শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

চকরিয়ায় মাটি লুট ও বালু উত্তোলন চলছেই

চকরিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
  ২৬ জানুয়ারি ২০২১, ২১:১৬

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বিস্তীর্ণ জনপদে বাধাহীন মাটি কেটে আবাদি জমিকে পুকুর এবং বালু উত্তোলনে পাহাড় টিলাকে বিলে রূপান্তর চলছে প্রতিদিন। পরিবেশ অধিদপ্তর কিংবা জেলা প্রশাসনের কোনো ধরনের ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে সংরক্ষিত বনের পাহাড়-টিলা কেটে এবং আবাদি জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে মাটি লুটের মহোৎসব চলছে। এতে উজাড় হচ্ছে সংরক্ষিত বনাঞ্চল। বেহাত হয়ে যাচ্ছে সরকারি ভূসম্পদ।

স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী একাধিক চক্র কয়েক মাস ধরে নির্বিচারে পাহাড় এবং চাষের জমি কেটে অন্তত শতকোটি টাকার মাটি লুটে নিয়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন পরিবেশ সচেতন মহল।

অপরদিকে বর্তমানে উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের পাশে বগাচতর এলাকায় প্রভাবশালী চক্র জমির মালিকদের কাছ থেকে কিছু জমি ইজারা নিয়ে স্কেভেটর দিয়ে মাটি কেটে লুটে নিচ্ছে। এতে আবাদি জমি শ্রেণি পরিবর্তনের কারণে পুকুরে পরিণত হচ্ছে। অন্তত দুইশ একর চাষের জমি ভেঙে ছড়াখালে একাকার হয়ে গেছে। চাষের জমি রক্ষা করতে চরম হিমশিম খাচ্ছেন ভুক্তভোগী জমিমালিক ও চাষিরা।

স্থানীয় ভুক্তভোগী জমিমালিক আবুল কাশেম, নেজাম উদ্দিন, দেলোয়ার সওদাগর, চুন্নু মিয়া, নুরুল ইসলাম মাস্টার, মাহাবুব আলমসহ অনেকে অভিযোগ তুলেছেন, কয়েক মাস ধরে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল কয়েকজনের কাছ থেকে কিছু জমি ইজারা নিয়ে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে মাটি কেটে লুটে নিচ্ছে। শক্তিশালী স্কেভেটর দিয়ে জমি থেকে মাটি কেটে নেওয়ার কারণে ওই এলাকার আবাদি জমি বর্তমানে পুকুরে পরিণত হয়েছে।

এ অবস্থার কারণে ওই এলাকায় যেসব চাষের জমি এখনো রক্ষিত আছে, তার বেশির ভাগই ভয়াবহ ভাঙনের মুখে পড়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, শুধু ডুলাহাজারা ইউনিয়নে নয়, নানা কৌশলে পাহাড় কাটা চলছে উপজেলার খুটাখালীর নোয়াপাড়া, গর্জনতলী, সেগুনবাগিচা, মানিকপুর, কাকারা, কৈয়ারবিল, বরইতলী, হারবাং, বিএমচর ইউনিয়নের বিভিন্ন পাহাড়ি গ্রামে। ছাড়া চকরিয়া পৌরশহরের বিভিন্ন স্থানে উত্তোলন হচ্ছে বালি। জলাভূমি ভরাট করে চলছে বিভিন্ন দখল বাণিজ্য।

সংশ্লিষ্ট এলাকার একাধিক প্রভাবশালী চক্র কক্সবাজার উত্তর, চট্টগ্রাম দক্ষিণ ও উপকূলীয় বন বিভাগের মালিকানাধীন পাহাড় এবং সামাজিক বনায়নের জায়গা দখল করে ও চাষের জমি শক্তিশালী স্কেভেটর দিয়ে কেটে মাটি লুটের বাণিজ্যে মেতে উঠেছে।

কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের চকরিয়া উপজেলার ফাসিয়াখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মাজহারুল ইসলাম জানান, এখন আমাদের এরিয়ায় কোনো ধরনের পাহাড় কাটা নেই। অবশ্য আগে কয়েকটি এলাকায় পাহাড় কাটা হলেও সেই ঘটনায় ইতোমধ্যে বন বিভাগের পক্ষ থেকে চারটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

চকরিয়া উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বনের পাহাড় এবং চাষের জমি কেটে মাটি লুট এবং এ ব্যাপারে কেউ পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ছাড়পত্র পেয়েছে কি না, জানতে চাইলে কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নাজমুল হুদা জানান, পাহাড় এবং চাষের জমি কাটার জন্য কাউকে ছাড়পত্র দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। যেখানে পাহাড় কাটা ও জমির শ্রেণি পরিবর্তন করার ঘটনা একটি বেআইনি কাজ, সেখানে অনুমোদন পাবে কীভাবে?

তিনি আরও জানান, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পাহাড় কাটা ও মাটি লুটের বিরুদ্ধে আমরা প্রতিদিনই কোনো না কোনো উপজেলায় অভিযান পরিচালনা করছি। পাহাড় ও জমি কেটে শ্রেণি পরিবর্তনের কারণে পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে। লিখিত অভিযোগ পেলে অবশ্যই জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

যাযাদি/এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে