শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সাফারি পার্ক নির্মাণে হুমকির মুখে কমলার শহর!

জুড়ি (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি
  ১১ এপ্রিল ২০২১, ২০:৩৫

মৌলভীবাজারের জুড়ি উপজেলার সীমান্তবর্তী গোয়ালবাড়ী ইউপিতে প্রস্তাবিত সাফারি পার্ক নির্মাণে ৪টি গ্রামের ৩৬৪টি পরিবারের বসতবাড়ি রক্ষা, কমলা বাগানকে বাঁচিয়ে রাখতে কৃষিনির্ভর ৪টি গ্রামের বসতবাড়ি ছেড়ে প্রস্তাবিত সাফারি পার্ক নির্মাণের দাবিতে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার জরিছড়া, লালছড়া, রুপাছড়া, ডোমাবাড়ী গ্রাম, কমলা চাষি ও স্থানীয় শিক্ষার্থীর ব্যানারে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধনের বক্তারা উল্লেখ করেন, ৪টি গ্রামে ৩৬৪টি পরিবারের মধ্যে প্রায় তিন শতাধিক পরিবার কমলা, বাতাবিলেবু, জাম্বুরা, আদালেবু, হাতকরাসহ লেবুজাতীয় কৃষি ফসলি বাগানের ওপর নির্ভর করে চলে তাদের পরিবার। সম্প্রতি সরকার অত্রাঞ্চলের কমলাচাষিদের সমন্বয়ে ওই এলাকার কমলা শিল্প হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে সিলেট বিভাগীয় কমিশনার তৎকালীন মো. মোস্তাফিজুর রহমান (এনডিসি) লাঠিটিলার কমলা বাগান পরিদর্শন করে এলাকার কমলা বাগান নিয়ে একটি শিল্প তৈরির উদ্যোগ নেন। সম্প্রতি লক্ষ করা যাচ্ছে, আমাদের এলাকায় সাফারি পার্ক নির্মাণের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে বিভিন্ন ধরনের জরিপ/ সার্ভে কার্যক্রম শুরু হয়। এতে প্রাথমিকভাবে আমরা কিছুই বুঝতে পারিনি। সপ্তাহ খানেক পর যখন আমরা জানতে পারলাম স্থানীয় এই গ্রামবাসীকে উচ্ছেদ করে এখানে একটি সাফারি পার্ক নির্মাণ করা হবেÑ এমন খবর পেয়ে রুপাছড়া ও লালছড়ায় দুজন লোক ইতোমধ্যে হার্টএট্যাক করেন।

শতবর্ষের সাজানো বাড়ি, ঘর, কৃষি ফসলি বাগান ছেড়ে তাদের জীবিকা ও সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে হুমকির মধ্যে রয়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা। প্রস্তাবিত সাফারি পার্ক নির্মাণ হলে সেটা আমাদের এলাকার বৃহত্তর উন্নয়নের স্বার্থে একটি মাইলফলক বলে আমরা মনে করি। আমাদের লাঠিটিলা বিটের মোট আয়তন ৫৬৩১.৪০ হেক্টর। তন্মধ্যে সড়ক ও জনপথ বিভাগের সিএন্ডবি সড়কের দিলখুশা বাজার ইসলামাবাদ চা বাগান সীমানা থেকে উত্তর দিক দিয়ে জরিছড়া লালছড়া ও রুপাছড়া গ্রামের ঘনবসতিপূর্ণ রয়েছে মোট ৩৬৪টি পরিবার। এছাড়াও তিনটি মসজিদ, একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বেসরকারি দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি সরকারি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। পরিবারের মধ্যে প্রায় ৩৫০টি পরিবারই কৃষিনির্ভর। প্রতিদিন গড়ে ৪ শতাধিক লোক ৪টি গ্রামের মধ্যে শতাধিক বর্ষের পুরানো প্রতিষ্ঠিত কমলা, আদা, জাম্বুরা, বাতাবিলেবু, হাতকরাসহ বিভিন্ন প্রজাতির কৃষি ফসলি বাগানে কর্মে নিয়োজিত।

বাগানের ওপর নির্ভর করে চলে ৪টি গ্রামের ৩৬৪টি পরিবার। পরিবারের অভিভাবকরা স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার খরচ, চিকিৎসাসহ সার্বিক ব্যয় বহন করে কৃষি ফসলি বাগানের ওপর নির্ভর করে। গ্রামের ঘনবসতিপূর্ণ পরিবারগুলোকে উচ্ছেদ/পুনর্বাসন করে প্রস্তাবিত পার্ক বাস্তবায়ন হলে আবাসস্থল পরিবর্তনের ফলে ৪টি গ্রামের স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কা করা হয়েছে। প্রস্তাবিত পার্ক নির্মাণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিভাগের মোট জমির চাহিদা ১০০০ একর। সেক্ষেত্রে এখানে আমাদের ঘনবসতিপূর্ণ উল্লিখিত ৪টি গ্রাম ও শতাধিক বর্ষের লালিত বসতবাড়ি ও কৃষি ফসলি বাগান রক্ষা করে গ্রামের শেষ সীমানা থেকে উত্তর ও পূর্বদিকে চাহিদার চেয়ে বেশ কয়েক গুণ জমি পতিত বিদ্যমান।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে