বনের ঝুকিপূর্ণ ভবনেই রাত কাটে বন প্রহরীদের

প্রকাশ | ০২ মার্চ ২০২৩, ১১:০৩

এসএম আলমাস, কুয়াকাটা (পটুয়াখালী)
ছবি-যাযাদি

পটুয়াখালীর পর্যটন নগরী খ্যাত সাগরকন্যা কুয়াকাটা এখন বাংলাদেশের অপার সম্ভাবনাময় এক পর্যটননগরী। তারই ধারাবাহিকতায় প্রতিনিয়ত কুয়াকাটা আসছে হাজারো পর্যটক, কুয়াকাটায় বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরে নৌ পথে বিশাল সমুদ্রের বুক চিরে যাওয়া যাচ্ছে প্রায় দশটি স্পটে। 

তারমধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে টেংরাগিরি বন্যপ্রানী অভয়ারণ্য (ফাতরার বন) এটি পর্যটকদের কাছে দিন দিন এত জনপ্রিয়তা পাচ্ছে যে এখানে প্রতিদিন শত শত পর্যটক বেরাতে আসছে । প্রাকৃতির অপরুপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি এই বনটি কুয়াকাটা সৈকতের লেম্বুরবন পয়েন্ট লাগোয়া বঙ্গোপসাগরের তীর ঘেঁষে সুন্দরবনের পূর্বাংশে অবস্থিত।

এই বনের পূর্বাংশে আন্ধারমানিক মোহনা দক্ষিণাংশে বঙ্গোপসাগর উত্তর ও পশ্চিমাংশে বিশাল বনাঞ্চল। আর এই প্রাকৃতিক সম্পদকে কেন্দ্র করে জেলে, পর্যটক, বনের পশু-পাখি, বনাঞ্চল সবকিছুকে নিরাপত্তা দিতে বনবিভাগের সদস্যরা দিনরাত নিরলস  দায়িত্ব পালন করে আসছে। ফাতরার বনে কয়েকজন বনপ্রহরীদের থাকার জন্য বেশ কয়েকবছর আগে নির্মাণ করা হয়েছিল একটি একতলা পাকা ঘর।

তবে ঝড়-বৃষ্টি ও জলোচ্ছ্বাসের তান্ডবে সেই পাকা ঘরের দেয়ালের পলেস্তারা উঠে গেছে, উপরে উঠার জন্য কাঠের সিঁড়ি নষ্ট হয়ে গেছে, বৃষ্টির পানি আটকানোর জন্য ছাঁদের নিচে পলিথিন ব্যবহার করা হচ্ছে। শুধু তাই নয় অসুস্থ হলে ডাক্তার কিংবা বৈরী আবহাওয়ায় নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেয়ার মত কোনো নৌ-বাহন ও নেই তাদের।

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঝড় বৃষ্টি বন্যা প্রকৃতির দুর্যোগ উপেক্ষা করে দায়িত্ব পালন করছেন এই কর্মকর্তারা। তারপরেও পরিবারের মায়া ছেড়ে এভাবেই ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে বছরের পর বছর।

ফাতরার বনের দায়িত্বে থাকা ফরেস্টার আক্তারুজ্জামান বলেন, আমরা দিনের পর দিন এই সরকারি সম্পদ দেশের স্বার্থে পাহারা দিয়ে আসছি কিন্তু আমরা নূন্যতম সুবিধা টুকু পাচ্ছি না। হঠাৎ অসুস্থ হলে জেলেদের নৌকার সহযোগিতায় সমুদ্র পারি দিয়ে ঔষধ কিনতে হয়। গভীর রাতে বিপদে পরলেও কোনো ব্যবস্থায়ী মিলে না। 

আমরা যে ঘরটিতে রয়েছি এখানে সবসময় ঝুঁকির মধ্যে থাকছি। দেয়ালে ফাটল ধরেছে, বৃষ্টি হলে পানি পরে, বাতাসে হেলেদুলে পরারমত। আমরা সরকারের কাছে আবেদন জানাই যাতে আমাদের জন্য অন্তত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাটুকু করা হয়।

আন্ধারমানির ট্যুরিজমের পরিচালক সাঈদুর রহমান শাহিন বলেন, আমরা পর্যটকদের নিয়ে প্রতিদিন এই বনে আসি। আমরা বছরের পর বছর দেখে আসছি এখানে দায়িত্বে থাকা বনবিভাগের সদস্যরা একদম অবহেলিত তাঁদের থাকার জন্য একটি নিরাপদ ঘর নেই, যোগাযোগের ব্যবস্থা নেই, ঝড়-ঝাপটা মোকাবেলা করে বনের দায়িত্ব পালন করছে। তাঁদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি না করলে এখানে বসবাস তাঁদের জন্য ঝুকিপূর্ণ হচ্ছে দিনদিন।

পটুয়াখালী উপকূলীয় বন বিভাগের সহকারী বন কর্মকর্তা তারিকুল ইসলাম বলেন, বনবিভাগের জন্য টেকসই ভবন ও কর্মকর্তাদের জন্য নিরাপত্তা সরঞ্জাম সহ  বেশকিছু পরিকল্পনা নিয়ে ইতোমধ্যে আমাদের উর্ধতন কতৃপক্ষের মাধ্যমে একটি প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেছি। হয়তো চলতি বছরেই পাশ হবে।

যাযাদি/ এস