সা ক্ষা ৎ কা র

রবীন্দ্রনাথ শুধু সর্বজনীনই নন, প্রাসঙ্গিকও

পাপিয়া সারোয়ার- দেশের বরেণ্য রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে অসম্ভব জনপ্রিয় তিনি। আধুনিক গানেও পেয়েছেন আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা। গানের জন্য পেয়েছেন বাংলা একাডেমি থেকে রবীন্দ্র পুরস্কার এবং একুশে পদকসহ বহু সম্মাননা। এই তারকার জীবনের নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন মাতিয়ার রাফায়েল

প্রকাশ | ০৯ মে ২০২২, ০০:০০ | আপডেট: ০৯ মে ২০২২, ০৯:০৪

অনলাইন ডেস্ক

দু'বছর পর রবীন্দ্র উদযাপন স্বরূপে ফিরছে- কী ভাবছেন? আমি ব্যক্তিগতভাবে এ উদযাপনে নেই। তবে সরকারের কর্মসূচির কমিটিতে আছি। গত ২৭ রোজায় আমাদের বড় বোন শম্পা রেজা ও রিনি রেজার মা রানু রেজা মারা গেছেন। তিনিও সংগীতশিল্পী ছিলেন। অভিনয় করতেন। বাংলাদেশের প্রথম আর্টফিল্ম কবীর আনোয়ারের 'সুপ্রভাত' (১৯৭৬) চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন। রিনি রেজা মূল অভিনেত্রী হিসেবে কমল ব্যানার্জীর বিপরীতে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে বাচসাস পুরস্কার পেয়েছিলেন। তার শূন্যতা আমাকে এত ভারাক্রান্ত করেছে যে, বড় আপার সম্মানে কোনো কিছুতে থাকতে পারছি না। রবীন্দ্র সঙ্গীতে আসার পেছনে কি তারও অবদান ছিল? আমি ছোটবেলা থেকেই রবীন্দ্র অনুরাগী। নিজের পছন্দেই রবীন্দ্রসঙ্গীতে আসা। ক্লাস সিক্সে থাকতে ছায়ানটে ভর্তি হই। নবম শ্রেণি পর্যন্ত সেখানে থাকি। তারপরে ধানমন্ডিতে বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে ভর্তি হই। রবীন্দ্রনাথকে নিয়েই আমাদের সবসময় পথ চলা, পথ চলা মানে জীবন চলা- তাকেই আমাদের জীবনে ধারণ করে রাখা। বড় আপার সঙ্গে আমাদের সম্পর্কটাও তেমন ছিল। আমার গানের পেছনে তিনি সবসময়েই লেগে থাকতেন। মা-বাবা তো ছিলেনই। আপনি তো 'নাই টেলিফোন' গানটির জন্যই ব্যাপক খ্যাতি পান! জানি না কেন এটা হলো। আমি তখন শান্তি নিকেতন থেকে ফিরে আসি। এ সময়ে আমার বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের কয়মাস পরে এই গানটি গাই। গানটি লিখেছিলেন মনিরুজ্জামান মনির। সুর করেছিলেন মনসুর আলী সাহেব ধীর আলীর বড় ভাই। গানটি রেকর্ডিংয়ের সময়ে আরেকজন ছিলেন মুসা আহমেদ। তিনি নাটকেও গানটি গেয়ে ফেললেন। মাঝে মাঝে ভাবি, সারাজীবন গাইলাম রবীন্দ্রসঙ্গীত আর কিনা এই গানটিই নিয়েই এত মাতামাতি! অ্যালবামের যুগেও আপনার অ্যালবাম, সিডি এত কম কেন? আমার এসব ভালো লাগতো না। অনেকেই বিভিন্ন কোম্পানি থেকে প্রস্তাব নিয়ে আসতেন। আমার আগ্রহ ছিল না। আমি গান করি নিজের আত্মার শান্তির জন্য। সারাদেশে ঘরে ঘরে আমার সিডি, অ্যালবাম ছড়িয়ে দেব এমন ইচ্ছা ছিল না। আমি নিজের পছন্দ অনুযায়ীই গান গাই। কিন্তু ওরা ওদের পছন্দ অনুযায়ী যেসব গান রেকর্ডিং করাতে চাইতো সেগুলোই লিখে নিয়ে আসত। এটা আমার পছন্দ হতো না। যা করেছি নিজের পছন্দেই করেছি। রেডিও, টিভিই ছিল আমার পছন্দের জায়গা। রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পীদের অনেকেই খুব বেশি কলকাতাগামী আপনি কেন কম? আমার এটাও পছন্দ ছিল না। এভাবে নিজেকে ফোকাস করানোটা আমার পছন্দের নয়। যদিও দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে আমি প্রথম ছাত্রী ছিলাম বিশ্বভারতীর। অনেকে যেমন আত্মপ্রচারের জন্য ঘন ঘন কলকাতা দৌড়াদৌড়ি করেন এটা আমার পছন্দ নয়। শুধু কলকাতা নয়, অনেকে তো কোনো চ্যানেল নিজের স্থায়ী ঠিকানাও বানিয়ে ফেলেছেন। প্রচারের তো সবার দরকার আছেই তবে এভাবে প্রচারসর্বস্ব হওয়াটা আমার পছন্দ নয়। কেউ কেউ রবীন্দ্রনাথ সর্বজনীন নন মনে করেন- আপনার কী মত? আমার তো মনে হয় আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে যেটাই দেখি, যেটাই করি, যেটাই শুনি- সবখানেই রবীন্দ্রনাথের প্রাসঙ্গিকতা রয়েছে। কাজেই রবীন্দ্রনাথ শুধু সর্বজনীনই নন প্রাসঙ্গিকও। তার বক্তব্য, উক্তি, লেখা সবই এই সময়েও কাজে লাগে। কাজেই তিনি কী করে সর্বজনীন নন? আমাদের চারপাশের সর্বজনের সব বিষয়ের সঙ্গে মিল থাকাতেই তো তিনি এখনো সর্বজনীন।