অভিনয়ের পঞ্চাশ বছরে আলমগীর

প্রকাশ | ২৪ জুন ২০২২, ০০:০০ | আপডেট: ২৪ জুন ২০২২, ০৯:৪৮

জাহাঙ্গীর বিপস্নব

চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব আলমগীর। বয়সের ভারে ভারী হয়ে গেলেও এখনো চিত্রনায়ক হিসেবেই আন্তর্জাতিকভাবে সমাদৃত তিনি। নায়কদের মধ্যে সর্বাধিক (৯ বার) জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এই অভিনেতা যদিও একাধারে একজন নায়ক, গায়ক, প্রযোজক ও পরিচালকও বটে। বাংলাদেশ চলচ্চিত্রশিল্পী সমিতির সাবেক এই সভাপতি আদ্যোপান্ত একজন সিনেমাপ্রেমী মানুষ। খাদের কিনারায় পড়া দেশীয় চলচ্চিত্রের এই রুগ্ন সময় অন্যদের মতো হতাশ হয়ে প্রিয় প্রাঙ্গণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেননি, বরং সর্বাত্মকভাবে চলচ্চিত্রশিল্পকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এত কিছুর পরও সিনেমায় আশার আলো দেখেন তিনি এবং বিশ্বাস করেন, দুর্দিন কাটিয়ে সিনেমায় আবার সুদিনের বাতাস বইবে। এর জন্য সিনেমার প্রত্যেকটি সেক্টরে সবার আন্তরিক অংশগ্রহণই জরুরি। বর্তমানে নায়ক আলমগীর বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের অভিভাবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সিনেমা-সংশ্লিষ্ট যেকোনো সমস্যার সমাধান খুঁজতে তারই শরণাপন্ন হন সবাই। একজন আলমগীর নীরবে নিভৃতে যেমন সিনেমার মানুষের বিপদ-আপদে পাশে দাঁড়িয়েছেন, ঠিক তেমনি সাধারণ মানুষেরও বিপদে পাশে থেকেছেন। এ কারণেই অন্যদের থেকে অনেকটাই আলাদা তিনি। বহুমুখী প্রতিভার এই মানুষটি কেবল অভিনয়কে ভালোবেসেছেন শুরু থেকে। বারবার কেবল অভিনেতার পরিচয়েই পরিচিত হতে চেয়েছেন। আজ তার অভিনয় জীবনের সুবর্ণজয়ন্তী স্পর্শ করলেন। চলচ্চিত্রের বরেণ্য এই তারকা কলেজজীবনে নাটকে অভিনয় করলেও ১৯৭২ সালের আজকের দিনে (২৪ জুন) চলচ্চিত্রাভিনেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। এই দিনে আলমগীর কুমকুম পরিচালিত 'আমার জন্মভূমি' সিনেমায় অভিনয়ের জন্য প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান তিনি। ১৯৭৩ সালের মাঝামাঝিতে 'আমার জন্মভূমি' মুক্তির আগেই সিরাজুল ইসলাম ভূঁইয়া'র 'দসু্যরানী', আজিজুর রহমানের 'অতিথি', আলমগীর কুমকুমেরই 'মমতা' ও মোহর চাঁদের 'হীরা' সিনেমায় কাজ শুরু করেন। ১৯৭৩ সালের ২৪ অক্টোবর মুক্তি পায় 'আমার জন্মভূমি' এবং ২৮ অক্টোবর মুক্তি পায় 'দসু্যরানী'। এরপর থেকে আজ-অবধি ২২৫টিরও বেশি সিনেমায় তিনি অভিনয় করেছেন। বাংলাদেশে জুটি হিসেবে শাবানা-আলমগীর (১০৬টি সিনেমা) সবচেয়ে বেশি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। মাঝে অভিনয়ের পাশাপাশি 'ঝুমকা' নামের একটি সিনেমার মাধ্যমে প্রযোজকের খাতায় নাম লেখান শক্তিমান এই অভিনেতা। এরপর আসেন পরিচালনায়। তার প্রথম পরিচালিত সিনেমা 'নিষ্পাপ'। মোস্তফা মেহমুদের 'মনিহার' সিনেমায় তিনি প্রথম গাজী মাজহারুল আনোয়ারের লেখা ও সত্য সাহার সুরে পেস্ন-ব্যাক করেন। কামাল আহমেদ পরিচালিত 'মা ও ছেলে' সিনেমায় অভিনয়ের জন্য তিনি প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হন। এরপর আরও আটবার (বাংলাদেশের নায়কদের মধ্যে সর্বোচ্চ) জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হন। আলমগীর পরিচালিত সর্বশেষ সিনেমা 'একটি আলমগীর ১৯৫০ সালের ৩ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা কলিম উদ্দিন আহম্মেদ ওরফে দুদু মিয়া ঢালিউডের প্রথম সবাক চলচ্চিত্র 'মুখ ও মুখোশ'-এর একজন অন্যতম প্রযোজক। তার গ্রামের বাড়ি নবীনগর। 'মা ও ছেলে'র পর 'অপেক্ষা' (১৯৮৭), 'ক্ষতিপূরণ' (১৯৮৯), 'মরণের পরে' (১৯৯০), 'পিতা মাতা সন্তান' (১৯৯১), 'অন্ধ বিশ্বাস' (১৯৯২), দেশপ্রেমিক (১৯৯৪) সিনেমায় অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে আরও ছয়টি জাতীয় পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৯৬ সালে তিনি নির্মাণ করেন 'নির্মম'। ২০১০-এর দশকে তিনি 'জীবন মরণের সাথী' (২০১০) ও 'কে আপন কে পর' (২০১১) সিনেমায় অভিনয়ের জন্য টানা দুই বার শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৮ সালে তার পরিচালিত তৃতীয় চলচ্চিত্র 'একটি সিনেমার গল্প' মুক্তি পায়। এই সিনেমাটিও একাধিক ক্যাটাগরিতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে।