মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

উৎসবে মুখর শিল্পকলা একাডেমি

মাসুদুর রহমান
  ০৮ ডিসেম্বর ২০২১, ০০:০০
আপডেট  : ০৮ ডিসেম্বর ২০২১, ০৯:৪৯
বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতা নাট্যোৎসবে মঞ্চস্থ হয় নাটক 'কথা-৭১'

করোনার কারণে প্রায় দুই বছর ধরে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে ঘটা করে কোনো উৎসব পালিত হয়নি। পরিস্থিতি স্থিতিশীল হওয়ার পর থেকে ধীরে ধীরে প্রাণ ফিরছে এই আঙ্গিনায়। সংস্কৃতিপ্রেমীদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে একাডেমি প্রাঙ্গণ। নানা আয়োজনে উদযাপিত হচ্ছে বিভিন্ন উৎসব। বলা চলে একটি শেষ হতে না হতেই শুরু হচ্ছে আরেকটি আসর কিংবা এক উৎসব চলাকালেই শুরু হচ্ছে আরেকটি উৎসব। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ এবং বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে উদযাপন হচ্ছে ১১ দিনব্যাপী 'বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতা নাট্যোৎসব'। এর আয়োজন করেছেন মহাকাল নাট্য সম্প্রদায়। উৎসবে ঢাকা ও ঢাকার বাইরের ১৪টি নাট্যদল বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক নাটক মঞ্চায়ন করছে। প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তন ও পরীক্ষণ থিয়েটার হলে মঞ্চায়ন হচ্ছে নাটকগুলো। বঙ্গবন্ধুর নানা সময়ের ছবি দিয়ে বর্ণাঢ্য রঙে সেজেছে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার লবি। আলোকচিত্রশিল্পী পাভেল রহমানের ছবি নিয়ে 'বঙ্গবন্ধুর জীবন' শিরোনামের আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে বঙ্গবন্ধু মূর্ত হয়ে আছেন আপন মহিমায়। বঙ্গবন্ধুর ছবির পাশাপাশি বাংলাদেশের ৫০ বছরের নাটকের পোস্টার ও স্থিরচিত্রও স্থান পেয়েছে এ প্রদর্শনীতে। ইতোমধ্যে এ উৎসব বেশ জমে উঠেছে। বৈরী আবহাওয়ায়ও প্রতিদিনই মিলনায়তনে ভিড় করছেন দর্শকরা। মঞ্চের আলো-আঁধারির খেলায় নাটকের সংলাপে ভরে উঠছে মিলনায়তনগুলো। গত শুক্রবার শিল্পকলা একাডেমির নন্দনমঞ্চে প্রদীপ প্রজ্বালনের মাধ্যমে সম্মিলিতভাবে এ উৎসবের উদ্বোধন করেন স্বাধীনতা সংগ্রাম ও সংস্কৃতির অগ্রযাত্রায় অবদান রাখা ৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা-সংস্কৃতিজন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক। উৎসব উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেনের সভাপতিত্বে এতে স্বাগত বক্তৃতা করেন উৎসব উদযাপন পরিষদের সদস্য সচিব মো. শাহনেওয়াজ। উদ্বোধনীতে 'স্মরণে ৭১' শীর্ষক কোরিওগ্রাফি পরিবেশন করেন নৃত্যশিল্পীরা। অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত কবিতা পাঠ করেন কিশোরগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধা লাল মাহমুদ। সন্ধ্যা ৭টায় জাতীয় নাট্যশালার পরীক্ষণ থিয়েটার হলে মঞ্চায়ন হয় নাটক 'ঘুম নেই'। উৎসবের দ্বিতীয় সন্ধ্যায় পরীক্ষণ থিয়েটার হলে মঞ্চায়ন হয় চট্টগ্রামের উত্তরাধীকার নাট্যদলের নাটক 'মৃতু্য পাখি', তৃতীয়দিন মঞ্চায়ন দৃশ্যকাব্যের নাটক 'বাঘ', চতুর্থদিন মঞ্চায়ন হয় শব্দ নাট্যচর্চা কেন্দ্রের নাটক 'রাইফেল'। গতকাল পঞ্চমদিন মঞ্চায়ন হয়েছে বুনন থিয়েটারের নাটক 'সিক্রেট অব হিস্ট্রি' ও একই সময়ে ঢাকা পদাতিকের নাটক 'কথা-৭১', আজ মঞ্চায়ন হবে বাংলাদেশ পুলিশ থিয়েটারের নাটক 'অভিশপ্ত আগস্ট', আগামীকাল মঞ্চায়ন হবে প্রাঙ্গণেমোরের নাটক 'কনডেমড সেল', ও একই সময়ে মঞ্চায়ন হবে সংলাপ গ্রম্নপ থিয়েটারের নাটক 'মানব সুরৎ'। ১০ ডিসেম্বর মঞ্চায়ন হবে আয়োজক নাট্যদল মহাকাল নাট্য সম্প্রদায়ের নাটক 'শ্রাবণ ট্র্যাজেডি' ও একই সময়ে মঞ্চায়ন হবে থিয়েটার আর্ট ইউনিটের নাটক 'কোর্ট মার্শাল', ১১ ডিসেম্বর জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে মঞ্চায়ন হবে বরিশালের নাট্যমের নাটক 'তীলক', ১২ ডিসেম্বর মঞ্চায়ন হবে পদাতিক নাট্য সংসদের (টিএসসি) নাটক 'কালরাত্রি' ও ১৩ ডিসেম্বর মঞ্চায়ন হবে 'পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়'। ৫০ বছরে সংস্কৃতিচর্চা, মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যেসব প্রতিষ্ঠান নিয়মিত গবেষণা ও প্রসারে ভূমিকা রেখে চলেছে এমন ৯টি প্রতিষ্ঠানকে ১০ ডিসেম্বর সম্মাননা প্রদান করবে নাট্যদল। ১৩ ডিসেম্বর শেষ হবে এই নাট্যোৎসব। \হবৈষ্ণব সাধক ও বাংলার লোকসংগীতের অন্যতম পুরোধা মরমি কবি রাধারমণ দত্ত। তার স্মরণে শিল্পকলা একাডেমিতে 'সাম্প্রদায়িক শক্তিকে রুখতে হবে' সেস্নাগান নিয়ে ২৬ নভেম্বর থেকে শুরু হয়ে তিন দিনব্যাপী একাদশতম রাধারমণ লোকসংগীত উৎসব। যার আয়োজন করে রাধারমণ সংস্কৃতি চর্চাকেন্দ্র। উৎসবে প্রতিদিন বিকাল ৫টা থেকে রাত পর্যন্ত চলে রাধারমণের গানসহ নানা আয়োজন। উৎসবের উদ্বোধন করে বিশিষ্ট লালনগীতি শিল্পী ফরিদা পারভীন। প্রথমদিন বৈষ্ণব সাধক ও লোকসংগীতের অন্যতম পুরোধা মরমি কবি রাধারমণ দত্তের গান গেয়ে শিল্পীরা শ্রোতাদের মুগ্ধ করেন। একই দিন শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালার ৬ নম্বর গ্যালারিতে শুরু হয় মুম্বাইয়ে সন্ত্রাসী হামলার ১৩তম বার্ষিকী উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী আলোকচিত্র প্রদর্শনী। এ আয়োজনের উদ্যোক্তা একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। সহ-আয়োজক বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সমিতি। এর আগে গত নভেম্বরের মাঝ সময়ে শিল্পকলা একাডেমির খোলা প্রাঙ্গণে বসেছিল নবান্ন আসর। সংস্কৃতিকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ অনেক মানুষের সমাগম হয়েছিল এখানে। লোকায়িত জীবন ও সংস্কৃতির প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করেন তারা। ছিল খই, মুড়ি, পিঠাপুলির আয়োজন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ক্যাম্পাসে এই উৎসবের আয়োজন হতো। করোনার কারণে প্রায় দুই বছর ধরে বন্ধ চারুকলার গেট। শিক্ষা কার্যক্রম চালু হলেও স্থানটি এখনো খুলে না দেওয়ায় শিল্পকলা একাডেমিতে বসে নবান্ন উৎসব। সকাল-বিকাল দুই পর্বে বিভক্ত ছিল 'নবান্ন উৎসব ১৪২৮'। গান, নৃত্য ও কবিতার ভাষায় ফসলকেন্দ্রিক জীবনযাত্রা তুলে ধরা হয়। নানা পরিবেশনা ছাড়াও উৎসবে আসা ব্যক্তিদের জন্য ছিল পিঠাপুলির ব্যবস্থা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে