামে নামকরণ করা হয়েছিল।
এছাড়াও বিগত সরকারের আমলে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, আব্দুস সামাদ আজাদ হল, শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের নাম পরিবর্তন করে যথাক্রমে হযরত শাহজালাল (র.) হল, জেনারেল এম. এ. জি ওসমানী হল ও সুহাসিনী দাস হল নামকরণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
তবে শিক্ষার্থীদের দাবি, যে অভ্যুত্থানকে ঘিরে এমন সুযোগ তৈরি হয়েছে সেই জুলাই অভ্যুত্থানের কোন স্মৃতি স্থান পায়নি হলের নামকরণে। এছাড়া নামকরণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যাক্তিবর্গের নাম প্রাধান্য পাওয়া, শিক্ষার্থীদের মতামত উপেক্ষা করা এবং ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের হামলার তদন্ত ও বিচারসহ শিক্ষার্থীদের উত্থাপিত দাবির অগ্রগতি না হওয়া নিয়ে নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্তের পর পক্ষে বিপক্ষে শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গ্রুপে বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা করতে দেখা গিয়েছে তাদের। এসময় তারা হলের নাম পরিবর্তনের চেয়ে মান বৃদ্ধির দিকে প্রশাসনকে নজর দেয়ার দাবি জানান।
কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, সম্প্রতি সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬টি হলের নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভা কর্তৃক গৃহিত হলেও নাম নির্ধারনে জুলাই বিপ্লবের বিন্দুমাত্র প্রতিচ্ছবি লক্ষ্য করা যায়নি। বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের নামে হলগুলোর নামকরণ করা হলেও যে জুলাই বিপ্লবের ছাত্রজনতার আত্মত্যাগের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আজ হলগুলোর নাম পরিবর্তনের সুযোগ পেয়েছে সেই বিপ্লবী শহীদ ছাত্রজনতার কারও নামে হলের নামকরণ না করা বিপ্লবের স্মৃতি মুছে দেওয়ার মতোই বলে আমি মনে করি,যা অত্যন্ত দু:খজনক।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হলগুলোর পরিবেশ,আবাসিক ব্যাবস্থা,খাবারের মান উন্নয়নের দিকে নজর না দিয়ে শিক্ষার্থীদের মতামত উপেক্ষা করে জরুরি ভিত্তিতে হলের নাম পরিবর্তনের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে একজন সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে আমি এর প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, সিন্ডিকেট মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত আমাদের জন্য ভীষণ হতাশার। ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ সালে ছাত্রদের উপর বহিরাগতদের হামলার তদন্ত ও বিচারসহ যেসব গুরুত্বপূর্ণ দাবি আমরা আন্দোলনের মাধ্যমে উত্থাপন করেছিলাম তার কোনটিরই অগ্রগতি নেই। বরং প্রশাসন গৌণ বিষয়, যেমন কিছু হলের নাম পরিবর্তনকে গুরুত্ব দিয়েছে। তাও যদি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে, বিশেষ করে ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদদের অবদানকে সম্মান জানিয়ে নামকরণ করা হতো, তাহলে কিছুটা হলেও তা গ্রহণযোগ্য হতো। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হচ্ছে গোপনে রাজনীতি চালিয়ে যাওয়া কিছু মহলের পরামর্শে, যা শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রশাসনের ওপর আস্থার অবনতি ঘটাচ্ছে।
মাৎসবিজ্ঞান অনুষদের এক শিক্ষার্থী বলেন "জুলাই অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বেশ কিছু সংস্কার লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফ্যাসিবাদী বা স্বৈরাচারী মনোভাব যেন পুনরায় প্রতিষ্ঠিত না হয় সেক্ষেত্রে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাদের মূল ফটকের নাম,ওয়েব সাইট,হলের নাম সহ অনেক গঠনতান্ত্রিক পরিবর্তন আনছে। সেই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি সিকৃবি প্রশাসন ছয়টি হলের নাম পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত গ্ৰহণ করেছে। যার মধ্যে কয়েকটি হলের নাম প্রতিষ্ঠাকালীন নামে রাখা হয়েছে যেগুলো বিগত সরকার পরিবর্তন করেছিলো। হলের নাম পরিবর্তন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হলেও সময়ের সাথে সাথে খাপ খাইয়ে নিবে আশাকরি। আমাদের চাওয়া শুধু হলের নাম পরিবর্তন করলেই হবে না হলের মানসম্মত সেবা নিশ্চিত করতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আলিমুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ চেষ্টা করা হলে উনার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এটিএম মাহবুব-ই-ইলাহী বলেন, ছাত্ররা হলের নাম পরিবর্তনের জন্য একটি স্মারকলিপি জমা দিয়েছিল।তাদের দাবির প্রেক্ষিতে হলের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের অন্যান্য দাবির মধ্যে যেগুলো একাডেমিক কাউন্সিলে অনুমোদিত হয়েছিলো সেগুলো সবই সিন্ডিকেট মিটিং-এ আলোচিত হয়েছে এবং প্রত্যেকটিতেই সমর্থন দেওয়া হয়েছে। ফাইনাল ইয়ারে ক্যারির ক্ষেত্রে শর্ট সেমিস্টারে পরিক্ষা নেয়ার বিষয়টি ইতোমধ্যেই পাস হয়ে গিয়েছে।
হলের নামকরণে জুলাই আন্দোলনের কোন স্মৃতি না থাকার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন,
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের নামকরণ 'জুলাই ৩৬' করা হবে।