মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সাফারি পার্কে ফুটল উটপাখির ৪ ছানা

গাজীপুর প্রতিনিধি
  ১২ জানুয়ারি ২০২১, ১৮:২২

করোনা পেন্টামিকে গাজীপুর বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে বেশ কিছু প্রাণী বাচ্চার জন্ম দিয়ে সুখবর ছড়িয়েছিল দেশব্যাপী। করোনাকালে সংক্রমণ রোধে দীর্ঘসময় সাফারি পার্ক বন্ধ রাখা হয়েছিল। বন্ধ থাকার এ সময়টুকুতে প্রাণীরা নিজেদের মতো করে পরিবেশ পেয়ে আশানুরূপ ব্রিডিং করেছে। তবে কিছু দিন হলো পার্ক উন্মুক্ত করা হয়েছে দর্শনার্থীদের ঘুরে বেড়ানো।

এরই মধ্য একেবারে ভিন্ন রকমের সুখবর দিল পার্ক কর্তৃপক্ষ। বালুময় বিস্তৃর্ণ মরুভুমি অঞ্চলের প্রাণী উটপাখির ডিম থেকে ইনকিউভেটরের (তাপযন্ত্র) মাধ্যমে চারটি বাচ্চা ফুটিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছে পার্ক কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে পার্কে আনন্দের হইচই পড়ে গেছে। আরো কিছু ডিম ইনকিউটেভেটরে এখনো রাখা আছে। আরো উটপাখির বাচ্চা ফুটবে বলে আশা করছে পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তবিবুর রহমান। এর আগেও পার্কে প্রাকৃতিক পরিবেশে দুইবার উটপাখির বাচ্চা ফুটেছিল। প্রতিবছরই উটপাখি নিয়মিত ডিম দিলেও বাচ্চা না ফোটা নিয়ে ছিল অসন্তুষ্টি। তবে এবার নতুন ভাবনা ইনকিউভেটরে সে অসন্তুষ্টি আর সংশয় কেটে যাবে এমনটি ধারণা করছেন জেলার শ্রীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে দায়িত্বরত কর্মকর্তরা।

ওয়াইল্ড লাইফ সুপার ভাইজার মো. আনিসুর রহমান জানান, ২০১৩ সালে দুই দফায় দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে পশুপাখি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মের্সাস ফ্যালকন ট্রেডার্সের মাধ্যমে ৬টি উটপাখি আমদানি করা হয় সাফারি পার্কের জন্য। পরে পার্কের দক্ষিণ পশ্চিম পাশের ইমু পাখির বেষ্টনীর পাশের বেষ্টনীতে রাখা হয় উটপাখিগুলো। কিছু দিন পর থেকেই নিয়মিত ডিম পাড়তে থাকে নারী উটপাখিগুলো। পরে ২০১৭ সালের জানুয়ারীতে প্রাকৃতিকভাবে উটপাখির একটি বাচ্চা ফোটে। এর পরের বছরই আরো দুটি বাচ্চা ফোটে।

তারা আরো জানান, প্রতি বছরই পর্যাপ্ত পরিমান ডিম পাড়লেও বাচ্চা ফোটছিল না। এ নিয়ে কতৃর্পক্ষ বেশ অসন্তুষ্টিতে ছিলেন। এবার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বিশেষ চিন্তা ভাবনা থেকেই ইনকিউভেটরের মাধ্যমে উটপাখির ডিম থেকে উউটপাখির বাচ্চা ফোটানোর চেষ্টা করেন। এর আগে ময়ূরের বাচ্চা ফোটানো হয়েছিল ইনকিউভেটরের মাধ্যমে। এবার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দুরদর্শী সে চিন্তা থেকেই ইনকিউভেটরের মাধ্যমে উটপাখির ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানোর সফলতা পাওয়া গেল।

ওয়াইল্ড লাইফ সুপার ভাইজার মো. আনিসুর রহমান জানান, সমতলে বসবাস করা আকারে সবচেয়ে বড় হলো উটপাখি। উটপাখি ক্যাভটিবে (আবদ্ধস্থান) ৬০ বছর বেঁচে থাকে পারে। অপর দিকে ন্যাচারে (প্রকৃতিতে) ৪০-৪৫ বছর বাঁচে। এদের ওজন প্রায় ৬৩ কেজি থেকে ১৪৫ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে এভারেজ পুরুষের ওজন ১১৫ কেজি ও নারীর ওজন ১০০ কেজি হয়। উটপাখি লম্বা পায়ে ঘন্টায় ৭০ কিমি গতিতে দৌঁড়াতে পারে।

উটপাখির ছানাদের দেখবালের দায়িত্বে থাকা জুনিয়র ওয়াইল্ড লাইফ স্কাউট সমির সুর চৌধুরী জানান, নিয়মিত ঘরের তাপমাত্রা মাপা হয়। কলমি শাক, বাধা কপি কুুচি ও স্টাটার ফিড খেতে দেওয়া হয় বাচ্চাদের।

অপর ওয়াইল্ড লাইফ সুপার ভাইজার সরোয়ার হোসেন খান জানান, পৃথিবীতে সবচেয়ে আকারে বড় পাখি হচ্ছে উটপাখি। এদের ডিমও আকারে সবচেয়ে বড় হয়ে থাকে। পুরুষ পাখির শরীর কালো রঙ আর লেজ সাদা রঙের হয়ে থাকে। অপর দিকে নারী উটপাখির সারা শরীরই দূসর বাদামী রঙের হয়। বালুময় মরু অঞ্চলে এদের বেশি বিচরণ করে থাকে। সাহারা মরুভুমির উত্তর ও দক্ষিণ অন্য দিকে পূর্ব আফ্রিকা আঞ্চলে উটপাখি বেশি বসবাস করে। আফ্রিকান রেইন ফরেস্ট দক্ষিন অঞ্চল, আরবের বালুময় অঞ্চলেও রয়েছে এদের অবাদ বসবাস। সাভানা ফরেস্ট (ুঝুপ ঝাপড়া অঞ্চল), উটপাখি চলাফেরা করতে বেশি স্বাচ্ছ্যন্দ বোধ করে। ন্যাচারে এদের অনেক শত্রু মোকাবেলা করে বেঁচে থাকতে হয় লায়ন, লেপার্ড, মুঙ্গোস,বাঘ, শেয়াল এদের প্রধান শত্রু।

তিনি আরো বলেন, ন্যাচারে ৫-৫০টি পাখি দলবদ্ধ হয়ে বসবাস করে। পুরুষ পাখি দুলদুলে (বালুময়) স্থানে বাসা তৈরী করে। রাতে মেইল (পুরুষ) উটপাখি ডিমে তা দেয় আর দিনে ফিমেইল (নারী) উটপাখি ডিমে তা দিয়ে থাকে। উটপাখি ২-৪ বছরে প্রাপ্তবয়স্ক হয়। একটি পাখি ৫-১০ ডিম পাড়তে পাড়ে। এক বাসায় একাধিক মা উটপাখি ডিম দিয়ে থাকে। উটপাখি ডিমে ৪০ দিন তা দেওয়ার পরে বাচ্চা ফোটে।

সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (সহকারী বন সংরক্ষক) মো.তবিবুর রহমান বলেন, পার্কের উটপাখিগুলো সব সময় ব্রিডিং করে। সময়মত পর্যাপ্ত ডিমও দেয়। কিন্তু বাচ্চা ফোটতনা নিয়মিত। সমানে ডিম নষ্ট হতো। এ নিয়ে অসন্তুষ্টি ছিল আমাদের মাঝে। তবে এ বেষ্টনীতেই দুবার প্রাকৃতিকভাবে বাচ্চা ফোটেছিল।

তিনি বলেন, প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে পরার্মশ করে এবার ভিন্ন চিন্তা করে ইনকিউভেটরের (তাপযন্ত্র) মাধ্যমে উটপাখির ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানোর চেষ্টা করি। সাইফুল ইসলাম নামে একজন ভদ্রলোকের কাছ থেকে ইনকিউভেটরের মাধ্যমে উটপাখির ডিম থেকে বাচ্চা ফোটার বিষয়টি জানতে পারি। পরে তার সাথে যোগাযোগ করে তার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতা ও নির্দেশনায় কাজ শুরু করি। এবার ইনকিউভেটরের মাধ্যমে উটপাখির বাচ্চা ফোটানোর সাফল্য পাওয়া গেল।

তবিবুর রহমান আরো জানান, এ পদ্ধতি অবলম্বন করে এখন নিয়মিত উটপাখির বাচ্চা পাওয়া যাবে বলে আশা করছি। এ সাফল্য আমাদের সকলের প্রচেষ্টার ফসল। এ সাফল্য আমাদের বড় আশা জাগিয়েছে।

যাযাদি/এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে