ঈদে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইয়ে দেশের সিনেমা হল

প্রকাশ | ০৮ জুন ২০২৫, ১০:২৩ | আপডেট: ০৮ জুন ২০২৫, ১০:২৫

যাযাদি ডেস্ক
ছবি: সংগৃহীত

এক সময় ঢাকাসহ সারাদেশে জমজমাট ছিল সিনেমা হলগুলো। ঈদ, পূজা বা যেকোনো উৎসব ছাড়াও দর্শকদের উপচে পড়া ভিড়ে মুখর ছিল প্রেক্ষাগৃহ। এখন সেই দৃশ্য কেবলই স্মৃতি। বছরের অধিকাংশ সময় সিনেমা হলগুলো পড়ে থাকে ফাঁকা, আবার অনেক হলে তালা ঝুলছে বছরের পর বছর। সিনেমা হল যেন বেঁচে থাকে কেবল ঈদের কয়েকটা দিনের জন্য।

ঢাকার বাসাবোর নাসরিন হোসেন মিতা বলছিলেন, “আগে হাতে বিশ-পঞ্চাশ টাকা থাকলেই বন্ধুদের নিয়ে সিনেমা দেখতে যেতাম। এখন ভালো হল খুঁজে পাওয়া মুশকিল। পরিবেশ, সাউন্ড, নিরাপত্তা— কিছুই নেই।”

ঈদে খোলে, তারপর বন্ধ

বর্তমানে দেশে মোট ১৪১টি সিনেমা হল থাকলেও ঈদ ছাড়া নিয়মিত চালু থাকে মাত্র ৬০টি। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক হলে পুরনো সিনেমা চলে, নতুন ছবি দেখা যায় কেবল বড় উৎসবেই। ঈদে মুক্তি পাওয়া এক-দুটি হিট সিনেমার কল্যাণে কয়েক দিন জমজমাট থাকে কিছু হল। তারপর আবার নেমে আসে নীরবতা।

পরিবেশক শহিদুল মিয়া বলেন, “হল চালু রাখতে খরচ হয় অনেক, অথচ দর্শক আসে না। তাই ঈদ ছাড়া বেশিরভাগ হল ভাড়া দিয়ে বা বন্ধ রেখেই চলতে হয়।”

প্রেক্ষাগৃহের করুণ চিত্র

ঢাকার আনন্দ, ছন্দ, আজাদসহ একাধিক হল ঘুরে দেখা গেছে— ভাঙা চেয়ার, নষ্ট ফ্যান, দুর্গন্ধে ভরা পরিবেশ। কোথাও আবার বৃষ্টির পানিতে পর্দার সামনেই জমেছে জল। অনেক হলে সাউন্ড সিস্টেম নেই, নেই পর্যাপ্ত আলো-বাতাস।

এক দর্শক জানালেন, “১০০ টাকা টিকিট কিনে ভিতরে গিয়ে দেখি গরমে দম বেরিয়ে যাচ্ছে, চেয়ার ভাঙা, আশপাশে দুর্গন্ধ। সিনেমা না দেখে বেরিয়ে আসতে বাধ্য হই।”

ঢাকার বাইরের অবস্থাও আরও ভয়াবহ

ময়মনসিংহ, রংপুর, বরিশাল, সিলেট— সব জেলায় একই ছবি। একসময়কার আলো ঝলমলে সিনেমা হলগুলো এখন রূপ নিয়েছে গুদামঘর, মার্কেট বা দোকানে। কোনো কোনো হলের ভেতরে এখন হাঁটু সমান পানি জমে থাকে। কর্মচারীর অভাবে একসময় ১২ জনের জায়গায় এখন ৩ জন দিয়ে চালানো হয় হল।

নির্মাতাদের আক্ষেপ: বছরে সিনেমা হয় শুধু ঈদের জন্য

পরিচালক শাহিন সুমন বলেন, “সারা বছরে ব্যবসা হয় না বলেই সবাই ঈদের জন্য সিনেমা বানান। ঈদের বাইরে সিনেমা মুক্তি দিলে লগ্নি উঠেই না।”

প্রযোজক রেদওয়ান রনি বলেন, “হলগুলোর পরিবেশ খুব খারাপ, টিকিট বিক্রির স্বচ্ছ হিসাব পাওয়া যায় না। দর্শক চাইলে হলই খুঁজে পায় না।”

সমাধান কী? সরকারি সহায়তা ও সংস্কার

হল মালিক ও নির্মাতারা মনে করেন, পরিস্থিতির উন্নয়নে সরকারি উদ্যোগ ছাড়া সিনেমা হল ব্যবসা টিকবে না। হল সংস্কারের জন্য সরাসরি ভর্তুকি, ট্যাক্স রেয়াত ও প্রেক্ষাগৃহ আধুনিকীকরণে সহায়তার আহ্বান জানানো হয়েছে।

প্রযোজক মিঠু খান বলেন, “ভালো সাউন্ড, আলো, বসার সিট না থাকলে সিনেমা দিয়ে লাভ নেই। সরকার যদি শর্ত সাপেক্ষে অনুদান দেয়, তাহলে হল টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে।”