শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নাব্য সংকটে নদীতে আটকে আছে জ্বালানি তেলবাহী জাহাজ

চিলমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
  ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ২১:২৬

দীর্ঘদিন ধরে কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলায় ভাসমান তেল ডিপো যমুনা ও মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের বার্জ দুটি তেলশূন্য রয়েছে। ডিপো দুটি তেলশূন্য থাকায় এলাকায় তেলের সংকট দেখা দিয়েছে। এদিকে তেল নিয়ে আসা মেঘনা পেট্রোলিয়ামের একটি জাহাজ নাব্য সংকটে গত ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে বকশিগঞ্জ উপজেলার সানন্দবাড়ীর আনন্দবাজার এলাকায় আটকে আছে। বিআইডব্লিউটিএর সহায়তা পেলে জাহাজটি চিলমারী আসতে পারবে বলে ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টরা জানান।

জানা গেছে, ১৯৮৯ সালে কুড়িগ্রামের চিলমারীতে ভাসমান তেল ডিপো পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা তিনটি কোম্পানি স্থাপিত হয়ে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর ও লালমনিরহাট জেলায় তেল সরবরাহ করে আসছিল। তেল ডিপোটি স্থাপনের কয়েক বছরের মাথায় পদ্মা তেল কোম্পানিটি বার্জ মেরামতের অজুহাত দেখিয়ে অন্যত্র সরিয়ে নেয়। এরপর থেকে মেঘনা ও যমুনা ওয়েল কোম্পানি দুটি এ অঞ্চলে তেল সরবরাহ করে আসছে। এর মধ্যে যমুনা তেল ডিপোর অভ্যন্তরীণ কোন্দলে গত বছর জানুয়ারি থেকে ডিপোটি তেলশূন্য হয়ে পড়ে। এমনকি ডিপোটির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার পদটিও শূন্য রয়েছে প্রায় ১ বছর ধরে। অপরদিকে মেঘনা তেল ডিপোটি গত ১৩ ডিসেম্বর থেকে তেলশূন্য থাকার পর কোম্পানির এমটি মধুকর নামে একটি জাহাজ ২ লাখ ৬৭ হাজার লিটার তেল নিয়ে চিলমারী অভিমুখে রওনা দেয়।

গত ১০ ফেব্রুয়ারি জাহাজটি নাব্য সংকটে বকশিগঞ্জ উপজেলার সানন্দবাড়ীর আনন্দবাজার এলাকায় আটকে রয়েছে (ক্রাক গ্রাউন্ড করে)। সেখান থেকে জাহাজটি উদ্ধারের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে জাহাজটির সুপারিনটেনডেন্ট সেখানেই তেল খালাসের জন্য চিলমারী ডিপো সুপারের কাছে চিঠি লেখেন।

স্থানীয় সূত্র জানায়, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর ও লালমনিরহাট এলাকার কৃষি সেচ মৌসুমে ভাসমান তেল ডিপো থেকে প্রতিদিন প্রায় এক হাজার পাঁচশ ব্যারেল বা তিন লাখ লিটার তেল সরবরাহ করা হয়। এছাড়াও বিভিন্ন নদনদীতে চালিত নৌকা, ড্রেজার মেশিন, জমিচাষের ট্রাক্টর, বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চালিত জেনারেটর, মাহেন্দ্র গাড়ি, নছিমন-করিমনসহ বিভিন্ন ইঞ্জিনচালিত যন্ত্র চালনার জন্য প্রতিদিন আরও প্রায় আড়াইশ থেকে তিনশ ব্যারেল বা ৫০-৬০ হাজার লিটার তেলের চাহিদা রয়েছে। ডিপো দুটিতে দীর্ঘদিন থেকে তেলশূন্য থাকায় তেলের চাহিদা পূরণ করতে অতিরিক্ত অর্থ গুনতে হচ্ছে ভোক্তাদের।

এতে প্রায় প্রতিদিন তিন লাখ টাকা অতিরিক্ত লেনদেন হচ্ছে এলাকায় সৃষ্ট তেল বাজারে। শুধু তাই নয়, এভাবে চলতে থাকলে ডিলারদের হাতে থাকা দীর্ঘ দিনের খুচরা বিক্রেতা ও ক্রেতারা হাত ছাড়া হয়ে যাবেন। ফলে চিলমারীর তেল ব্যবসায়ীরা খুচরা বিক্রেতাদের কাছে পড়ে থাকা বাকি অর্থ উত্তোলন করতে না পারায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়বেন। অপরদিকে ডিপো দুটি বন্ধ থাকায় প্রতিদিন খেটে খাওয়া প্রায় তিনশ শ্রমিক কাজ না থাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করে আসছেন।

চিলমারী ভাসমান তেল ডিপো দুটিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা তেল বাজার জোড়গাছ বাজারে সরেজমিন গিয়ে কথা হয় খুচরা তেল ব্যবসায়ী বাদল, রাশেদুল ইসলাম, মমিনুল, ধীরেন্দ্র নাথ, সুইটসহ অনেকের সঙ্গে। তারা বলেন, মেঘনা ও যমুনা তেল ডিপো থেকে তেল নিতে অতিরিক্ত খরচ না থাকায় আমরা প্রতি লিটার তেল ৬৫ টাকায় বিক্রি করেছিলাম। বর্তমানে দূর থেকে তেল আনতে পরিবহণ খরচ বেশি হওয়ায় বেশি দামে তেল বিক্রি করছি। খুচরা তেল বিক্রেতা মমিনুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ডিপো দুটি তেলশূন্য থাকায় জ্বালানি তেলের ওপর নির্ভরশীল ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

এ ব্যাপারে মেঘনা ওয়েল কোম্পানির ডিপো সুপার (অপারেশন) মো. আইয়ুব আলী বলেন, তেল নিয়ে আসা একটি জাহাজ নাব্য সংকটে নদীতে আটকে পড়ায় এটি নিরাপত্তাহীন অবস্থায় রয়েছে। বিআইডব্লিউটিএর কর্তৃপক্ষ সুদৃষ্টি দিলে জাহাজটি নিরাপদে ডিপোতে আসতে পারবে।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে