বন্যার আশঙ্কা
বিপদসীমার ওপরে চার নদীর পানি, বাড়ছে তিস্তারও
প্রকাশ | ০১ জুন ২০২৫, ১৯:৫৩

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের মেঘবলয় এখন দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলসহ ভারতের আসাম, মেঘালয় ও ত্রিপুরায় অবস্থান করছে। এর প্রভাবে সেখানে হচ্ছে টানা বর্ষণ। আর এই ভারী বৃষ্টির ফলে দেশের উত্তর–পূর্বের সিলেট এবং চট্টগ্রামের পাঁচ নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ তথ্য বলছে, উত্তরের নদী তিস্তার পানি সতর্ক সীমায় প্রবাহিত হচ্ছে। এটি বিপদসীমার কাছাকাছি অবস্থায় চলে আসতে পারে।
এছাড়া ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে ও যমুনার পানি প্রবাহ স্থিতিশীল আছে। এ অবস্থায় দেশের ছয় জেলার নদীর কাছাকাছি এলাকায় বন্যার ঝুঁকির কথা বলেছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের এ সংস্থাটি। এই ছয় জেলা হলো সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা ও ফেনী।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান বলেন, সুরমা, কুশিয়ারা, মনু, খোয়াই এবং চট্টগ্রামের হালদার সাত পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় এ অবস্থা থাকতে পারে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্র বলছে, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের সারিগোয়াইন, যাদুকাটা, মনু, ধলাই, খোয়াই ও সোমেশ্বরী নদীর পানি আগামী তিন দিন বাড়তে পারে।
আগামী ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম বিভাগের গোমতী, মুহুরী, ফেনী, হালদা, সাঙ্গু, মাতামুহুরী নদীর পানি বাড়তে পারে। এই সময় মুহুরী নদীর পানি সমতল বিপদসীমার কাছাকাছি অবস্থান করতে পারে ও মাতামুহুরী নদী সতর্কসীমায় প্রবাহিত হতে পারে।
ফেনী জেলার মুহুরী নদীর সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। আগামী তিন দিনের মধ্যে অবশ্য এসব নদীর পানি কমতে শুরু করতে পারে।
সংশ্লিষ্টদের তথ্য অনুযায়ী, রংপুর বিভাগের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি আগামী তিন দিন বাড়তে পারে। তিস্তা নদী সতর্কসীমায় প্রবাহিত হতে পারে। আগামীকাল পর্যন্ত বরিশাল, খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় নদীগুলোতে স্বাভাবিক অপেক্ষা বেশি উচ্চতায় জোয়ার হতে পারে।
রোববার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সিলেটের সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর চারটি পয়েন্টে আজ সকাল ও দুপর থেকে বিপৎসীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এরমধ্যে সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ১২ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটারের মধ্যে ও বিকেল ৩টায় ১৩ দশমিক ৫৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। যা বিপৎসীমার শূন্য দশমিক ৮৩ সেন্টিমিটার উপর। একইভাবে কুশিয়ারার অমলশীদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৫ দশমিক ৪০ সেন্টিমিটারের মধ্যে ১৬ দশমিক ৮৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। যা বিপৎসীমার ১ দশমিক ৪৩ সেন্টিমিটার উপর।
একই নদীর শেওলা পয়েন্টে ১৩ দশমিক ০৫ এর মধ্যে ১৩ দশমিক ২২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। যা বিপৎসীমার শূন্য দশমিক ১৭ সেন্টিমিটার বেশি ও ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ৯ দশমিক ৪৫ এর মধ্যে ৯ দশমিক ৪৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। এছাড়া সুরমা নদীর সিলেট পয়েন্টে ১০ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটারের মধ্যে আজ বিকেল ৩টায় ১০ দশমিক ৩৬, শেরপুরে ৮ দশমিক ৫৫ এর মধ্যে ৮ দশমিক ২০ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একইভাবে সিলেটের সারি, গোয়াইন, ধলাই, ডাউকি, সারি-গোয়াইন নদীর পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামীকাল সোমবার ময়মনসিংহ, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক স্থানে বৃষ্টি হতে পারে। সাগরে গভীর নিম্নচাপের ফলে গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয় ব্যাপক বৃষ্টিপাত। দেশের সর্বত্রই এ বৃষ্টি হয়। পরে নিম্নচাপটি চলে গেলেও এখন বৃষ্টি হচ্ছে মূলত মৌসুমি বায়ুর সক্রিয়তার কারণে, আবহাওয়াবিদেরা এমনটাই বলছেন।