শাবির ভর্তিতে ভুল বার্তা, গাফিলতিতে ৯৫ ভর্তিচ্ছুর ভর্তিতে অনিশ্চয়তা
প্রকাশ | ২২ জুন ২০২৫, ০৯:৪৯

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি প্রক্রিয়ায় বি ইউনিটের (বিজ্ঞান শাখা) তৃতীয় পর্যায়ের মেধাতালিকায় থাকা শিক্ষার্থীদের ভর্তিতে ভুলবার্তা দেওয়ায় শিক্ষার্থীদের মাঝে অনিশ্চয়তা ও বিভ্রান্তি এবং তাদের পরিবারের মাঝে উৎকন্ঠা দেখা দিয়েছে। এতে অনেকের ভবিষ্যৎ শিক্ষাজীবন অনিশ্চিয়তা দেখা দিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কমিটি ৩য় কলের শুরুতে বি ইউনিটের বিজ্ঞান শাখার ৪০১ থেকে ৪৯৫তম মেধাক্রমধারীদের ২২ জুনের ভর্তি কার্যক্রমে অংশগ্রহণের আহ্বান জানায়। মেসেজ ও ওয়েবসাইটে দেওয়া এই তথ্য অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা প্রস্তুতিও গ্রহণ করেন। তবে হঠাৎ করেই ভর্তি কার্যক্রমের একদিন আগে শুক্রবার (২০ জুন) রাতে বিশ্ববিদ্যালয় ওয়েবসাইটে জানানো হয়, ভুলবশত এই তালিকাটি প্রকাশ করা হয়েছিল। নতুন তালিকা অনুযায়ী, বি ইউনিটের মানবিক শাখার ৫৮১ থেকে ৬৫০তম মেধাক্রমধারীদের ভর্তি কার্যক্রমে অংশগ্রহণের জন্য বলা হয়।
এ ঘটনায় বিপাকে পড়েছেন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা। এক শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,“আমি মেসেজ পাওয়ার পর পরিবারের সবাই অনেক খুশি হয়েছিল। বাবা পাড়াপড়শিদের জানিয়েছেন আমি চান্স পেয়েছি। ভর্তি হওয়ার জন্য সকল প্রস্তুতি ও নিয়েছি। এখন হঠাৎ করে বলছে ভর্তি হবে না। বাবা গতকাল এই চিন্তায় প্রায় স্ট্রোক করার মতো অবস্থা ছিল।”
ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী সাজিদুর রহমান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখেন, “ভর্তির জন্য ডেকে এখন একদিন আগে বলছে না যেতে। আমি যশোর থেকে আসছি বাবার সাথে। যাওয়া-আসার জন্য ৬ হাজার টাকার টিকিট কেটেছি। অনেকে তো অন্য জায়গায় ভর্তি ক্যানসেল করেছে শাবিপ্রবির জন্য। আগে বলল না কেন?”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, “অনেক আশা নিয়ে ভর্তি হতে রওনা দিয়েছিলাম। এখন বাসায় ফিরে কী বলবো? আমার আর কোথাও চান্স হয়নি, এটা ছিল শেষ ভরসা।”
এছাড়া অনেক শিক্ষার্থী দাবি জানাচ্ছেন এই ভর্তির জন্য তারা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি বাতিল করেছে। এখন তাদের কি হবে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এরকম ভুল তো শিক্ষার্থীদের জীবনে বড় ধরনের ধাক্কা। এই ভুলের কারনে অনেকের শিক্ষাজীবন স্তিমিত হওয়ার পথে।
এরই প্রেক্ষিতে অনেক শিক্ষার্থী ক্ষোভ ঝেড়ে বলেন, এত বড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এরকম হয়রানি কোনভাবেই কাম্য নয়। ভর্তি কোন তামাশা কিংবা ছেলে খেলা নয়। তাছাড়া ভুল হলে সেটা সাথেই সাথেই জানানো উচিৎ ছিল। ৫ দিন পর আমাদের জানানো হয়েছে। এর জন্য আমরা প্রয়োজনে আইনের আশ্রয় নিব।
বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. বদিউজ্জামান ফারুক বলেন, “বি ইউনিটে মানবিক শাখাকে ভর্তির জন্য ডাকার পরিবর্তে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের ভুলবশত মেসেজ পাঠানো হয়েছে। ভর্তি শেষে আমরা বিষয়টি নিয়ে বসে সিদ্ধান্ত নেবো এবং শিক্ষার্থীদের পরবর্তী নির্দেশনা জানাবো।”
ভর্তি কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, “ভুলবশত মানবিকের পরিবর্তে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের মেসেজ দেওয়া হয়েছে। তবে যারা এ কারণে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি বাতিল করেছে, তাদের জন্য আমরা একটি ব্যবস্থা নেবো। গুচ্ছ ভর্তি শেষে অনেক আসন খালি হবে। তখন আমরা ভর্তির জন্য চতুর্থ কল করব। তখন যাদের মেসেজ দেওয়া হয়েছিল, তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। কেননা পরবর্তী মেধাতালিকায় তারা রয়েছেন।
হঠাৎ এ সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা প্রশাসনের দৃষ্টিশক্তির প্রশ্ন তুলেছেন। তারা দাবি করেছেন, ভর্তি কার্যক্রমে এমন গাফিলতি ভবিষ্যতের শিক্ষাজীবন ও পারিবারিক স্থিতিশীলতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।