উপকূল থেকে হারিয়ে যাচ্ছে জাতীয় পাখি

প্রকাশ | ২৭ অক্টোবর ২০২০, ১৬:২৩

মো. মামুন তানভীর, দশমিনা (পটুয়াখালী)
পাখির কিচিরমিচির শব্দ ক্লান্তি ভুলিয়ে দেয় মুহুর্তে। অগনিত পাখির ওড়াউড়ি দৃশ্যমালায় যে নান্দনিকতার সৃষ্টি করে তা এক কথায় অতুলনীয়। পাখি নিজের ছন্দে কিচিরমিচির শব্দে মাতিয়ে রাখে প্রকৃতি।
 
এককথায় পাখির কিচিরমিচির শব্দ মানুষকে অন্তত কিছুক্ষণের জন্য হলেও ভুলিয়ে রাখতে পারে জীবনের সব ক্লান্তিগুলোকে। পাখিরা বনবাদাড়ে নিজেদের আবাসস্থল ও আড্ডাখানা গড়ে থাকে।  এক সময়ে গ্রাম-গঞ্জের মাঠে-ঘাটে, বন-জঙ্গলে, গাছে গাছে জাতীয় পাখি দোয়েলসহ নানা ধরনের পাখি দেখা গেলেও কালের আবর্তে এখন আর চিরচেনা সেই পাখি দেখা যায় না। পাখি দেখার কলরবে মুখর গ্রামের মেঠো পথ এখন পাখিশূন্য হতে চলেছে। বনে-জঙ্গলে গাছে পাখি দেখার সেই অপরূপ দৃশ্যপট দিন দিন পাল্টে যাচ্ছে।
 
বনাঞ্চলের পরিবেশ দূষণ, নির্বিচারে গাছ কাটা, জমিতে কীটনাশকের অতিরিক্ত ব্যবহার, পাখির বিচরণ ক্ষেত্র ও খাদ্য সংকট আর জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে বিলুপ্তির পথে দোয়েলসহ দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন পাখি।
 
পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার সদর ইউনিয়নের কাটাখালী গ্রামে  গিয়ে কথা হয় বৃদ্ধ রহমান মিয়ার সাথে। তিনি জানান, কয়েক বছর আগেও মানুষের ঘুম ভাঙ্গাতো পাখির ডাকে। পাখির কলকাকলিই বলে দিত এখন সকাল, শুরু হোক দৈনন্দিন কর্মব্যস্ততা। কিন্তু এখন যেন পাখির ডাক হারিয়ে গেছে, এখন গাছ-গাছালিতে পাখির ডাক নেই। আমাদের দেশের ঐতিহ্য ও শিল্পচর্চার সাথে পাখির যে যোগ, তা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই।
 
একই এলাকার স্থানীয় কয়েকজন বৃদ্ধা ও যুবকরা জানান, পাখির কিচিরমিচির শব্দে শিহরণ জাগানো সেই সুর-শব্দ এখন আর তেমন শোনা যায় না। সকাল, দুপুর ও সন্ধ্যায় বাঁশ ঝাড়, আমের বাগান, বাড়ির ছাদে যেসব পাখি সব সময় দেখা যেত সেই পাখি এখন আর চোখে পড়ে না। তবে কম সংখ্যক টিয়া, ঘুঘু, কাক, মাছরাঙ্গা, ইত্যাদি পাখি শহর ও গ্রামগঞ্জের বিভিন্ন জায়গায় দেখা গেলেও জাতীয় পাখি দোয়েল তেমন আর মানুষের চোখে পড়ে না। তাই পাখি প্রিয় অনেক সৌখিন মানুষের বাড়ির খাচায় বন্দি করে পাখি পালন করতে দেখা যায়।
 
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে দোয়েলসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি বিলুপ্তির পথে। নতুন প্রজন্ম ওই পাখি দেখতে পায় না। তাছাড়া শিকারীদের দৌরাত্ম্য ও পাখিশূন্য হয়ে পড়ছে বনাঞ্চল। তাই কমছে পাখির সংখ্যা। বাধ্য হয়ে বাড়িতে বসেই বেশকিছু প্রজাতির পাখি পালন করছেন পাখি প্রেমিরা। 
 
দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের স্মৃতির সঙ্গে জড়িত সেসব পাখিগুলোর ডাক ও সুর মানুষকে মুগ্ধ করতো সেই পাখিই ক্রমান্বয়ই হারিয়ে যেতে বসেছে। বিশেষ করে দোয়েল পাখির এখন আর দেখাই মিলছে না।
 
কয়েকজন বয়স্কদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দোয়েল, ময়না, কোকিল, শালিক, চড়ইসহ বিভিন্ন দেশীয় প্রজাতির পাখি গ্রামাঞ্চলের বিলে-ঝিলে, ঝোপে-ঝাড়ে, গাছের ডালে, বাগানে কিংবা বাড়ির আঙ্গিনার ডালে বসে তার সুরের ধ্বনিতে মুগ্ধ করতো। এই পাখির কিচির-মিচির শীষ দেয়া শব্দ এখন আর কানে শোনা যায় না। সকাল, দুপুর ও সন্ধ্যায় বাঁশ গাছে, আমের ডালে, সজিনা গাছে, বাড়ির ছাদে যে পাখি সব সময় দেখা যেত সেই পাখি এখন আর চোখে পড়ে না।
 
তাই আগের মতো বনে জঙ্গলে তেমন পাখির দেখা মিলছে না। জমিতে কীটনাশক ব্যবহারের ফলে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় পাখি মরে যাচ্ছে, আবার খাদ্য সংকট ও আবাসস্থল কমে যাওয়ায় পাখি বংশ বিস্তার করতে পারছে না, এতে কমে যাচ্ছে পাখি। তাই পরিবেশ রক্ষা জরুরি।
এছাড়া মুনাফার আশায় বনে চোরা শিকারীরা বিভিন্ন ফাঁদ পেতে পাখি শিকার করে বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে। এতে শিকারের হাত থেকে বাঁচতে জীবন রক্ষার্থে পাখিরা অন্যত্র চলে যাচ্ছে। অনেক সময় তাদের হাতে মারাও যাচ্ছে পাখি। অথচ সংশ্লিষ্টদের তেমন কোন তৎপরতা নেই।
 
উপজেলা পাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: আবু সাইম আল সালাউদ্দিন জানান, ফসলের মাঠে কিটনাশক ব্যবহারের ফলে পোকামাকর মারা যায়। ফলে পাখিরা খাদ্য সংকটে ভোগে। আবার ফসলের কিটনাশক খেয়ে পাখিরা মারা যাচ্ছে। একই সাথে বনাঞ্চল কেটে উজাড় করে ফেলা হচ্ছে। এতে করে পাখি তার আবাসস্থল হাড়াচ্ছে। পাখি বংশ বিস্তার করতে পারছে না। পাখির রক্ষায় সবাইকে সচেতন হতে হবে। বন্ধ করতে হবে পাখি শিকার।