কিংবদন্তি গীতিকার, কবি ও সাংবাদিক কে জি মোস্তফার নামাজে জানাজা সোমবার বাদ জোহর জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। জানাজার পূর্বে বক্তব্য রাখেন, জাতীয় প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহ সভাপতি হাসান হাফিজ, সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, যুগ্ম সম্পাদক মাঈনুল আলম প্রমুখ।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএফইউজের সভাপতি ওমর ফারুক ও এম আবদুল্লাহ, বাংলাদেশ জাতীয় প্রেসক্লাবের কোষাধ্যক্ষ শাহেদ চৌধুরী, যুগ্ম সম্পাদক আশরাফ আলী, সিনিয়র সদস্য আইয়ুব ভূঁইয়া, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ, সাবেক সহ সভাপতি কাজী রওনক হোসেনসহ প্রেসক্লাবের সিনিয়র সদস্যরা জানাজায় শরীক হন। জানাজা শেষে আজিমপুর কবরস্থানে কে জি মোস্তফাকে সমাহিত করা হয়।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান বলেন, ‘প্রেসক্লাবকে তিনি খুব ভালোবাসতেন। তিনি একজন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক ছিলেন। প্রেসক্লাবের সদস্যদের বিনা পয়সায় চিকিৎসা দিতেন। তার লেখা গানগুলো হাজার বছর টিকে থাকবে।’
এর আগে রোববার (৮ মে) রাতে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান কে জি মোস্তফা। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। বার্ধক্যজনিত নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি।
কে জি মোস্তফা সাংবাদিক হিসেবে পেশাজীবন শুরু করলেও একটা সময় সেই পরিচয় ছাপিয়ে তার গীতিকার পরিচয় পাদপ্রদীপের আলোয় চলে আসে। গুণী এই মানুষটি অসংখ্য জনপ্রিয় গানের স্রষ্টা।
সিনেমার কালজয়ী এবং সর্বাধিক জনপ্রিয় দুই গান ‘তোমারে লেগেছে এত যে ভালো চাঁদ বুঝি তা জানে’ ও ‘আয়নাতে ওই মুখ দেখবে যখনে’র গীতিকার তিনি। প্রথম গানটি এহতেশাম পরিচালিত ‘রাজধানীর বুকে’ এবং দ্বিতীয় গানটি অশোক ঘোষ পরিচালিত ‘নাচের পুতুল’ সিনেমায় ব্যবহার করা হয়েছে। দুটি গানেরই সুরকার ছিলেন রবিন ঘোষ। গানে কণ্ঠ দিয়েছেন যথাক্রমে তালাত মাহমুদ ও মাহমুদুন্নবী।
১৯৩৭ সালের ১ জুলাই নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে কে জি মোস্তফার জন্ম। ১৯৬০ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন। দৈনিক ইত্তেহাদে ১৯৫৮ সালে শিক্ষানবীশ হিসেবে সাংবাদিকতায় যোগ দেন তিনি।
স্বাধীনতার পর কে জি মোস্তফা প্রথমে ‘দৈনিক গণকণ্ঠ’ ও পরে ‘দৈনিক স্বদেশ’ পত্রিকায় প্রধান প্রতিবেদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ‘দৈনিক জনপদে’ কাজ করেন কূটনৈতিক প্রতিবেদক হিসেবে। ওই সময় ‘নূপুর’ নামে একটি মাসিক বিনোদন ম্যাগাজিনও সম্পাদনা করতেন।
১৯৭৬ সালে তিনি বিসিএস (তথ্য) ক্যাডারভুক্ত হন এবং চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের সহকারী সম্পাদক পদে যোগ দেন। ১৯৯৬ সালে সিনিয়র সম্পাদক (যুগ্ম সচিব পদমর্যাদা) হিসেবে অবসর নেন।
চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদফতর থেকে প্রকাশিত কিশোর পত্রিকা ‘নবারুণ’, সাহিত্য মাসিক ‘পূর্বাচল’, ‘সাপ্তাহিক বাংলাদেশ সংবাদ’ এবং সবশেষ ‘সচিত্র বাংলাদেশ’ পত্রিকার সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করেন কে জি মোস্তফা। ওই সময় কিছুদিনের জন্য বাংলাদেশ স্কাউটসের মুখপত্র ‘অগ্রদূতে’র ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ছিলেন।
অনেক সিনেমার সহকারী পরিচালক হিসেবেও কাজ করেছেন কে জি মোস্তফা। রয়েছে বেশকিছু কাব্যগ্রন্থ, ছড়ার বই, গানের বই, গদ্যগ্রন্থ, গানের সিডি, ক্যাসেট। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পদকসহ আরও অনেক পদকে ভূষিত হয়েছেন তিনি।
কে জি মোস্তফার লেখালেখি শুরু ছাত্রজীবনেই। ওই সময় থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকীতে তার লেখা কবিতা প্রকাশিত হয়েছে।
যাযাদি/ এস