শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
​গাজীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্ক

বিলুপ্তির নীলগাই’র ঘরে জেগেছে আশার আলো

​ গাজীপুর প্রতিনিধি
  ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৮:০৩

বাংলাদেশে বিলুপ্তর তালিকায় থাকা গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্কের নীলগাই দম্পতির পরিবারে আরো দুইটি নবজাতক জন্ম নিয়েছে। জন্ম নেয়া বাচ্চা দুইটি মাদি না পুরুষ তা এখনও নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন পার্ক কর্তৃপক্ষ। গত ১আগস্ট জন্ম নিলেও পার্ক কর্তৃপক্ষ তা কাউকে জানায়নি। নতুন জন্ম নেয়া শাবকের নিরাপত্তা ও প্রকৃতিতে টিকে থাকার চ্যালেঞ্জ থাকায় পার্ক কর্তৃপক্ষ ১৭ই সেপ্টেম্বর বিকেলে বিষয়টি গণমাধ্যমে জানান। আর নুতন জন্ম নেয়া শাবক দুটি থেকেই পার্ক কর্তৃপক্ষ প্রায় ৮০বছর আগে বাংলাদেশের প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাওয়া বিলুপ্তর তালিকা থাকা নীলগাইয়ের প্রকৃতিতে ফিরে আসার সম্ভাবনা দেখছেন তারা।

পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সহকারী বন সংরক্ষক তবিবুর রহমান জানান, ২০২০সালের ১ফেব্রুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা গ্রামের মামুদপুর-ঠুঠাপাড়া বর্ডার এলাকার বাসিন্দারা একটি নীল গাই ধরে জবাই করার প্রস্তুতি নেয়। পরে বিজিবি-৫৩ (মামুদপুর বিওপির) সদস্যরা ওই মাদী নীলগাইকে উদ্ধার করে রাজশাহীর বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগে হস্তান্তর করলে নীলগাইটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্কে আনা হয়।

অপরদিকে, ২০১৯সালের ২২জানুয়ারি নওগাঁর মান্দা উপজেলার জোতবাজার এলাকায় অপর একটি নীলগাই আটক করে জবাই করার প্রস্তুতি নেয়া হয়। পরে তা জানতে পেরে রাজশাহীর বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ স্থানীয় উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসনের সহায়তায় (জবাই করার প্রস্তুতির সময়) একটি পুরুষ নীলগাই উদ্ধার করে। পরে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দিয়ে ২০১৯ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি প্রাণিটিকে দিনাজপুরের রামসাগর জাতীয় উদ্যানে স্থানান্তর করা হয়। পরে সেখান থেকে পুরুষ নীলগাইটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্কে আনা হয়।

পার্কের ওয়াইল্ডলাইফ সুপারভাইজার মোঃ সারোয়ার হোসেন খান জানান, হেমন্তাকাল থেকে শীতকালের শুরুর সময়ে পুরুষ নীলগাই ও মাদী নীলগাইয়ের সাথে মিলিত হয়। স্বভাবসিদ্ধভাবে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে পুরুষ নীলগাগুলো একাধিক মাদী নীলগাইয়ের সাথে মিলিত হয়ে থাকে। গর্ভধারণ কাল গড় ২৪৩দিন এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে যমজ বাচ্চা প্রসব করে, ক্ষেত্র বিশেষে ১টি থেকে ৩টি বাচ্চাও প্রসব করে থাকে। জন্মের ৪০মিনিটের ভেতর দাঁড়াতে পারে পুরুষ শাবক ৩বছর এবং মাদী ২বছরে প্রজননক্ষম হয়ে উঠলেও এদের গড় আয়ু ২১বছর।

তিনি আরও জানান, পুরুষ নীলগাইয়ের বর্ণ গাঢ় ধুসর, অনেকটা কালচে রঙের। অনেক সময় নীলচে আভা দেখা যায় বলে এদের নীলগাই নামকরণ করা হয়েছে। শুধুমাত্র পুরুষ নীলগাইয়ের দুটি কৌনিক, মসৃণ ও সামনের দিকে কিঞ্চিত বাকানো দুটি শিং আছে। পুরুষের উচ্চতা ৫২-৫৮ইঞ্চি, শিং এর দৈর্ঘ্য ৮-১২ইঞ্চি। মাদী নীলগাই এবং শাবকের রং লালচে বাদামী কিন্তু খুরের উপরের লোম সাদা। ঠোঁট, থুতনি, কানের ভেতরের দিক ও লেজের নীচের তলদেশ সাদা। নীলগাই ছোট ছোট পাহাড় আর ঝোপ-জঙ্গলপূর্ণ মাঠে চড়ে বেড়াতে ভালবাসে। ঘন বন এড়িয়ে চলে। সচরাচর ৪ থেকে ১০ সদস্যের দল নিয়েই নীলগাই ঘুরে বেড়ায়। দলে কখনও ২০ বা তার বেশি সদস্যও থাকতে পারে।

নীলগাই সম্পর্কে তিনি আরও জানান, নীলগাই গাছে ঢাকা উঁচু-নিচু সমতলে বা তৃণভূমিতে যেমন স্বাচ্ছন্দে বিচরণ করতে পারে, তেমনি আবার শস্যক্ষেত্রে নেমে ব্যাপক ক্ষতি করতে পটু। সকাল আর বিকেলে খাওয়ার পাট চুকিয়ে দিনের বাকি সময়টা গাছের ছায়ায় বসে কাটায়। মহুয়া গাছের রসালো ফুল এদের দারুণ পছন্দ। পানি ছাড়া এরা দীর্ঘসময় কাটিয়ে দেয়, এমনকি গরমের দিনেও এরা নিয়মিত পানি খায় না। আত্মরক্ষার প্রধান উপায় দৌড়ে পালানো। দ্রুতগামী ও শক্তিশালী ঘোড়ার পিঠে না চড়ে নীলগাই ধরা প্রায় অসম্ভব।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্কের প্রকল্প পরিচালক মো. জাহিদুল কবির বলেন, এরা যখন এডাল্ট হয় তখন এদের দেহে কিছুটা বর্ণ দেখা যায়। এজন্য তাদেরকে নীল গাই বলা হয়। গত ৮০বছর আগে দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে এক সময় অবাধ বিচরণ ছিল নীলগাই’র। ১৯৪০সালের পূর্ব পর্যন্ত বাংলাদেশে নীলগাই দেখা গিয়েছিল। বনাঞ্চল উজাড় হওয়া, বসবাসের পরিবেশ হারানো, খাদ্য সংকট ও শিকারীর অবাধ শিকারের কারণে পরিবেশে প্রাণীটির সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমতে কমতে এক সময় নীলগাইয়ের নাম উঠে বিলুপ্তর তালিকায়। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, পাকিস্তান নেপাল এবং যুক্তরাষ্ট্রে নীলগাই রয়েছে। পার্কে থাকা নীলগাই দুটি জুঁটি বাধার ১১মাস ১১দিন পর গত পহেলা আগষ্ট দুটি বাচ্চা জন্ম দেয়। বর্তমানে সবাই সুস্থ আছে। বাংলাদেশ নীলগাই শূণ্য হলেও ভারতে লাখের উপর নীলগাই রয়েছে।

আমরা আশা করছি বিলুপ্তর তালিকায় থাকা নীলগাই গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্কে বংশবৃদ্ধির মাধ্যমে আবারো প্রাকৃতিক পরিবেশে ফিরে আসবে।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে