ফটিকছড়িতে হালদা নদীতে বিষ দিয়ে অবাধে মাছ নিধন-হুমকির মুখে জীববৈচিত্র্য
প্রকাশ | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৬:১৪
চট্টগ্রাম ফটিকছড়ি উপজেলায় হালদা নদীতে বিষ প্রয়োগ করে অবাধে চিংড়ি মাছ সহ বিভিন্ন প্রকার মাছ শিকার করায় প্রাকৃতিকভাবে মাছের বংশবিস্তার বাঁধাগ্রস্তসহ জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে।
চট্টগ্রামের হালদা নদী বাংলাদেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননকেন্দ্র, যাকে বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ বলে ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ সরকার। এর উৎসস্থল রামগড় উপজেলা। এটি ফটিকছড়ি উপজেলা হয়ে প্রধান প্রজনন ক্ষেত্রে সংযোগ হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রতি ৪-৭দিন পর পর অসাধু চক্রটি উপজেলার ভূজপুর রাবার ড্রাম অংশের পর থেকে পাইন্দং যোগিনী ঘাটা ব্রীজ অংশের হালদা নদীতে মধ্যরাতে বিষ ঢেলে চিংড়ি সহ বিভিন্ন প্রকার মাছ শিকার করে। বিষ প্রয়োগে মাছ শিকার করায় ছোট মাছগুলো মারা যায়। এমনকি বিভিন্ন পোকামাকড় সহ মরে যায় এ বিষে। এছাড়া প্রাকৃতিকভাবে তৈরি মাছের খাবার নষ্ট এবং মাছের বংশ বিস্তার বাধাগ্রস্তসহ হুমকির মুখে পড়ছে জীববৈচিত্র্য। এ অংশে পানি কমে যাওয়ায় শিকারিরা বিষ প্রয়োগে চিংড়িসহ হরেক প্রজাতির মাছ আহরণ করে।
হালদা পাড়ের সাতগড়িয়া পাড়ার দিদার ভান্ডারী বলেন, এক ধরনের বিষাক্ত পদার্থ (বিষ) যা পানিতে প্রয়োগ করলে চিংড়ি আধামরা হয়ে গভীর পানি থেকে ভেসে কূলে উঠে আসে। নদীর পানিতে ভেসে ওঠা এ সব মাছের বেশির ভাগই চিংড়ি। বিষয়ক্রিয়ায় মরে অসংখ্য চিংড়ি সহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোঁনা নদীর কূলে ভাসতে থাকে। যারা বিষ দেয় তারা রাতেই মাছ ধরে ফেলে। ভোর সকালে আমরা নদীতে গেলেও মরা মাছ গুলো দেখি। এ নিয়ে এখনো কাউকে কোন পদক্ষেপ নিতে দেখলাম না।
স্থানীয় মো.আলী নামের এক যুবক বলেন, আমরা আজ অনেকদিন ধরে এসব দেখতে দেখতে অতিষ্ট হয়ে গেছি। বিষ দিয়ে যে মাছ গুলো মেরে ফেলা হচ্চে এগুলো রাষ্ট্রীয় সম্পদ। আমরা এর সুষ্টু তদন্তের মধ্য দিয়ে যারা এসবের সাথে জড়িত তাদের বিচার চাই।
যোগিনী ঘাটা ব্রীজের পাশের একটি মসজিদের ঈমাম জানান, ১০-১২দিন পরপর সকালে উঠে দেখি মানুষ দৌঁড়াদৌঁড়ি করে হালদায় মরা মাছ ধরার জন্য। মূলত রাতের সময়ে বিষ দিয়ে মাছ গুলো মারা হয়। চিংড়ি মাছের সংখ্যা বেশি। রাতের আধাঁরে যারা বিষ দিয়ে মাছ মারে তাদের শাস্তি হওয়া উচিৎ।
বিশস্ত একটি সূত্রের মাধ্যমে জানা যায়, কয়েকদিন পর পর রাতের আধাঁরে ৪-৫টি স্থানীয় চক্র মধ্যরাতে নদীতে বিষ দেয়। স্থানীয়রা তাদের হাতেনাতে ধরতে পারছেনা। মধ্যরাতে বিষ দিয়ে মশারি বা জাল দিয়ে মাছ ধরে নিয়ে যায় তারা।
এসব শিকারির জালে বড় আকারের চিংড়ি আটকা পড়লেও ছোটগুলো নদীতে ভেসে ওঠলে সকালে নদীর পাড়ের বাসীন্দারা মাছ ধরে।
ফটিকছড়ি উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো.মিজানুর রহমান বলেন, হালদায় বিষ দিয়ে মাছ নিধন করা অনেক বড় একটি অপরাধ। বিষ প্রয়োগের কারণে নির্বিচারে ছোট-বড় মাছ মারা যায়। এছাড়া প্রাকৃতিকভাবে তৈরি মাছের খাদ্য ও প্রজনন নষ্ট হয়ে যায়। এককথায় বিষ দিয়ে মাছ শিকার জীববৈচিত্র্যের জন্য দারুণ হুমকিস্বরূপ। বিষ ঢেলে মাছ শিকার করা একটি দণ্ডনীয় অপরাধ। এ বেআইনি কাজের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে প্রচলিত আইনে শাস্তির ব্যবস্থা করার জন্য আমি ইউএনও'র সাথে কথা বলবো।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাব্বির রাহমান সানির কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি জানতাম না। স্থানীয়ভাবে যদি কেউ লিখিত অভিযোগ দেয় এ ব্যাপারে উপর্যুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
যাযাদি/এস