শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ওসমানীনগরের জেলে পরিবারের দুর্দিন : নদী-খালে মিলছে না মাছ

উজ্জ্বল ধর, ওসমানীনগর (সিলেট)
  ১০ জুলাই ২০২১, ১৮:০৭

ভরা বর্ষায়ও ওসমানীনগরের নদী-খালে তেমন পানি নেই। তাই জালে মাছ উঠছে না। এ কারণে সিলেটের ওসমানীনগরের কয়েক হাজার জেলে পরিবারে চরম দুর্দিন নেমে এসেছে। চলতি মৌসুমে পানির অভাবে মা মাছ ডিম ছাড়তে বিলম্ব করায় জেলেদের আয় রোজগার বন্ধ হওয়ার পথে।

জানা যায়, ওসমানীনগরে নারকিলা, বুড়ি-বরাক, কুশিয়ারাসহ বেশ কিছু নদী, মেরুয়া, বানাইয়া, কালাসারা, মোক্তারপুর, সুন্দিখলা, চাতল বিল, নিরাইয়া, হরিন পেটুয়া, বড় চাতল, মাইশাল, রউনিয়া-হাউনিয়া হাওর, করচা বিল, তেতইর খাল, চেংগের খাল, সাদিপুরের ভরাং বিলসহ রয়েছে ২২টি হাওর-বিল ও অসংখ্য ছোট-বড় খাল রয়েছে। বিলগুলো মূলত হাওরের গভীর অংশ। শীতকালে যখন হাওর শুকিয়ে যায় এসব বিলে তখনো পানি থাকে আর শুকনো অংশে চাষ হয় বোরো ধান। এলাকার কৃষকরা অনেক সময় ওই বিলের পানি দিয়ে জমিতে সেচ কাজ চালাতেন। কিন্তু হাওর-বাঁওড়, নদনদী ও বিল-ঝিলের নাব্যতা হ্রাস পাওয়ায় এবং শুকনো মৌসুমে এগুলো শুকিয়ে নির্বিচারে মাছ ধরায় দেশি বিভিন্ন প্রজাতির মাছকে সংকটাপন্ন করে তুলেছে। একইভাবে ফসলি জমি খনন ও পতিত পুকুরকে মৎস্য চাষের উপযোগী করার জন্য রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে দেশীয় নানা প্রজাতির মাছের সংকট।

এমনিতেই ওসমানীনগরে বিলুপ্তির পথে বেশ কিছু দেশীয় মাছ। এরমধ্যে বাগাড়, পিপলা শোল বা বাক্কা মাছ, মহাশোল, নান্দিলা মাছ, চান্দা, ভাঙ্গান বাটা, খরকি মাছ, কালো পাবদা, মলা, তিতপুঁটি, চেনুয়া, ভেড়া, টেংরা, শিং, মাগুর, মেনি মাছ (ভ্যাদা), চলাপুঁটি, বোয়াল, কাঁঠালি চিংড়ি, লাল খলিসা, বাইমসহ প্রায় ৩০ প্রজাতির মাছ এখন বিলুপ্ত হওয়ার পথে।

প্রতি বছর জুন-জুলাই মাসের বৃষ্টিতে পানি উপচে পড়ে এসব জলাশয়। পার্শ্ববর্তী নিম্ন ভূমি ও জমিতে নতুন পানি প্রবেশ করে। ফলে নতুন পানিতে ডিম ছাড়ে দেশীয় মাছগুলো। কিন্তু এ বছর পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এখনও অনেক মাছ ডিম ছাড়তে পারেনি। দেশীয় মাছের আকালে জেলেরাও মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

উপজেলার নাটকিলা নদী, বানাইয়া, কালাসারা হাওর ঘুরে দেখা যায় প্রতি বছর একই সময়ে যেখানে বুক সমান পানি থাকার কথা সেখানে হাঁটুর উপরে পানি হয়নি।

সিলেটে জুন মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৮১৮ দশমিক ৪ মিলিমিটার। কিন্তু পুরোমাসে বৃষ্টি হয়েছে ৬২৯ দশমিক ৬ মিলিমিটার। অর্থাৎ ২০ শতাংশ বৃষ্টি কম হয়েছে। অন্যদিকে গত জানুয়ারি জুন পর্যন্ত ৬ মাসে সিলেটে ১ হাজার ২৬৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। যদিও এই সময়ে ১ হাজার ৯৬৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক ছিল। অর্থাৎ স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ৩৪ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে।

সাদিপুরের সুরিকোনা গ্রামের জেলে হায়দর আলী (৪০) বলেন, ‘এবার আমাদের খুব কষ্ট হচ্ছে। খাল-বিল-নদীতে পানি না হওয়ায় মাছ নেই। ফলে বেকার দিন কাটাচ্ছি। অন্যকিছু কোনো কাজের অভিজ্ঞতাও আমাদের নেই। এ অবস্থায় পরিবারের সদস্যের দিন কাটছে অর্ধাহার-অনাহারে।’

বানাইয়া হাওর থেকে মাছ ধরে তা বাজারে বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন সম্মানপুরের জগির মিয়া (৩৪)। তিনি বলেন, ‘খাল-বিল হাওরে পানি নেই, মাছও নেই। এ বছর আশানুরূপ বৃষ্টিপাত না হওয়ায় মাছ ধরা পড়ছে না। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ধার-কর্জ করে দিন কাটাতে হচ্ছে।’

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাসরুপা তাসলিম বলেন, ‘বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় এবার নদী-হাওরে তেমন পানি হয়নি। তাই মাছের প্রজননে দেরি হচ্ছে। তবে এখনো মাছের ডিম ছাড়ার সময় রয়েছে। আগস্ট মাস পর্যন্ত দেশীয় মাছ ডিম ছাড়তে পারে। খাল-বিলে পানি না থাকায় জেলেরা মাছ ধরতে পারছেন না। তাদের জীবন-জীবিকার পথ রুদ্ধ হয়ে পড়েছে। বিকল্প কর্মসংস্থান না থাকায় তাদের পরিবারে দুর্দিন দেখা দিয়েছে। বেকার হয়ে পড়া মৎস্যজীবীদের প্রণোদনা ভাতা দেওয়ার ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন মহলকে অবগত করা হয়েছে।’

যাযাদি/এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে