শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিপ্লবী প্রযোজক ফিল স্পেক্টর আর নেই

যাযাদি ডেস্ক
  ১৮ জানুয়ারি ২০২১, ১২:০৮

রক মিউজিকের বিপ্লবী প্রযোজক ফিল স্পেক্টর ৮১ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। বৈচিত্র্যময় ক্যারিয়ারের শেষ জীবনে স্পেক্টরকে খুনের দায়ে কারাগারে থাকতে হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের জেলার জানিয়েছেন, প্রাকৃতিক কারণে স্থানীয় সময় শনিবার (বাংলাদেশ সময় রবিবার) তার মৃত্যু হয়েছে।

স্পেক্টর ২০০৩ সালে অভিনেত্রী লানা ক্লার্কসনকে নিজের ফ্ল্যাটে বসে খুন করেন। সেদিন নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ছিলেন স্পেক্টর। শুনানির পর ২০০৯ সালে তাকে ১৯ বছরের জেল দেয়া হয়। স্পেক্টর সংগীত অঙ্গনে অমর হয়ে থাকবেন মিউজিক প্রোডাকশন ফর্মুলা ‘ওয়াল অব সাউন্ড’ সৃষ্টির জন্য। রক ’এন’ রোলের সবচেয়ে প্রভাবশালী এবং সফল রেকর্ড প্রোডিউসার বলা হয় তাকে।

যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত পত্রিকা দ্য নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, স্পেক্টর জর্জ হ্যারিসনের সঙ্গে ‘অল থিংস মাস্ট পাস’-এর পাশাপাশি ‘দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ লাইভ ট্রিপল অ্যালবামে কাজ করেন। নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশকে সাহায্য করার জন্য এই চ্যারিটি কনসার্টের আয়োজন করেন হ্যারিসন।

স্পেক্টরের সহ-প্রযোজনায় ‘দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ পরে অ্যালবাম করা হয়। ১৯৭২ সালে বর্ষসেরা অ্যালবাম হিসেবে এটি গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড জয়লাভ করে। এই ট্রিপল-ডিস্ক অ্যালবাম ১ আগস্ট ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনেই লাইভ রেকর্ড করা হয়।

অনুষ্ঠানের মূল উদ্যোক্তা ছিলেন বিশ্বখ্যাত সেতারবাদক পণ্ডিত রবিশঙ্কর। বাংলাদেশের জনগণের সাহায্যার্থে কিছু করার জন্য তিনি প্রথম যোগাযোগ করেন জনপ্রিয় বিটলসের অন্যতম সদস্য জর্জ হ্যারিসনের সঙ্গে। হ্যারিসন এগিয়ে আসেন এবং উদ্যোগী হয়ে অন্য শিল্পীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ৪০ হাজার শ্রোতা-দর্শক এই অনুষ্ঠানে সমবেত হয়েছিলেন।

অনুষ্ঠান থেকে উদ্যোক্তারা ২ লাখ ৪৩ হাজার ৪১৮ দশমিক ৫০ ডলার সংগ্রহ করে ইউনিসেফের বাংলাদেশের শিশু সাহায্য তহবিলে জমা করেন। ৪০টি মাইক্রোফোনে অনুষ্ঠানের গান ও কথা রেকর্ড করে তিনটি লং প্লেয়িং নিয়ে একটি বড় অ্যালবাম প্রকাশ করা হয়। সঙ্গে ছিল বহু রঙে মুদ্রিত সেই অনুষ্ঠানের একটি সুদৃশ্য সচিত্র পুস্তিকা।

‘দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ শুরু হয়েছিল পণ্ডিত রবিশঙ্করের একটি সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা দিয়ে। এ কনসার্টের জন্য তিনি তৈরি করেছিলেন ‘বাংলাদেশ ধুন’ বলে নতুন একটি সুর। আর তার সঙ্গে সরোদে যুগলবন্দী ছিলেন ওস্তাদ আলী আকবর খান। তবলায় সহযোগিতা করেছিলেন বিখ্যাত আল্লারাখা। তানপুরায় ছিলেন কমলা চক্রবর্তী। সেদিন ম্যাডিসন স্কয়ারের অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ ছিল প্রতিবাদী গানের রাজা বব ডিলান। তিনি গেয়েছিলেন ছয়টি গান, ‘মি. ট্যাম্বুরিনম্যান’ থেকে শুরু করে তার লেখা ও সুরারোপিত ৫০ লাইনের বিখ্যাত গান ‘আ হার্ড রেইন ইজ গোননা ফল’। সেদিন বব ডিলানের সঙ্গে গিটার বাজিয়েছিলেন জর্জ হ্যারিসন, ব্যাস লিওন রাসেল ও ট্যাম্বুরিন রিঙ্গো স্টার। সে অনুষ্ঠানে বিটলসের অন্যতম সদস্য রিঙ্গো স্টার, লিওন রাসেল, এরিক ক্ল্যাপটন, বিলি প্রেস্টন, ডন প্রেস্টন প্রমুখ গান গেয়েছেন, গিটার বাজিয়েছেন।

অনুষ্ঠানের জন্য হ্যারিসন লিখেছিলেন নতুন গান, ‘এল একদিন বন্ধু আমার/ চোখভরা তার ধু-ধু হাহাকার/ বলে গেল, চাই শুধু সহায়তা/ দেশ তার আজ ধুঁকে ধুঁকে মরে/ বেশি কিছু আমি জানতে চাই না।’এটি ছিল অনুষ্ঠানের শেষ গান

যাযাদি/এসএইচ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে