বাংলা সিনেমা দ্রুত বদলে যাবে : মাজনুন মিজান

প্রকাশ | ৩০ অক্টোবর ২০২৩, ১০:২১

মাতিয়ার রাফায়েল

মাজনুন মিজান-একই সঙ্গে টিভি নাটক, টিভিসি, ওয়েবসিরিজ বা ওয়েবফিল্ম এবং বড়পর্দার অভিনেতা। বেশ কিছু আলোচিত সিনেমায় অভিনয় করেছেন। এর মধ্যে তার সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা ‘জ্যঁ কুয়ে ১৯৭১’।

নতুন কাজের ব্যস্ততা ...
কাজ বলতে এখন আবু শাহেদ ইমনের ‘মারকিউলিস’ ওয়েব সিরিজটি নিয়েই ব্যস্ত সময় পার করা। এ ছাড়া সম্প্রতি কানাডার টরন্টোতে একটি সিরিয়ালের কাজ শেষ করে এসেছি। আর ‘কমান্ডো’ নামে একটি সিনেমার অসম্পূর্ণ কাজ শুরু করার কথা আছে। ছবিটিতে আমি ছাড়াও আছেনÑ জাহরা মিতু, কলকাতার দেব, ফজলুর রহমান বাবু এবং শিবা শানুসহ কলকাতার বেশ কয়েকজন শিল্পী। এ ছাড়া প্রচার চলতি কয়টি সিরিয়াল আছে। এখন আমি কাজ কম করছি। কারণ, আপনারা জানেন, হয়ত আমি একটি ব্যবসায় জড়িয়েছি। এ নিয়েই এখন বেশি ব্যস্ততা যাচ্ছে।  

অভিনয়ের পাশাপাশি ব্যবসায় ...
অভিনয়টা আমি আমার আবেগের জায়গা থেকেই করে এসেছি। এটা আমার জন্য ইমোশনাল ব্যাপার ছিল। আসলে আমি চেয়েছিলাম একজন পেশাদার অভিনেতা হিসেবেই কাজ করে যেতে। এভাবেই দীর্ঘ দুই দশক পার করে দিলাম। তবে একপর্যায়ে দেখলাম, অভিনয়কে পেশা হিসেবে চালিয়ে নেওয়াটা কঠিন। তাই ব্যবসায়ের দিকে মনোযোগ দিলাম। এ ছাড়া আমার স্ত্রী, সন্তান আছে। তাদেরও সময় দিতে হবে। তাদের ভবিষ্যতের জন্যও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। আর এখন যেহেতু আয়ের একটা বিকল্প পথ হয়ে গেছে, কাজেই এখন বেছে বেছে পছন্দের চরিত্রে অভিনয় করতে পারব।

একসময়ের ভালো ভালো চরিত্রাভিয়ের শিল্পী এখন ...
আসলে আমাদের ভেতর বিষয় বাইরের অনেকেই জানেন না যে, এখানে ক্যারেক্টার আর্টিস্টদের কী চোখে দেখা হয়! শুটিংয়ে প্রধান চরিত্রের অভিনয়শিল্পীদের যে চোখে দেখা হয়, সেই তুলনায় অন্য চরিত্রাভিনয় শিল্পীদের অনেকটা তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা হয়। এমন যে তাদের মানুষ হিসেবেও গণ্য করা হয় না। এটা আসলে ভীষণ অপমানের। এগুলো আমি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। আমার সঙ্গে না হলেও অন্য অনেকের ক্ষেত্রে দেখেছি। একজন চরিত্রাভিনেতাকে শুটিংয়ে চা-নাশতা চেয়ে খেতে হয়, আবার আরেকজনের পেছনে খাবার ঘোরে। আমাকে হয়ত চা দিচ্ছেন, অন্যজনের সঙ্গে ভিন্ন কিছু। কিন্তু এই সিস্টেম তরুণদের জন্য কী বার্তা দেয়? অভিনয়ে যে নতুন আসছে, সে কী শিখবে? আসলে কী সিস্টেম আমরা ডেভেলপ করছি?

শিল্পী পারিশ্রমিক প্রসঙ্গে ...
এটা ঠিক যে, এখানে পারিশ্রমিক চরিত্র অনুযায়ী অভিনয়শিল্পীদের প্রপার ওয়েতে দেওয়া হয় না। এখানেও চরিত্রাভিনেতাদের সঙ্গে ছলচাতুরির সুযোগ নেওয়া হয়। এগুলো তো রীতিমত অন্যায়। তবে অভিনয়ের পাশাপাশি ব্যবসার সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করার পর আমি এখান থেকে মুক্তি পেয়েছি। কিন্তু আমার মতো অনেকেই আছেন, যারা আমার মতোই অভিনয়ের পাশাপাশি বিকল্প আয়ের সোর্স চাচ্ছেন, কিন্তু তাও নানা কারণে করতে পারছেন না। আমি নিশ্চিত, এমন ভুক্তভোগী শিল্পী ইন্ডাস্ট্রির ৯০ ভাগই। বাধ্য হয়েই তারা মুখ বুজে অপমান সহ্য করে শুটিং করে যাচ্ছেন।

সাম্প্রতিক মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা প্রেক্ষিত ...
এই সিনেমাগুলো রিলিজের আগে থেকেই আমি বলে আসছি, বাংলা সিনেমার অনেক সম্ভাবনা আছে। আমাদের সিনেমা আবার স্বরূপে দেখা দেবে। এখন দর্শক হলমুখী হচ্ছে, উপভোগও করছে- সেটা আমাদের জন্য গুড টাইম। কনফিডেন্টলিই বলছি, বাংলা সিনেমা দ্রুত বদলে যাবে। এখন আমাদের অনেক ভালো রাইটার নির্মাতাও আসছেন। তাদের অনেক ভালো কাজ করার ক্যাপাবিলিটি আছে। আগের কনসেপ্টে সিনেমা করলে হবে না। এখন ওয়ার্ল্ড ক্লাস সিনেমা নিয়ে ভাবতে হবে। সেটা যেমন কন্টেন্টের জায়গা থেকে মেকিংয়ের জায়গা থেকেও। 

তারকাশিল্পী না হলে দর্শক কমের ধারণা ...
তারকা বলতে কী অর্থে বলছেন? তারকার কোনো ল্যান্ডমার্ক হতে পারে না। এখানে আমার দুটি পর্যবেক্ষণ আছে। প্রথমত, যাদের নিয়ে বানানো সিনেমাকে তারকা বলছেন (‘প্রিয়তমা’ ও ‘সুড়ঙ্গ’) তাদের বাইরের অভিনয় শিল্পীদের কেন তারকা বলছেন না। শাকিব খানের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, শুধু তিনিই নন আমরা যারা অভিনয়ে আছি সবাই তারকা। দ্বিতীয়ত, শুধু তারকা বা ভালো নির্মাতা হলেই সিনেমা চলবে- ব্যাপারগুলো এমন নয়। পারস্পরিকভাবে সবাই সবাইর সঙ্গে সম্পূরক। এখানে ভালো ডিরেক্টরও লাগবে, ভালো রাইটার, গল্প, ভালো আর্টিস্ট, পারফর্মার, ক্যামেরাম্যান, এডিটরও লাগবে- টেকনিশিয়ান, পারফেক্ট লোকেশন, ভালো প্রোডাকশন সবই লাগবে। এখানেই সবই তারকা। এর সব ভালো না হলে কোনো সিনেমাই ভালো হবে না।