জুলাই বিপ্লবে সাড়া জাগানো ‘লাল ক্যাম্পেইন’, কর্মসূচির নেপথ্যে যারা

প্রকাশ | ০৬ জুলাই ২০২৫, ১৮:৪৪ | আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২৫, ২১:৫২

যাযাদি ডেস্ক
সাদিক কায়েম, মহিউদ্দিন খান, এস এম ফরহাদ

জুলাই আন্দোলনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ঝড় তুলেছিল ফেসবুক প্রোফাইলে লাল প্রতীকী বা ছবি ব্যবহার। 

গত বছরের ৩০ জুলাই আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে ছোট-বড়, তরুণ, ছাত্র, যুবক ও সেলিব্রেটিরাও তাদের প্রোফাইলে লাল প্রতীকী ব্যবহার করেছিলেন। 

এমনকি বর্তমান অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রোফাইলেও দেখা গেয়েছিল লাল প্রতীকী। 

এছাড়া সেদিন মুখে লাল কাপড় বেধে রাজপথে নেমেছিল ছাত্র-জনতা। 

তবে এই লাল ক্যাম্পেইন বা এটাকে কর্মসূচি হিসেবে ঘোষণার পরামর্শ দিয়েছিলেন বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সভাপতি এসএম ফরহাদ। 

এছাড়া নেপথ্যে ছিলেন শিবির নেতা সাদিক কায়েম ও মহিউদ্দিন খান। 

রোববার (৬ জুলাই) এসএম ফরহাদ গণমাধ্যমকে এই তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘জনরোষে পড়ে সরকার ৩০ তারিখ একটি কর্মসূচি ঘোষণা করে। নিহতদের প্রতি রাষ্ট্রীয় শোক পালনের অংশ হিসেবে কালো পতাকা উত্তোলনের নির্দেশ দেয়। 

এর আগে হাসিনা এতোগুলা মানুষ হত্যা করে হাসপাতালে দেখতে না গিয়ে অবকাঠামো ভাঙচুরের জন্য কান্নাকাটি করে। এতে মানুষ আরও বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠে।’

ফরহাদ জানান, ‘এরপর শহীদ পরিবারদের সঙ্গে দেখা করার নাটক করে হাসিনা। হাসপাতালে দেখতে গেলেও তাদের নেতাকর্মী যারা শিক্ষার্থীদের মারতে গিয়ে আহত হয়েছে, তাদেরকেই দেখতে যায়।

ফলে সমগ্র জাতি বুঝে যায়, এটা রাষ্ট্রীয় শোক নয়, শহীদ ও আহত ছাত্র-জনতার রক্তের সঙ্গে মশকরা।’

এই শিবির নেতা বলেন, ‘আমি, সাদিক কায়েম ও মহিউদ্দিন খান একসঙ্গে পরামর্শ করি- শোক দিবসের বিপরীতে আমরা কী করতে পারি? 

সাদিক ভাই বললেন, ‘ছাত্রদল তো কালো পতাকা নিয়ে শোক মিছিল দেওয়ার কথা বলছে, এইটা নাকি এরশাদবিরোধী আন্দোলনেও বাস্তবায়িত হয়েছিল, এমনটা দেওয়া যায় কি না?’ 

আমি বললাম, ‘ভাই, কালো না, লাল দিতে হবে।’ ভাই জিজ্ঞেস করেন, ‘লাল কেন?’ আমি বলি, ‘হাসিনা মানুষ খুন করছে, আহত করছে, গণহত্যা চালাচ্ছে, রক্ত ঝরাচ্ছে, সেই রক্তের রঙ লাল। 

আমরা লাল কাপড় চোখে এবং মুখে বেঁধে প্রতিবাদ করতে পারি।’ 

ফরহাদ জানান, ‘সাদিক কায়েম ভাই আবার জিজ্ঞেসা করলেন- ‘চোখে এবং মুখে লাল কাপড় কেন?’ 

আমি বললাম- ‘ভাই, তারা এতগুলা মানুষ হত্যা করেও চোখে সেগুলো দেখছে না, বরং চোখে মেট্রো দেখে এবং কান্না করে আর অব্যাহত মিথ্যাচার করছে। সেটার প্রতিবাদে চোখে এবং মুখে লাল কাপড় বেঁধে অনলাইনে ক্যাম্পেইন।’ 

তিনি বলেন, ‘সাদিক ভাই আমার পরামর্শটা গ্রহণ করলেন। এরপর মহিউদ্দিন খান কিছু হ্যাশ ট্যাগ ঠিক করেন। 

সেগুলো দিয়ে বিবৃতি রেডি করা হয়। এরপর সাদিক কায়েম ভাই সমন্বয়কদের গ্রুপে দিলে তারাও একমত হয়। কালোর পরিবর্তে লাল কর্মসূচি। 

সেদিন এই কর্মসূচি সকল বয়সের মানুষ স্বতঃফুর্তভাবে পালন করে। মুহূর্তের মধ্যেই অনলাইন জুড়ে লাল রঙ ছড়িয়ে পড়ে।’

ফরহাদ আরও বলেন, ‘ওই সময় অনলাইনে এই প্রোগ্রামটি অনেক সাড়া ফেলে। দেশের সিনিয়র রাজনীতিবিদ, শিক্ষক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সবাই একসঙ্গে প্রোফাইল লাল করেন। 

এসময় জাতি দুইভাগ হয়ে যায়, লালের পক্ষে সাধারণ ছাত্র-জনতা, আর কালোর পক্ষে ফ্যাসিবাদী সন্ত্রাসীগোষ্ঠী।’ 

অনলাইনের এই ক্যাম্পেইনটা ব্যাপক সাড়া ফেলার পরের দিন তারা মাঠ পর্যায়ের অফলাইন কর্মসূচি দিতে সাহস পান বলেও জানান এই শিবির নেতা।