বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

থমকে যাচ্ছে বাইক্কা বিলের অতিথি পাখি

মো. আব্দুল ওয়াদুদ, মৌলভীবাজার
  ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ২১:২৬

পর্যটন জেলা অধ্যুষিত মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার হাইল হাওড়ে পরিযায়ী পাখির অভয়াশ্রমের নাম বাইক্কা বিল ১০০ হেক্টর জলাভূমিজুড়ে অবস্থিত এই বিলটি ২০০৩ সালের পহেলা জুলাই বাংলাদেশের ভূমি মন্ত্রণালয় মৎস্য সম্পদের একটি অভয়াশ্রম হিসেবে সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নেয় বিলটিতে আইড়, কই, মেনি, ফলি, পাবদাসহ আরও অনেক প্রজাতির মাছ বংশবৃদ্ধি করে থাকে এই বিল মাছের জন্যেই শুধু নয়, অতিথি পাখির জন্যও একটি নিরাপদ আবাসস্থল এটি একটি নয়নাভিরাম জলাভূমি যেখানে হাজারো শাপলা আর পদ্মফুল ফোটে প্রতিনিয়িত

সবচেয়ে অকর্ষণীয় বিষয়টি হচ্ছে, শীত মৌসুমে পৃথিবীর দক্ষিণাঞ্চলের দেশ থেকে এখানে আসে বিভিন্ন প্রজাতির পরিযায়ী পাখি পাখিদের মধ্যে এখানে পাওয়া যায় পানকৌড়ি, কানিবক, ধলাবক, গোবক, ধুপনিবক, রাঙ্গাবক, দলপিপি, নেউপিপি, পান মুরগি, বেগুনি কালেম, কালোমাথা কাস্তেচরা, শঙ্খ চিল, পালাসী কুড়া ঈগল শীতের অতিথি হয়ে যেসব পাখি আসে এদের মধ্যে গেওয়ালা বাটান, মেটেমাথা চিটি আর কালাপঙ্খ ঠেঙ্গী, ধলা বালিহাঁস, পাতি সরালী, রাজসরালী, মরচেরং, ভূতিহাঁস, গিরিয়াহাঁস, ল্যাঙ্গাহাঁস, গুটি ঈগল

বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব জানায়, গেল জানুয়ারি বাইক্কা বিলে দিনব্যাপী শীতকালীন জলচর পাখিশুমারি সম্পন্ন হয় এতে মোট ৩৪ প্রজাতির ৩২৩০টি জলচর পাখি দেখা গেছে যাদের মধ্যে অন্যতম ছিল ৯০০টি গেওয়ালা-বাটান, ৪৫২টি বেগুনি-কালেম, ২৫০টি খয়রা-কাস্তেচরা এই শুমারিতে অংশ নেন বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের ইনাম আল হক, . পল থমসন, তারেক অণু, আই ইউ সি এন বাংলাদেশের সীমান্ত দীপু এবং জেনিফার আজমেরি

মৌলভীবাজার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী, ডি এফ মীজানুর রহমান, এবং এডিসি ( রেভিনিউ) মেহদি হাসান বাইক্কা বিল যাতে তার আগের জৌলুস হারাতে না পারে, এজন্য তারা বিলের সংরক্ষণের উপরে ইতোমধ্যে গৃহীত কিছু পদক্ষেপের কথা বলেন এবং সেই সঙ্গে সংরক্ষণকে আরও কার্যকরী করতে একাধিক নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ব্যাপারে আলোচনা করেন

এদিকে সম্প্রতি বাইক্কা বিলে গেলে দেখা যায়, বিলের পাড়ের টাওয়ারে ঢাকা থেকে অগণিত দর্শনার্থী দাঁড়িয়ে আছেন অতিথি পাখির আশায় পুরো পরিবার নিয়ে আসা ওই ব্যক্তি আক্ষেপ করে জানান, যে কারণে আমরা এই বিলে আসলাম, সেটা পূর্ণ হলো না পাখির মৌসুমে এসেও পাখি দেখতে পেলাম না স্থানীয় বরুনা এলাকার রুবেল আহমদ ছামী বলেন, বাইক্কা বিলে / বছর পূর্বে হাজারো পাখি চোখে পড়ত এখন আর তেমন পাখি দেখা যায় না

রাজনগর উপজেলা থেকে আসা পর্যটক মাধব চক্রবর্তী বলেন, জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মাসে এখানে অসংখ্য অতিথি পাখি বিচরণ করত এবার তার উল্টো দেখতে পাচ্ছি ঠিক কোন কারণে পাখির সংখ্যা কমে গেল এমন প্রশ্নের জবাবে এখানকার স্থানীয়রা জানান, বিলের পাড়ে অবাধে জনবসতি গড়ে উঠেছে এদের বাড়িতে প্রত্যেকের নৌকা আছে বিশাল এই হাওড়ে স্থানীয়দের আবাসস্থল না থাকায় রাতের বেলায় ওই নব্য বসতিরা চক্র বৃদ্ধি করে মৎস্য আর পাখি শিকারে লিপ্ত থাকায় পাখিরা পালিয়েছে এতে অভয়াশ্রম থেকে কোটি কোটি টাকার মৎস্য লোপাট হচ্ছে ধরে নেওয়া হচ্ছে ভিনদেশি পাখিও পাখির সংখ্যা কমে যাবার ব্যাপারে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান রোববার বিকেলে প্রতিবেদককে বলেন, শুনেছি এখানে বসতি গড়ে উঠেছে আমরা আগামী বুধবার বাইক্কা বিলে যাব সরেজমিনে গিয়ে সবকিছু দেখে পাখি রক্ষায় ব্যবস্থা নেওয়া হবে

যাযাদি/এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে