বঙ্গবন্ধুর বায়োপিক : কে কোন চরিত্রে

প্রকাশ | ১৩ অক্টোবর ২০২৩, ১৪:৫৮

সাজু আহমেদ

সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী নিয়ে নির্মিত বহুল আলোচিত এবং প্রতীক্ষিত চলচ্চিত্র ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ দেশের সর্বাধিক ১৫৩ প্রেক্ষাগৃহে আজ মুক্তি পাচ্ছে। এর মাধ্যমে দেশ-বিদেশের অসংখ্য দর্শক ভক্ত বাংলা সিনেমার অনুরাগীর অপেক্ষার পালা শেষ হতে যাচ্ছে। ‘মুজিব : একটি জাতির রূপকার’ সিনেমাটির বিশেষত্ব হচ্ছে এটি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংগ্রামী বর্ণাঢ্য জীবনী অবলম্বনে নির্মাণ করা হয়েছে। সিনেমার বিষয়বস্তুর মতোই এর কাহিনীর চিত্রায়ণ এবং বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয়ের কারণে ইতোমধ্যে আলোচনায় এসেছেন অভিনয়শিল্পীরা। বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন উপমহাদেশের খ্যাতিমান নির্মাতা শ্যাম বেনেগাল। 

বলা হয়ে থাকে ঐতিহাসিক কোনো গল্প কাহিনী বা বিশেষ কোনো ব্যক্তির বায়োপিকে এর চরিত্র সময় এবং গেটআপ পোশাক আষাক এবং শিল্পী নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ সিনেমার ক্ষেত্রে বিষয়টি নিয়ে বেশ আলোচনাও হয়েছে। তবে সিনেমা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর চরিত্রে অভিনয়কারী শিল্পী আরিফিন শুভকে নিয়ে। সিনেমার প্রথম প্রকাশ হওয়া ট্রেইলার দেখে আরিফিন শুভর অভিনয় এবং তার গেটআপ নিয়ে সমালোচনা হয়েছে। তবে পরে গত ১ অক্টোবর প্রকাশিত ট্রেইলারে সিনেমাটির পাশাপাশি আরিফিন শুভর প্রশংসা করেছেন অনেকেই। এতে আরিফিন শুভর অভিনয়ও বেশ মানিয়েছে বলেছেন দর্শকরা। বিশেষ করে সিনেমায় বঙ্গবন্ধু চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে আরিফিন শুভ যে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন তাতে মুগ্ধ সহশিল্পীরাও। তারা বলেছেন, শুভ পারফেক্ট, কেউ বলেছেন ওর পরিশ্রমে অবাক হয়েছেন তারা। 

সিনেমায় বঙ্গবন্ধুর চরিত্রের অভিনেতা আরিফিন শুভ বলেন, বায়োপিকে অভিনয় করা যে কোনো শিল্পীর জন্য কঠিন। সিনেমায় এমন একটি চরিত্রে অভিনয় করেছি, যে চরিত্রটা বাঙালির কাছে ভীষণ আবেগের। এই সিনেমায় অন্য কোনো চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেলেও করতাম। যদি আমাকে পাসিং শটের জন্যও নেওয়া হতো অথবা স্পট বয়ের কাজও দিত, সেটিও আমার জন্য শ্যাম বেনেগাল স্যারের সাথে কাজ করা এবং জাতির পিতাকে নিয়ে একটা সিনেমা হয়েছে- তার অংশ হওয়াটাই অনেক বড় বিষয়। বঙ্গবন্ধুর চরিত্রটি ফুটিয়ে তুলতে আমরা সবাই চেষ্টা করেছি, হলে গিয়ে সবাইকে সিনেমাটি দেখার অনুরোধ করছি।

বঙ্গবন্ধুর পিতা শেখ লুৎফুর রহমান চরিত্রে অভিনয় করা চঞ্চল চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এই প্রথম এত বড় আকারে একটি কাজ, যেখানে বাংলাদেশ ও ভারত যুক্ত আছে। ভারতের বিখ্যাত নির্মাতা শ্যাম বেনেগাল সিনেমাটি বানিয়েছেন। প্রথম ২০ দিন শুটিং করে আমি দেশে ফিরে এসেছিলাম। পরে আবার গিয়ে শুটিং করেছি। একজন মানুষ একটা দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন, সিনেমাটিতে সেই সত্যি ইতিহাসের কিছু আমরা দেখতে পাব। পুরো সিনেমাটি আমরা দেখব, আশা করি ভালো লাগবে। সিনেমাটিতে বঙ্গবন্ধুর চরিত্রে অভিনয় করেছেন শুভ, সিনেমাটিতে শুভর যে চেষ্টা, সেটা সত্যিই প্রশংসনীয়। অভিনেতার জন্য অনেক বড় চাপ যখন কোনো বায়োপিকে বিখ্যাত কোনো মানুষের চরিত্রে অভিনয় করা হয়। সেই সময়ের বিভিন্ন ছবি ঘেঁটে দেখছিলাম। মাঝে দুই বছর কাটল, আমরা অপেক্ষায় ছিলাম কবে সিনেমাটি আমরা দেখতে পাব? অবশেষে সিনেমাটি মুক্তি পাচ্ছে। সবাইকে সিনেমাটি দেখার আহ্বান জানাই।

সিনেমায় খন্দকার মোশতাক আহমেদ চরিত্রের অভিনেতা ফজলুর রহমান বাবু বলেন, বায়োপিকে অভিনয় করা আসলেই ভীষণ কঠিন কাজ। শুভ তার সর্বাত্মক চেষ্টা দিয়ে সেই কঠিন কাজটিই করেছে। আমি দর্শকদের আশ্বস্ত করছি, শুভ সিনেমায় অত্যন্ত ভালো অভিনয় করেছে। সিনেমাটি নিয়ে কিছু মানুষের ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ সমালোচনায় দুশ্চিন্তার কথাও জানিয়েছেন বাবু। 

বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব রেণু চরিত্রের অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা বলেন, যে কোনো ঐতিহাসিক চরিত্রে অভিনয় করতে পারাটা সৌভাগ্যের ব্যাপার, একজন অভিনয়শিল্পী হিসেবে আমিও কাজটি উপভোগ করেছি। অবশেষে সিনেমাটি মুক্তি পাচ্ছে, খুবই ভালো লাগছে। কাজটি করার সময় অন্য রকম এক অনুভূতি কাজ করেছিল। অন্য অনেকের মতো আমিও অপেক্ষায় আছি দর্শকরা সিনেমাটিকে কীভাবে নেয়। তবে আশা করছি চরিত্রটিতে আমার অভিনয় দর্শকরা উপভোগ করবেন।

বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব রেণুর ছোটবেলার চরিত্রের অভিনেত্রী প্রার্থনা ফারদীন দীঘি বলেন, একজন শিল্পীর যে সামাজিক দায় থাকে তা পূরণ করার সুযোগ সবাই পায় না। আমার মনে হচ্ছে, আমি সেই সৌভাগ্যবান শিল্পী যে কিছুটা হলেও দায়মুক্ত হতে পেরেছি। ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে পারাটা আমার কাছে শিল্পীর সামাজিক দায় মোচনের মতো গৌরবের বিষয়। বাংলাদেশের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিব রেণু। এমন চরিত্রে অভিনয় করে আমিও ইতিহাসের অংশ হয়ে গেলাম। এই অর্জন আমার অভিনয় জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন হয়ে থাকবে।

এছাড়া ইতোমধ্যে গণমাধ্যমের কল্যাণে সিনেমার অন্যান্য চরিত্রের অভিনয়শিল্পীদের গেটআপ বিষয়ে জেনে গেছেন সাধারণ দর্শক। তাদের কাছে বেশিরভাগ শিল্পীই প্রশংসিত হয়েছে। বিশেষ করে শেখ হাসিনার চরিত্রে নুসরাত ফারিয়া, তাজউদ্দীন আহমদের চরিত্রে রিয়াজ আহমেদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম চরিত্রে সায়েম সামাদ, কামরুজ্জামান চরিত্রে সমু চৌধুরী, মনসুর আলী চরিত্রে খলিলুর রহমান কাদরি, শেখ মনি চরিত্রে মোস্তাফিজুর নূর ইমরান এবং খন্দকার মোস্তাক চরিত্রে ফজলুর রহমান বাবুকে দেখে প্রশংসা করেছেন দর্শকরা। সিনেমার অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন শেখ লুৎফুর রহমান চরিত্রে খায়রুল আলম সবুজ, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী চরিত্রে রাইসুল ইসলাম আসাদ, সায়রা খাতুন চরিত্রে দিলারা জামান, শেখ জামাল চরিত্রে শরিফ সিরাজ, টিক্কা খান চরিত্রে জায়েদ খান, মানিক মিয়ার চরিত্রে তুষার খান, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী চরিত্রে তৌকীর আহমেদ, একে ফজলুল হক চরিত্রে শহিদুল আলম সাচ্চু, জেনারেল আইয়ুব খান চরিত্রে মিশা সওদাগর, মহাত্মা গান্ধী চরিত্রে দীপক আন্তানি, জুলফিকার আলী ভুট্টো চরিত্রে রজিত কাপুর ছাড়াও সিয়াম আহমেদ, গাজী রাকায়েতসহ দেশের শতাধিক শিল্পী এ সিনেমায় অভিনয় করেছেন।

প্রসঙ্গত গত ২০২১ সালের জানুয়ারির শেষ দিকে ভারতের মুম্বাইয়ের দাদা সাহেব ফালকে স্টুডিওতে সিনেমাটির প্রথম ধাপের শুট শুরু হয়। সেখানেই ওই বছরের ডিসেম্বরে সিনেমার দৃশ্যধারণের কাজ শেষ হয়। বাংলাদেশের ৬০ ভাগ ও ভারতের ৪০ ভাগ ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে এই বায়োপিক। গত বছরের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকীতে প্রথম পোস্টার, ৩ মে দ্বিতীয় পোস্টার এবং ১৯ মে ৭৫তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে সিনেমার ট্রেলার প্রকাশ করা হয়। গত মাসে টরন্টো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সিনেমার প্রিমিয়ার শো অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া সিনেমা মুক্তি উপলক্ষে গত ১ অক্টোবর রাজধানীর একটি হোটেলে ট্রেইলার প্রকাশ করা হয়। গত ১০ অক্টোবর সিনেমা মুক্তির ঘোষণা দেওয়া হয়। এর আগে গত ৩১ জুলাই বিনা কর্তনে সেন্সর ছাড়পত্র পায় সিনেমাটি। ভারতের শ্যাম বেনেগাল পরিচালিত এবং অতুল তিওয়ারি ও শামা জায়দির ইংরেজি চিত্রনাট্য থেকে আসাদুজ্জামান নূরের তত্ত্বাবধানে সিনেমাটি নির্মিত হয়েছে। সিনেমাটিতে সহযোগী পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন দয়াল নিহালানি। শিল্প নির্দেশনার দায়িত্বে ছিলেন নীতিশ রায়। কস্টিউম ডিরেক্টর হিসেবে ছিলেন শ্যাম বেনেগালের মেয়ে পিয়া বেনেগাল। বাংলাদেশের  পর আগামী ২৭ অক্টোবর ভারতে সিনেমাটি মুক্তি পাবে। 

যাযাদি/ এস