ডিপ্লোমা কোটা বাতিলসহ তিন দফা দাবিতে উত্তাল রুয়েট 

প্রকাশ | ০৩ জুলাই ২০২৫, ১৫:৪৫

রুয়েট প্রতিনিধি
তিন দফা দাবিতে রুয়েট শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ: ছবি যায়যায়দিন

তিন দফা বাস্তবায়নের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘কোটার নামে বৈষম্য চলবে না, চলবে না’ স্লোগান দিতে থাকেন। শিক্ষার্থীরা বৃষ্টি উপেক্ষা করে সেখানেই সমাবেশ করেন।

বৃহস্পতিবার (৩ জুন) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রুয়েট লাইব্রেরির সামনে হাজারো শিক্ষার্থী জড়ো হন। পরে সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে তালাইমারি মোড়ে এসে অবস্থান নেন তারা।

উপস্থিত শিক্ষার্থীরা জোরালো কণ্ঠে স্লোগান দিতে থাকেন, ‘প্রকৌশল ক্ষেত্রে অবিচার, এবার চাই ন্যায়বিচার’, ‘প্রকৌশলীর সকল পদ, প্রকৌশলীদের অধিকার।’ 
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, প্রকৌশল পেশায় মেধাভিত্তিক নিয়োগ নিশ্চিত করা সময়ের দাবি। তাদের ভাষায়, ‘একবার তো দিলাম প্রাণ, আবার কেন কোটা চান?’—এই স্লোগানই এখন যেন রুয়েট শিক্ষার্থীদের অন্তরের আওয়াজ।

আয়োজকরা জানান, ‘আমরা বেশ কিছুদিন ধরে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারদের অধিকার আদায়ে আন্দোলন করছি। রুয়েট প্রশাসন বরাবরই আন্দোলনে সমর্থন জানিয়েছেন এবং তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। 
রুয়েট ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. রবিউল ইসলাম সরকার, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. এইচ এম রাসেল —আজকের বিক্ষোভে শিক্ষার্থীদের সাথে অংশগ্রহণ করেন।’

রুয়েট ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. রবিউল ইসলাম সরকার বলেন, ‘প্রকৌশল পেশায় কোটা বৈষম্যের বিরুদ্ধে এই আন্দোলন শুধু শিক্ষার্থীদের নয়, সমগ্র প্রকৌশলী সমাজের। 
কোটা নামক প্রথা প্রকৌশল পেশাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে এবং শিক্ষার্থীদের বাধ্য করছে রাস্তায় নামতে। এখন সময় এসেছে এই অবিচারের বিরুদ্ধে সুশৃঙ্খল প্রতিবাদ গড়ে তোলার। আমি একজন শিক্ষক হিসেবে মানবিক ও নৈতিক দায়বদ্ধতা থেকেই তাদের পাশে দাঁড়িয়েছি।’

পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক এইচ এম রাসেল বলেন, ‘যথাযথ মেধার মূল্যায়ন হলে দেশ আরও দক্ষ প্রকৌশলী পাবে। শিক্ষার্থীদের এ দাবি জাতির উন্নয়নের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত।’

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে রুয়েট প্রশাসনের সমর্থন অত্যন্ত প্রশংসনীয়। রুয়েটের সাম্প্রতিক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ১০ম গ্রেড বিএসসি ও ডিপ্লোমা উভয় ডিগ্রিধারীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে, যা আন্দোলনের  দাবি-সমূহের একটির প্রথম বাস্তবায়ন।  

আন্দোলনকারীরা জানান, তাদের আন্দোলন কোনো বিশেষ গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নয়। বরং প্রকৌশল পেশাকে মর্যাদা ও মেধার ভিত্তিতে গড়ে তুলতেই তারা যৌক্তিক প্রতিবাদ করছেন। 

বিক্ষোভে উত্থাপিত তিনটি দাবি হলো: ‘ইঞ্জিনিয়ারিং ৯ম গ্রেডে সহকারী প্রকৌশলী বা সমমান পদে প্রবেশের জন্য সবাইকে পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে এবং বিএসসি ডিগ্রিধারী হতে হবে। কোটার মাধ্যমে কোনো পদোন্নতি নয়, এমনকি অন্য নামেও সমমান পদ তৈরি করেও পদোন্নতি দেওয়া যাবে না’, ‘টেকনিক্যাল ১০ম গ্রেডে উপ-সহকারী প্রকৌশলী বা সমমান পদ সবার জন্য উন্মুক্ত করতে হবে অর্থাৎ ডিপ্লোমা ও বিএসসি উভয় ডিগ্রিধারীকে পরীক্ষার সুযোগ দিতে হবে’, ‘ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিএসসি ডিগ্রি ছাড়া কেউ ইঞ্জিনিয়ার পদবি ব্যবহার করতে পারবেনা, এই মর্মে আইন পাশ করে গেজেট প্রকাশ করতে হবে।’

আন্দোলনকারীরা আরো জানান, প্রকৌশল খাতে দীর্ঘদিনের অবিচার ও বৈষম্যের অবসান ঘটাতে এখনই প্রয়োজন একটি জাতীয় স্তরের সংস্কার। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলমান থাকবে এবং সারাদেশে সচেতনতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে পরবর্তী কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।