সা ক্ষা ৎ কা র
মেয়েরাই বেশি হতাশ থাকে
প্রকাশ | ১৮ নভেম্বর ২০২৩, ১২:১১ | আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০২৩, ১২:১৫
পুরো নাম রত্না কবির সুইটি হলেও দর্শক ও চলচ্চিত্র মহলে কেবলমাত্র রত্না নামেই পরিচিত তিনি। অভিনেতা ফেরদৌস আহমেদের বিপরীতে ‘কেন ভালোবাসলাম’ ছবির মাধ্যমে অভিষেক ঘটে একসময় ঢাকাই চলচ্চিত্রে ব্যস্ত এই চিত্রনায়িকার। চলচ্চিত্র ছাড়াও তিনি টিভি নাটক, ওয়েবসিরিজেও কাজ করেন। বর্তমানে এ শিল্পীর ব্যস্ততাসহ অন্যান্য বিষয়ে কথা বলেছেন, মাতিয়ার রাফায়েল
নতুন কাজকর্ম নিয়ে কেমন ব্যস্ততা যাচ্ছে?
এখন আমি আপাতত বড় পর্দায় কাজ করছি না। তবে এরমধ্যে ছোটপর্দায় বেশ কিছু নাটকের কাজ করেছি। ওটিটি প্ল্যাটফর্মের কাজও করছি। এখন ‘কিশোর গ্যাং স্টার’ নামে একটা ওয়েব সিরিজে কাজ করছি। এখানে আমি একটা কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করছি। এ ছাড়া আমার নিজস্ব প্রোডাকশন তামান্না ফিল্মের কাজ করছি। এই প্রোডাকশন থেকে আমার প্রযোজনায় অচিরেই একটি ছবির কাজ শুরু করব।
যেসব সিনেমায় কাজ করেছেন সেগুলোও তো মুক্তি পাচ্ছে না?
বুঝতে পারছি না কেন সেগুলো মুক্তি পাচ্ছে না। কয়েকটি সিনেমার কাজ শেষ করলাম অথচ সেগুলো পেন্ডিং অবস্থায় আছে। এরমধ্যে দেলোয়ার জাহান ঝন্টু আঙ্কেলের সরকারি অনুদানের সিনেমা ‘কাঁসার থালায় রূপালী চাঁদ’টি কেন রিলিজ দেওয়া হচ্ছে না আমি জানি না। অনেক ভালো ভালো সিনেমা আমার ঝুলে আছে।
শিল্পীদের আত্মহত্যার প্রবণতার বিষয়টা কিভাবে দেখছেন?
আসলে এই সুইসাইড প্রবণতা হঠাৎ করেই আসেনি। যখন থেকে জন্ম-মৃত্যুর শুরু তখন থেকেই এটার শুরু। এটা একেবারেই ব্যক্তিগত বিষয়। আর শিল্পীদের মধ্যে এটা হচ্ছে কাজ নিয়ে হতাশা থেকেই মূলত। বিশেষ করে আমাদের শিল্পীরা এমন যে, যখন থেকে তারা অভিনয়ে আসে তখন থেকেই তারা প্রথমে পারিপার্শ্বিক সোসাইটি থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। ব্যক্তি ‘আমি’কে নিয়েই ব্যস্ত থাকে। এরপর যখন প্রেমঘটিত ব্যাপার সংকট দেখা দেয় তখন এটা নিয়ে কারো সঙ্গে শেয়ার করতে পারে না। একপর্যায়ে শোবিজের শিল্পীদের থেকেও মেন্টালি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। কখনো নেশাগ্রস্তও হয়ে পড়ে। এমন একাকী অবস্থায় তখন সে হতাশায় আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। এ জন্য প্রতিটি শিল্পীরই উচিত সমাজ থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন না করা। প্রেমের বাইরেও একটা জগৎ রাখা উচিত, বিশেষ করে পারিবারিক ও সামাজিক জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার কারণে এমন ঘটনা ঘটে। নিজের পোশাক-আশাক, ড্রেসআপ সোসাইটির সঙ্গে যাতে মানানসই থাকে সেদিকে জোর দিতে হবে। আমাদের শিল্পীদের মনে রাখা উচিত, মানসিক সংকটে আপনজনরাই সবচেয়ে ভালো সুপরামর্শ দেবে। শোবিজের কেউ নয়। এক সময় কিন্তু আমার পাশে এই ইন্ডাস্ট্রিও থাকবে না।
এই হতাশা কি নায়কদের চেয়ে নায়িকাদেরই বেশি?
হ্যাঁ, এই হতাশা পুরুষের তুলনায় মেয়েদেরই বেশি। পুরুষদের ক্ষেত্রে একটা সুবিধা আছে, অভিনয়ের বাইরেও তাদের অন্য জগৎ আছে। যেটা নায়িকাদের নেই। নায়িকারা এমন যে, তারা যেখানেই থাকুক তার আশপাশের কারো সঙ্গেই কোনো যোগাযোগ থাকে না। তারা কখন বাসা থেকে বের হয় আর কখন বাসায় ফিরে এ নিয়ে কারোরই জানা থাকে না। অথচ, অভিনেতারা অভিনয়ের বাইরের বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছে, পারিপার্শ্বের মানুষের সঙ্গে কমিউনিকেট করছে, নানা সোসাইটির সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখছে। এ কারণে অভিনেতাদের হতাশা অনেক কম। আমি আজ পর্যন্ত দেখিনি কোনো শিল্পী ঘরে বসে থাকে। এর জন্য ভালো পরিবেশও থাকতে হবে। নারীদের জন্য দরকার ভালো পরিবেশ তৈরি করা। যাতে আমার সমস্যা হলে তাদের কাছে যেতে পারি আত্মহত্যার পথ নয়।
আপনার সময়ের নায়িকারা অনেকেই অভিনয়ে নেই- কারণ কি?
আমাদের এখানে এমন একটা ব্যাপার চলছে, বিশেষ করে অভিনেত্রীদের ক্ষেত্রে একটু বয়স হলেই পুরনো বলে বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ইন্ডাস্ট্রি খালি নতুন মুখ খুঁজে। বাইরের ইন্ডাস্ট্রিতে কিন্তু এটা হচ্ছে না। অথচ আমার সময়ে যারা হিরো ছিলেন যেমন শাকিব খান। যখন আমি নায়িকা হিসেবে কাজ করি তখন আমি অনেক ছোট। অথচ শাকিব খান এখনও সেই নায়ক হয়েই আছেন। পূর্ণিমা আপু তার নায়িকা হয়ে কাজ করেছেন। এখন বলা হচ্ছে তিনি ওল্ড বা বুড়ি হয়ে গেছেন। নায়কদের ক্ষেত্রে কিন্তু এমন বলা হয় না। শুধু নায়িকাদের ক্ষেত্রেই দর্শকের চোখের মধ্যে ধরিয়ে দেওয়া হয় যে, তারা পুরনো হয়ে গেছে। একজন নায়িকা চার/পাঁচ বছর হলেই তাকে পুরনো বলে উপেক্ষা করছে। অ্যাকচ্যুয়াল নট ব্যাড। দেখেন, জয়া আপু আমার তুলনায় এক যুগেরও বেশি সিনিয়র। অথচ, তাকে নতুন নায়িকা ধরা হচ্ছে। এটা নারী শিল্পীদের জন্য কোনো সুবার্তা বয়ে আনতে পারে না। এটা খুবই দুঃখজনক। সে কারণেও অভিনেত্রীদের মধ্যে প্রচণ্ড হতাশা ভর করে।
যাযাদি/ এসএম