আবু সাঈদ হত্যা মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানি পেছাল, পরিবারে হতাশা

প্রকাশ | ২৯ জুন ২০২৫, ১২:৪৩ | আপডেট: ২৯ জুন ২০২৫, ১২:৪৯

বেরোবি প্রতিনিধি
শহীদ আবু সাঈদ

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী ও প্রথম শহীদ আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানি হচ্ছে না আজ। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ শুনানি হওয়ার কথা ছিল।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যস্ত থাকায় শুনানি পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

ধারণা করা হচ্ছে, আগামী জুলাইয়ের যেকোনো দিন মামলার অভিযোগ গঠন করা হবে। 
 
এর আগে গত বৃহস্পতিবার এ হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেয়েছে প্রসিকিউশন। প্রতিবেদনে হত্যার পেছনে ৩০ জনের সম্পৃক্ততা পেয়েছে তদন্ত সংস্থা।

এদিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা উঠলেও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থীর একাংশ বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরের মুক্তি চেয়ে আন্দোলন করেন।

তবে জানা যায়, আন্দোলনে আওয়ামী ঘরানার শিক্ষক এবং নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের উপস্থিতি ঘিরে ক্যাম্পাসে শুরু হয় তীব্র সমালোচনা। এ অবস্থায় শহীদ আবু সাঈদের পরিবার জানান, তারা এই আন্দোলন নিয়ে গভীর হতাশা অনুভব করছেন।

আবু সাঈদের বড় ভাই আবু হোসেন বলেন, সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলামের নাম তদন্তে প্রস্তাব করা হয়েছিল। তদন্ত সংস্থা হয়তো তার বিরুদ্ধে কিছু প্রাথমিক তথ্য পেয়েছে। তাদের কাছে ওই সময়কার কল রেকর্ডসহ গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট রয়েছে বলেও আমাদের জানা আছে।
তিনি আরও বলেন, ‘এই মামলায় আমরা কোনো রাজনৈতিক প্রতিহিংসা দেখাইনি। অন্যান্য মামলার মতো ১০০-২০০ জনকে আসামি করিনি। আমরা কেবল যাদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে দায়ী মনে করেছি, কেবল তাদের নামই দিয়েছি। শুনানির সময় যদি কেউ নির্দোষ প্রমাণিত হন, তাহলে আদালত স্বাভাবিকভাবেই তাকে জামিন দেবেন।’

আন্দোলনকারীদের প্রতি প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে আবু হোসেন বলেন, তারা যা দেখেছেন কেবল সেটুকুই জানেন, কিন্তু গোপনে যে ষড়যন্ত্র চলেছে, সেটা কি তারা জানেন? অনেকে আছেন, উপরে উপরে সান্ত্বনা দেন, অথচ ভেতরে ভেতরে ভিন্ন খেলা খেলেন।

পারিবারিক শঙ্কার কথাও তুলে ধরে তিনি বলেন, এভাবে চলতে থাকলে হয়তো একদিন আমাদের একমাত্র ভরসা হয়ে থাকবে আল্লাহর দরবারেই ন্যায়বিচার প্রার্থনা করা।
অপরদিকে আন্দোলনকারীরা সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলামের মুক্তি চেয়ে বলেন, যদি তিনি কোনো অপরাধ করে থাকেন, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাকে শাস্তি দেবেন। আবু সাঈদকে হত্যা করেছে পুলিশ। কিন্তু পুলিশি হত্যাকাণ্ডকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ওপর চাপানো কোনোভাবেই কাম্য না।

উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন আবু সাঈদ। এরপর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ১৮ আগস্ট তার পরিবার ১৭ জনকে আসামি করে মামলা করেন। পরে অধিকতর তদন্তে আরও সাতজনের নাম সংযুক্ত করতে আদালতে আবেদন করা হয়। মামলা গড়ায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে, যেখানে একাধিকবার তদন্তে রংপুরে আসে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন টিম।

গেল বৃহস্পতিবার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা থাকলেও তা পেছানো হয়। আজ রোববার (২৯ জুন) প্রতিবেদন জমা দেওয়ার দিন ধার্য করা ছিল।