রাবির কলা অনুষদভুক্ত সকল বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ স্থগিত

প্রকাশ | ২৫ জুন ২০২৫, ১৭:২১

রাবি প্রতিনিধি
ছবি: যায়যায়দিন

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগসংক্রান্ত ২০২৫ সালের নতুন নীতিমালা ও একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্ত চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে হাইকোর্ট বিভাগ কলা অনুষদভুক্ত সকল বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ স্থগিত করেছেন।

গত ২ জুনে বিচারপতি ফাতেমা নাজিব এবং বিচারপতি সিকদার মাহমুদুর রাজি সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রিটের শুনানি শেষে এ বিষয়ে একটি রুল নিশি জারি করেন।

মো. বুলবুল রহমান নামের উর্দু বিভাগের ২০১৩-১৪ সেশনের এক শিক্ষার্থী হাইকোর্টে রিট পিটিশন (নং ৮৮৩৭/২০২৫) দায়ের করে অভিযোগ করেন। তিনি রাবি শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক। রিট পিটিশনে তিনি উল্লেখ করেন, এ বছরের ১৫ এপ্রিলে প্রকাশিত 'রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ, পদোন্নয়ন ও পদায়ন নীতিমালা, ২০২৫' এবং এর ভিত্তিতে ৩০ এপ্রিলে প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি নং ০১/২০২৫-এর শর্ত নং-১ তাকে আবেদন করতে বাধা দিচ্ছে। যা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (UGC) কর্তৃক ২০২১ সালে প্রকাশিত ন্যূনতম যোগ্যতার গাইডলাইন লঙ্ঘন করছে।

আদালত জানতে চেয়েছেন, কেন এই নিয়োগ নীতিমালা এবং নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির 'শর্ত নং ১' বেআইনি, খারাপ উদ্দেশ্যপূর্ণ ও বাতিলযোগ্য ঘোষণা করা হবে না। সঙ্গে সঙ্গে, হাইকোর্ট নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্ত নং ১-এর কার্যকারিতা স্থগিত করেছেন এবং আবেদনকারীকে উর্দু বিভাগের প্রভাষক পদের জন্য আবেদন করতে অনুমতি দিয়েছেন।

এই রিটটি করা হয়েছে সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদের অধীনে, যা রাষ্ট্র বা কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বেআইনি সিদ্ধান্ত বা কার্যকলাপ প্রতিরোধে হাইকোর্টকে নির্দেশ দেওয়ার ক্ষমতা দেয়।
আবেদনের পক্ষে আদালতে ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. জিয়াউর রশিদ টিপু এবং রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আকতার হোসেন মো. আবদুল ওহাব ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলগণ।

রুলে বলা হয়েছে, প্রতিপক্ষদের (বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি) আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে কারণ দর্শাতে হবে। পরে পূর্ণাঙ্গ শুনানি শেষে রুল অ্যাবসুলুট (গ্রাহ্য) বা ডিসচার্জ (বাতিল) করা হবে।

এ বিষয়ে রিট পিটিশনকারী মো. বুলবুল রহমান বলেন, ২০২৫ সালের পিএসসি সার্কুলারে সকল অনুষদে সকল অনুষদে অনার্স-মাস্টার্সের ন্যূনতম সিজি ৩.৫০ নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু অন্য অনুষদের তুলনায় আমাদের কলা অনুষদের সিজি তুলনামূলক একটু কম হয়। আমি মনে করি এখানে আমাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে। এজন্যই আমি রিট করেছিলাম। মহামান্য আদালত আমাদের পক্ষে রায় দিয়েছেন। যতদিন পর্যন্ত মামলা চলবে ততদিন শিক্ষক নিয়োগের কার্যক্রম স্থগিত থাকবে।

উর্দু বিভাগের সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হওয়ার জন্য অ্যাকাডেমিক রেজাল্ট ভালো হওয়া প্রয়োজনীয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের সার্কুলারে উর্দু বিভাগে মোট ৫৭ জন আবেদন করেছেন। যার মধ্যে শর্ত পূরণ করেছেন মোট ৪৭ জন। এদের প্রত্যেকেরই অর্নাস ও মাস্টার্স দুটো মিলিয়ে রেজাল্ট খুবই ভালো এবং অনেকেরই দুটো মিলিয়ে সিজিপিএ ৪.০০-এর মধ্যে ৪.০০ আছে। কিন্তু এই বিজ্ঞপ্তির বিরুদ্ধে আদালতে যে অভিযোগ করেছে তার অ্যাকাডেমিক রেজাল্ট সিজি ৩.৩৫ যা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার জন্য গ্রহণযোগ্য নয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের লিগ্যাল সেলের প্রশাসক অধ্যাপক আব্দুর রহিম বলেন, আমরা জেনেছি যিনি হাইকোর্টে রিট করেছেন, তার অনার্সের সিজিপিএ ৩.৩৬ এবং মাস্টার্সে সিজিপিএ ৩.৫০-এর উপরে আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী অনার্স-মাস্টার্স পরীক্ষায় সিজিপিএ ৩.৫০ উপরে থাকতে হবে। এক্ষেত্রে তিনি ইউজিসি নীতিমালা অনুযায়ী ৩.২৫ উপরে থাকা বিষয়টি নিয়ে এসেছে। 

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের স্বায়ত্তশাসিত ৪টি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ১৯৭৩ সালের অ্যাক্ট অনুযায়ী চলে। তারা নিজের পরিচালিত নিয়মনীতি অনুযায়ী চলবে। শিক্ষা, গবেষণা এক্সিলেন্সি বাড়ানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় যে নীতিমালা নেবে সেটায় চূড়ান্ত। ইউজিসির যেকোনো নীতিমালা মানা স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বাধ্যবাধকতা নেই।