বেড়িবাঁধের অপেক্ষায় ৫০ বছর : অরক্ষিত ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলা

প্রকাশ | ২৫ মে ২০২১, ১৭:০৮

ঝালকাঠি প্রতিনিধি

ঝালকাঠির কাঁঠালিয়ায় বিশখালি নদীতে বেড়িবাঁধ না থাকায় ঘূর্ণিঝড় ইয়াস’র শঙ্কায় আতঙ্কে কাটছে নদী তীরবর্তী ১৫ গ্রামের হাজার হাজার মানুষের। বেড়িবাঁধের অপেক্ষায় জেলার উপকূলীয় কাঁঠালিয়া উপজেলাবাসীর ৫০ বছর  কেটে গেছে।

 

ঘূর্ণিঝড় সিডর, আইলা ও আম্ফানে জেলার সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলা কাঁঠালিয়া। বাঁধ না থাকায় প্রতি বছর জলোচ্ছ্বাসে ফসল ও মৎস্য সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এ উপজেলার বিভিন্নস্থান ঘুরে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বেড়িবাঁধ না থাকায় সিডরে এ উপজেলায় ২১ জনের প্রাণহানি ঘটেছিল। এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই ঘূর্ণিঝড় আইলা ও আম্ফানে আঘাত হানে এখানে। কোনো প্রাণহানির ঘটনা না ঘটলেও বিশখালি নদীতে অতিরিক্ত পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভেসে যায় জেলেদের জাল, নৌকা। তলিয়ে যায় মাছের ঘের ও ছোট-বড় পুকুর। নষ্ট হয়ে গিয়েছিল কাঁচা-আধা কাঁচা ঘরবাড়ি ও ফসলের ক্ষেত। এছাড়াও নিয়মিত জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার হেক্টর জমি।

 

বিশখালি নদীর নোনা পানিতে আমুয়া, হেতালবুনিয়া, মশাবুনিয়া, চিংড়াখালী, জয়খালী, কাঁঠালিয়া সদর, কচুয়া, শৌলজালিয়া, রঘুয়ার চর, রঘুয়ারদড়ি চর, তালগাছিয়া, আওরাবুনিয়া ও জাঙ্গালিয়াসহ প্রায় ১৫টি গ্রাম প্রতিদিন স্বাভাবিক  জোয়ারে ফসলি মাঠ প্লাবিত হচ্ছে।

 

স্থানীয় জেলে মিরন জোমাদ্দার বলেন, বইন্যার (সিডর) সময় গলা পর্যন্ত পানিতে মোগো ঘর, দরজা, গরু, বাছুর সব ভাসাইয়্যা লইয়্যা গ্যাছে। আইলায়ও কম অয়নায় পানি।

 

ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে কাঁঠালিয়া লঞ্চঘাট এলাকা ও জয়খালী গ্রামের প্রায় তিন কিলোমিটার অস্থায়ী বাঁধ ভেঙে উপজেলা পরিষদ ও উপজেলা শহরসহ কমপক্ষে ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়। বেড়িবাঁধের দাবিতে তখন স্থানীয় জনসাধারণ বিশখালি নদীর পাড়ে মানববন্ধন করেন এবং স্বেচ্ছাশ্রমে এক কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী। পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং ভাঙন রোধে তাৎক্ষণিক কিছু জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের ব্যবস্থা করেন।

 

কচুয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এসএম আমিরুল ইসলাম লিটন সিকদার বলেন, বেড়িবাঁধ না হওয়ায় আমরা বন্যার সময় খুবই অসহায় অবস্থার সম্মুখীন হই। ঘরবাড়ি আর  কৃষির ক্ষতি হচ্ছে।

 

কৃষি কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, বাঁধ না থাকায় বন্যা জলোচ্ছ্বোস ছাড়াও প্রতিদিন স্বাভাবিক জোয়ারে বিশখালি নদীর পানি প্রবেশ করে তলিয়ে যাচ্ছে প্রায় হাজার হাজার হেক্টর আবাদি জমি। এতে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

 

উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. এমাদুল হক মনির বলেন, উপজেলাবাসীর দীর্ঘ দিনের দাবি এ বেড়িবাঁধ নির্মাণের। বাঁধটি নির্মাণ করে জনসাধারণকে নিরাপদে রাখা সরকারের দায়িত্ব। একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে এটি নির্মাণের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

 

যাযাদি/এস