চিত্রাপাড়ের মিনি সুন্দরবনে এখন পাখিদের আবাসস্থল

প্রকাশ | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৪:১২

পংকজ মণ্ডল,চিতলমারী (বাগেরহাট)

সন্ধ্যা নামতেই শুরু হয় পাখিদের দলবেধে ঘরে ফেরার পালা। আর এসব পাখিরা ঘর বেঁধেছে চিত্রাপাড়ে। বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার সীমান্ত ঘেঁষে বয়ে যাওয়া চিত্রাপাড়ে গড়েওঠা মিনি সুন্দরবনের বিভিন্ন গাছে রাতে আশ্রয় নেওয়ার জন্য জড়ো হয় পাখিরা।

 এলাকার বিভিন্ন খাল, বিল ও জলাশয়ে সারাদিন খাদ্যের সন্ধান  করে  রাতে  ফিরে আসে এ বনে। এ বন যেন তাদের ঘর-বাড়ি।  ফলে হাজার-হাজার পাখিদের অভয়াশ্রম  গড়ে  উঠেছে এখানে। এ দৃশ্য দেখার  জন্য প্রতিদিন শত শত লোক  ভিড় জমাচ্ছেন। 

 স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সুন্দরবনের মূল ভূখণ্ড থেকে প্রায় শত কিলোমিটার উত্তরে বাগেরহাট সদর উপজেলা ও ফকিরহাট এবং চিতলমারী উপজেলার সীমান্ত ঘেঁষে বয়ে যাওয়া চিত্রানদীর পাড়ে প্রাকৃতিক ভাবে গড়ে ওঠেছে সুন্দরবনের বিভিন্ন গাছপালা। আর এ কারণে চিত্রা নদীর বিস্তৃর্ণ চর ও এখানকার ১০-১৫টি গ্রাম জুড়ে গড়ে উঠেছে বনাঞ্চল। বর্তমানে এ বনে প্রতিদিন হাজার হাজার পাখি এসে আশ্রয় নিচ্ছে । বক, পানকৌড়ি, ঘুঘু, শালিক, মাছরাঙা, মদনটাক, বাকচুয়াসহ নানা প্রজাতি। এছাড়া বিভিন্ন বন্য প্রাণীদের বাস রয়েছে এখানে। 

স্থানীয়দের অভিমত পাখিদের কারণে বনটি দর্শনীয় হয়ে উঠছে  দিন দিন। সারাদিন খাদ্যের সন্ধান করে সন্ধ্যা নামতেই  এসব  পাখিরা বনের গাছ-পালায় এসে  আশ্রয় নেয়। আর এ দৃশ্য দেখার  জন্য চিত্রা নদীর পাড়ে লোকজনের  দীর্ঘ  লাইন পড়ে যায়। আশপাশের  বিভিন্ন  গ্রাম থেকে শিশু কিশোর থেকে  শুরু  করে  বিভিন্ন বয়সের লোকজন পাখি দেখতে  জড়ো হচ্ছে এখানে।  উল্লেখ্য ‘চিত্রার চরে আরেক সুন্দরবন’ শিরোনামে স্থানীয় সাংবাদিক পংকজ মণ্ডলের একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ২০১৪ সালে পত্রিকায় প্রকাশের  পর সরকার এবং স্থানীয় লোকজনের বিষয়টি নজরে  আসে। পরবর্তীতে এ বন রক্ষার জন্য সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা এ বনে ঘুরে এটি রক্ষার আশ্বাস  দেন। বর্তমানে ইকোপার্কের আদলে এখানে মিনি পার্ক গড়ে উঠেছে। দর্শনার্থীদের ভ্রমণের জন্য এ বনকে নতুন রূপে সাজানো হচ্ছে। 

 পাখি বিশেষজ্ঞ শরীফ খান জানান, চিত্রাপাড়ে বিভিন্ন গাছপালায় পাখিদের আশ্রয় নেওয়ার জন্য উপযুক্ত জায়গা তৈরি হয়েছে। এসব পাখিদের নিরাপদ বিচরণ ভূমি সৃষ্টি করা প্রয়োজন। পাখিদের যাতে কেউ শিকার করতে না পারে সেজন্য হাওর রক্ষা পুলিশের প্রয়োজন রয়েছে। প্রতিবছর শীত মৌসুমে আমাদের দেশে অসংখ্য পরিযায়ী পাখি আসে। এছাড়া নানা প্রজাতির স্থানীয় পাখি রয়েছে। কিছু অসাধু লোকজন এগুলি শিকার করার ফলে পাখিরা অনিরাপদ। বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আনা দরকার।    

স্থানীয় বাসিন্দা সবুজ বাড়ৈ, কাকন সরদারসহ অনেকে জানান, প্রতিদিন সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে হাজার-হাজার পাখিরা এ বনে এসে আশ্রয় নেয়। পাখিদের কলকাকলীতে মুখরিত হয়ে ওঠে  এলাকা। আশপাশের লোকজনসহ  বিভিন্ন স্থান থেকে পাখি দেখতে দর্শনার্থীরা ভিড় জমান এখানে। 
এ বিষয়ে বাগেরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান জানান, বিশেষ করে পাখিদের উপস্থিতি এখানে চোখে পড়ার মতো।  এ বনকে রক্ষার জন্য সব ধরণের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। এছাড়া এখানকার পাখি ও প্রাণিদের নিরাপত্তার বিষয়ে সচেতনা বৃদ্ধির জন্য কাজ করা হবে। 

যাযাদি/ এস